বিশ্ব ফ্যাশন আর স্টাইলে আজও রাজত্ব ডায়ানার

১৯৮১ থেকে ১৯৯৭— ১৬ বছর ধরে তিনি বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফ্যাশন আইকনদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাজপরিবারের পুত্রবধূ হয়েও তিনি ব্রিটিশ রানির চেয়ে জনপ্রিয়। রাজকুমারী না হয়েও তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘রাজকুমারী’। পোশাকের কেতা থেকে আদবকেতা—সবকিছুতেই নিজের রুচির ছাপ রেখেছিলেন ‘প্রিন্সেস ডি’ অথবা ‘শাই ডি’। ডায়ানা, প্রিন্সেস অব ওয়েলস তাঁর মৃত্যুর ২৫ বছর পরও মহামারি–পরবর্তী ফ্যাশনে প্রাসঙ্গিক। ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রয়াত এই পুত্রবধূ কেবল সে সময়ই নয়, বর্তমানেও বিশ্বের ফ্যাশন আর বিউটিকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন। আবার ঘুরেফিরে আসছে তাঁর পোশাক থেকে অনুপ্রাণিত ফ্যাশন। সেগুলো দেখতে দেখতেই জেনে নেওয়া যাক, ডায়ানার ফ্যাশন আর বিউটির কিছু দিক।
ডায়ানার পোশাকগুলোকে বলা হয় সব সময়ের সেরা ফ্যাশনেবল পোশাক। ডায়ানা বেঁচে থাকতে ও মৃত্যুর পরে নানা সেবামূলক কাজে তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কোটি কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি হয়েছে সেসব পোশাক। ডায়ানার পোশাক সবচেয়ে বেশি নকশা করেছেন ফরাসি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্যাথেরিন ওয়াকার। এ ছাড়া ক্রিস্টিনা স্ট্যাম্বোলিয়ান ও ভিক্টর এডেলস্টাইন তাঁর কিছু পোশাকের নকশা করেন। নতুন করে বসন্তের গরমে ট্রেন্ডে এসেছে ফ্লোরাল প্রিন্ট। ছবিতে ডায়ানার পরনে বেবি পিঙ্কের ওপর সাদা ফ্লোরাল প্রিন্টের পোশাক
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
ডায়ানার পোশাক থেকে এই পোশাকটি নিয়ে পরেছেন তাঁর পুত্রবধূ কেট মিডলটন। ফ্যাশন সাময়িকী ‘হারপারস বাজার’–এর মতে, ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রয়াত পুত্রবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে বর্তমান পুত্রবধূ কেট মিডলটনের রুচির খুব মিল। অন্তত ৪০ বার কেটকে ডায়ানার মতো পোশাকে দেখা গেছে
কেবল কেট–ই নন, ছোট পুত্রবধূ মেগান মারকেলের ফ্যাশন আইকনও এই প্রিন্সেস ডায়ানা
মেগান বলেন, কেবল ফ্যাশন বা বিউটির ক্ষেত্রে নন, মানুষ হিসেবেই ডায়ানা তাঁর আদর্শ
ডায়ানার ফ্লোরাল প্রিন্টের পোশাক থেকে অনুপ্রাণিত পোশাকগুলো নিয়ে একটি বিশেষ ফ্যাশন শোর আয়োজন করেছে ‘ভোগ ইটালিয়া’। সেই কালেকশনের একটি পোশাক
ডায়ানাকে অনেক পোশাক ডিজাইনার সাহসী বলেছেন, কারণ, তিনি সব সময় ভিন্ন ধরনের কিছু পরীক্ষা করে দেখতেন। এই নীল ফুলেল পোশাকের আদলে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পোশাক
ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ ছবির ফটোশুটে ১৯৯১ সালে প্রথম ডায়ানার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান গ্রিনওয়েল। বলেন, তিনি যেখানেই যান তাঁকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই হয়। আর তাই পুরোটা সময় চেহারার চাকচিক্য ধরে রাখতে কনসিলার, আই শ্যাডো, মাশকারা এবং অন্যান্য সব ধরনের মেকআপও অনেক সময় ব্যবহার করেছেন। গ্রিনওয়েলের মতে, প্রিন্সেস ডায়ানার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল তাঁর দুই চোখ। এর সঙ্গে তাঁর ত্বক খুব সতেজ ও উজ্জ্বল ছিল। তিনি ছিলেন ‘ন্যাচারাল বিউটি’র অনন্য উদাহরণ
