এই গল্পের নায়িকার বয়স সবে ২৭। একাধারে তিনি মডেল, সংগীতশিল্পী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, ইয়ুথ অ্যাডভোকেট এবং শিল্পদূত। তবে যে কারণে সবচেয়ে বেশি পরিচিত, সেটি হলো, তিনি মিস ইউনিভার্স ২০১৮। তিনি ক্যাতরিওনা গ্রে।
ক্যাতরিওনার বাবা স্কটিশ–অস্ট্রেলিয়ান, মা ফিলিপিনো। বাবার ছিল বদলির চাকরি। আরব ভ্লগার নাসির ইয়াসিনের ‘নাস ডেইলি’র এক পর্বে নিজের ছোটবেলা নিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলেবেলা আনন্দেই কেটেছে। আট বছরের ভেতর আমরা ছয়টা শহর বদলাই। তাই সব সময়ই আমি ছিলাম শহরের নতুন বাচ্চা। তাই আমার জন্য পুরো ব্যাপারটা সহজ ছিল না।’
ক্যাতরিওনা যাকেই বন্ধু বানিয়েছেন, শহর বদলানোর সঙ্গে তাকেই হারাতে হয়েছে। তাই তাঁর মা–বাবা চেয়েছিলেন, তিনি যেন এমন কিছুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন, শহর বদলানোর পরেও যেটি টিকে থাকে। কারাতে, গান, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, নাচ আরও কত কী! যেখানেই যেতেন, ভর্তি হয়ে যেতেন এই স্কুলগুলোতে। তাই বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাতরিওনার শিল্পের নানা শাখা–প্রশাখার সঙ্গে ভাব জমেছিল। আর তিনি সহজেই যেকোনো শহর, শহরের মানুষ আর সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে পারতেন। এভাবেই ক্যাতরিওনার ভেতরে জন্মেছিল খোলা মনে সবকিছু গ্রহণ করার মানসিকতা।
খুবই নিম্নমধ্যবিত্ত, সাধারণ একটা পরিবারে জন্ম নেন ক্যাতরিওনা। তাঁর পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ে, যখন তিনি সবে ১৮। তখন থেকেই মডেলিং শুরু করেন এই বিশ্বসুন্দরী। সমানতালে চলত উপস্থাপনা। মাত্র ২০ বছর বয়সেই তিনি অর্থ উপার্জন করে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নেন। তবে পড়াশোনা থেমে থাকেনি। নিজেই নিজের স্নাতকের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস বোস্টনে’র ‘বার্কলে কলেজ অব মিউজিক’ থেকে স্নাতক করেন তিনি। এ ছাড়া কারাতে ব্ল্যাক বেল্ট আছে তাঁর।
ক্যাতরিওনা গ্রে সব সময় চেয়েছিলেন দরিদ্রদের অধিকার আদায়ের অগ্রদূত হতে। বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে। স্বরহীনদের আওয়াজ হতে। তাঁর সেই উদ্দেশ্য পূরণের মঞ্চ হিসেবে তিনি বেছে নেন মিস ইউনিভার্সকে। প্রথমবার মিস ফিলিপিনোর মঞ্চে ব্যর্থ হন। ব্যর্থ হয়ে আরও বেশি মরিয়া হয়ে ওঠেন। সেরাদের সঙ্গে শুরু করেন মডেলিংয়ের কোচিং। পরেরবার ঠিকই তাঁর মাথায় ওঠে জয়ের মুকুট। এরপর মিস ইউনিভার্সের মুকুট। এরপরই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন ক্যাতরিওনা। তিনি হাজার হাজার ডলার জড়ো করেছেন দরিদ্র শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে। নারী অধিকার আন্দোলনেও ক্যাতরিওনার অবস্থান প্রথম সারিতে।
সম্প্রতি ক্যাতরিওনা খুলেছেন নিজের একাডেমি। সেখানে তিনি শেখাবেন, ‘কীভাবে রানি হওয়া যায়, সত্যিকারের রানি’। যাঁরা সত্যিকারের রানি হতে চান, তাঁরাই ভর্তি হবেন এই স্কুলে।