‘অ্যানেট’ সিনেমার মধ্য দিয়ে শুরু হয় কানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেদিন লালগালিচায় হাঁটেননি বাঁধন। হেঁটেছেন পরদিন, নিজের ছবির প্রিমিয়ারে। তবে তাতে লালগালিচার সম্মান আটকে থাকেনি। ঠিকই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর পুরো টিম নিয়ে লালগালিচায় নাম ঘোষণা করে হয়েছে আনুষ্ঠানিক ফটোশুট। সেটি মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নেওয়া ‘দ্য ডিভাইড’ ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের দিন। তা ছাড়া কানের প্রতিযোগিতা বিভাগ ‘আঁ সার্তেঁ রিগা’য় নির্বাচিত ছবির নায়িকা হওয়ার সুবাদে বিশ্বের সেরা একঝাঁক ফটোগ্রাফারের সামনেও পোজ দিয়েছেন হাসিমুখে। কানে আজ পর্যন্ত বাঁধনের সবগুলো পোশাক নিয়ে এই আয়োজন।
সেমি–অফিশিয়াল লুকেও কানের রেড কার্পেটে দেখা দিয়েছেন বাঁধন। জিনসের সঙ্গে টাক-ইন করা সাদা টপস আর পায়ে স্পোর্টস শু। খোলা চুল, কানে সিম্পল গোলাকার রিং, হাতঘড়ি আর রোদচশমায় পুর্ণতা পেয়েছে তাঁর লুক। কানের মূল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের রেড কার্পেটে এই পোশাকে দেখা দিয়েছেন বাঁধন। আরও দেখা গেছে ভূমধ্যসাগরের পাড়েও।
মার্কিন মুলুকে উদ্ভব প্যান্টস্যুটের৷ তখন কেবল উচ্চবিত্ত পুরুষেরা পরতেন এই পোশাক। তবে ১৯২০ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ নারীরাও প্যান্ট–স্যুট পরা শুরু করেন। চোখ বন্ধ করে নারীর শরীরে প্যান্ট–স্যুট কল্পনা করতেই যাদের চেহারা ভেসে ওঠে, তাঁরা হলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, হিলারি ক্লিনটন আর কমলা হ্যারিস। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলেন, পাওয়ারের সঙ্গে নাকি এই পোশাকের বিশেষ সম্পর্ক আছে৷ ইউনিসেক্স পোশাকের ধারণা আমদানির সঙ্গে প্যান্ট-স্যুট আরও জনপ্রিয় হয়। পরবর্তীতে এই প্যান্টস্যুট হয়ে উঠেছে নারীর স্বয়ম্ভরতা আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। যে কোন দাবী আদায়ে হয়েছে নারীর পোশাকসঙ্গী।
অনেকে বলে, বাংলাদেশী মেয়েদের শরীরের কাঠামোর সঙ্গে নাকি প্যান্ট-স্যুট যায় না। সেই ধারণাকে কাঁচকলা দেখিয়ে দিব্যি প্যান্ট-স্যুট পরে কান মাতাচ্ছেন বাঁধন। সোমবার বাঁধনকে দেখা গেছে প্যান্টস্যুটে। বিস্কিট রংয়ের টুপিস। লাল টি-শার্টের উপরে পরেছেন কোট। কাঁধে ঝোলানো কালো টোট ব্যাগ আর কালো রোদচশমায় স্মার্ট লুক। আত্মবিশ্বাসী বাঁধন দিব্যি দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর পুরো টিম যেদিন ‘দ্য ডিভাইড’ ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে অংশ নিল, সেদিন এই সিলভার-অ্যাশ ‘ওয়ান শোল্ডার’ পোশাকটি পরেছিলেন। কানের জন্য বিশেষভাবে এই পোশাকটি ডিজাইন করেছেন বাংলাদেশি ডিজাইনার সুমি নাসরিন। পূর্ব আর পশ্চিমের অপূর্ব মিশেলে তৈরি পোশাকটি দারুণ মানিয়েছে বাঁধনকে। পোশাকটির সূক্ষ্ম বুননের মসলিন কাপড়ে (র সিল্ক) তৈরি। এই পোশাকেই সবার উদ্দেশে উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে দিয়েছেন বাঁধন। সেই মুহূর্তটি আলোকচিত্র হয়ে সেই চুমু ছড়িয়ে দিচ্ছে সবখানে।
বাঁধনের এই এক কাঁধের ড্রেসটার ডিজাইনার সুমি নাসরিন জানালেন, এই পোশাকের নাম র্যাডরফ মসলিন ড্রেস। বানাতে তাঁর কারিগরেরা সময় নিয়েছে তিন দিন। মসলিন কাপড় কিনে প্রথমে ডাই করেছেন তিনি। বললেন, ‘বাঁধন তো ২৩ জুন ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা দেন। ও এর সপ্তাহখানেক আগে এসেছিল আমার কাছে। আমি তো আগে কখনো কানের জন্য পোশাক বানাইনি। আমি দুই দিন সময় নিই, কী পোশাক বানানো যেতে পারে, ভাবার জন্য। পরের মিটিংয়ে প্রেজেন্টেশন দেবার জন্য। আমি খুব অল্প কাজের মধ্যে গর্জিয়াস একটা লুক চেয়েছিলাম।’
সুমি নাসরিন আরও বলেন, ‘এটার রং পার্পল–অ্যাশ। এই রংটা আমি ওর গায়ে ধরে দেখলাম যে ওর ব্যক্তিত্ব আর স্কিনের সঙ্গে দারুণ লাগছে। আমি জানতাম ও গলায় কোনো গয়না পরবে না। তাই নেকলাইনে ঘন ঢেউয়ের একটা আভা নিই। আর সারা জমিনে সিকুইনের কাজ করি। যাতে অল্প আলোতে ঝলমল করে ওঠে। সব মিলিয়ে দারুণ লেগেছে। আমি অনেক মডেলদের জন্য কাস্টমাইজড করে পোশাক বানাই। তাদের সবার ভেতর বাঁধন অনন্য।’
এর সঙ্গে পরা গয়নাকে ব্লাউজ থেকে আলাদা করা যায় না। কারণ রুপার চোকারটার পেছনের প্রলম্বিত অংশ ব্লাউজের সঙ্গে গিয়ে মিলছে। সব মিলিয়ে এই পোশাকে বাঁধন কেড়ে নিয়েছেন কানের বেশ খানিকটা আলো।
এই পোশাকেই কান প্রথমবারের মতো দেখল আজমেরী হক বাঁধন নামে এক বাংলাদেশি অভিনেত্রীকে। জলপাইরঙা জামদানিটি কানের রেড কার্পেটে পরার জন্য উপহার দিয়েছিল আড়ং। খুব অল্প সময়ে বাঁধনের সঙ্গে আলাপ করে শাড়ি ও ব্লাউজ বানানো। এর সঙ্গে ছিল নিজ হাতে করা ঝটপট মিনিমাল সাজ। তাতেই উজ্জ্বল আলো ছড়িয়েছেন বাঁধন।
যে আলোকচিত্রীরা জিজি হাদিদ বা কেট উইন্সলেটদের মতো তারকাদের ছবি তোলেন হরহামেশাই, তাদের সামনে অবলীলায় হাসিমুখে দাঁড়িয়েছেন বাঁধন। যেন এটা তাঁর জন্য কোনো নতুন, বিশেষ ঘটনা না। বাংলাদেশের মানুষ সেই ফটোশুটের ভিডিও শেয়ার দিয়ে লিখেছে, বাঁধনকে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি কোনো হলিউড তারকার চেয়ে কম যান না। তিনি যেভাবে পোশাক ক্যারি করছেন, তাঁর ফ্যাশন সেন্স, আত্মবিশ্বাস, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ—সবটাই ‘কান স্ট্যান্ডার্ড’।
বাঁধনের কাছে জাম্পস্যুটটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বলেছেন, ‘এটা কিন্তু খুবই সিম্পল। দামেও সস্তা একটা মখমলের পোশাক। কোনো বড় ব্র্যান্ডের নয়। আমার বেশির ভাগ পোশাকই কিন্তু এ রকম। কিনে রেখেছিলাম একসময়। পরা হয়নি। আসার সময় নিয়ে এসেছিলাম। এই বিশেষ ফটোশুটের আগে আমি রঙের ব্যাপারে আমার ডিরেক্টরের কাছে পরামর্শ নিই। তিনি ওই দিনের ওই ফটোশুটের জন্য এই রংটা পছন্দ করেছিলেন। ওনার সৌন্দর্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা, উন্নত আর ভরসা করার মতো। তাই আমার ডিরেক্টরের পছন্দেই সেদিন এই পোশাকটি পরেছিলাম।’
আলোকচিত্রীরাও, বাঁধন যেভাবে তাঁদের নির্দেশমতো সাড়া দিয়েছেন, তাতে খুবই আনন্দিত। ফটোশুট শেষে সবাইকে হাত নাড়িয়ে টা টা জানাতে ভোলেননি বাঁধন। আলোকচিত্রীরাও সময় নষ্ট না করে ক্লিকে ক্লিকে বন্দী করেছেন সেসব মুহূর্ত। আর সেখান থেকেই চলে এসেছে ফটোশুটের সুন্দর ছবিগুলো।