বলা হয় ফ্যাশনের ট্রেন্ড তৈরিতে ডায়ানা সব সময় প্রাসঙ্গিক
১৯৮৩ সালের ৩০ মার্চ তোলা ছবি। প্রিন্সেস অব ওয়েলস সেদিন ব্রুস ওল্ডফিল্ডের ডিজাইন করা এই লাল পোশাকটি পরেছিলেন। সঙ্গে ছিল ডায়মন্ডের নেকলেস, দুল আর মুকুট। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার হোবার্টে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এরপরই এই রূপটি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে একটি আইকনিক মুহূর্ত হিসেবে ধরা দেয়। এরপর বহুকাল অনেকে এই সাজ ‘রিক্রিয়েট’ করেছেন
ছবিতে দুই ছেলের সঙ্গে ডায়ানা
কথিত আছে, ডায়ানা নাকি ছোট ছেলে হ্যারিকে বেশি ভালোবাসতেন। একাধিক সাক্ষাৎকারে ডায়ানা জানিয়েছেন, এই দুই ছেলেই ছিল তাঁর শক্তির উৎস। নতুবা তিনি ভেঙে চুরমার হয়ে যেতেন
প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন মেকআপ আর্টিস্ট ম্যারি গ্রিনওয়েল। ডায়ানার বেশ কিছু আইকনিক লুক তাঁর হাতে তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালে সংবাদমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডায়ানার স্টাইল নিয়ে কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, প্রিন্সেস ডায়ানা ছিলেন অসম্ভব রূপবতী। মেকআপ তাঁর খুব একটা প্রয়োজন হতো না। তবে পাদপ্রদীপের আলোটা সব সময় তাঁর ওপরে থাকত বলে কিছু ফাউন্ডেশন আর হালকা বাদামি শেড ব্যবহার করতেন।
কীভাবে নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর দেখানো যায়, তা জানতেন ডায়ানা। ব্যক্তিজীবনে যে তিনি সাহসী ছিলেন, ফ্যাশন আর বিউটিতেও তার ছাপ স্পষ্ট। তিনি নতুন কিছু ট্রাই করতে সব সময়ই উৎসাহী ছিলেন
ফ্যাশনের মতো স্টাইল আইকনে পরিণত হতেও তাঁর সময় লাগেনি। ছোট ছাঁটের কিছুটা পেজবয়, কিছুটা বব ধাঁচের চুলের জন্য ডায়ানার স্টাইল বিখ্যাত। গত ৫০ বছরের ‘মোস্ট আইকনিক হেয়ারস্টাইল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তাঁর চুলের সাজ। ‘ডায়ানা কাট’ বলে তাঁর চুলের ধরন যেকোনো বয়সের নারী, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে এখনো বেশ জনপ্রিয়।
ডায়ানার নামে গোলাপ ফুলের লাল সাদা শেডের একটি বিশেষ জাতের নামকরণও করা হয়েছে
১৯৮১ সালে ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের ফটোশুটের জন্য এই সবুজরঙা গাউনটি পরেছিলেন তিনি। এই কাটের গাউনে এ বছরও অস্কারে দেখা দিয়েছেন কয়েকজন
প্রিন্সেস ডায়ানার বন্ধু ইমরান খানের ক্যানসার ক্লিনিকের জন্য অর্থ তুলতে পাকিস্তান সফরে এসে সালোয়ার কামিজ পরেছিলেন তিনি। ছবিটি ১৯৯৭ সালের ২২ মে তোলা
নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে ডায়ানা। ছবিটি ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে তোলা। ডায়ানাকে অসংখ্যবার বলপ্রিন্ট আর চেক স্যুট, প্যান্টে দেখা গেছে। ব্লেজারে চেকের আবেদন যে এখনো ফুরায়নি, সেটা চলে যাওয়া শীতেও টের পাওয়া গেছে। আগামী শীতেও বোঝা যাবে
২০১০ সালে প্রিন্স উইলিয়াম যখন তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা কেট মিডলটনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেবার তিনি মায়ের আংটি পরিয়েছিলেন প্রেমিকার অনামিকায়। এখনো কেটের হাতে শোভা পাচ্ছে আংটিটি
নানা কাটের আর রাফলের (কুঁচির) গাউন পরতে দেখা গেছে ডায়ানাকে। গাউনগুলোর নকশাও হতো বিচিত্র
তাঁর পরা গাউনের ছোট্ট একটি পরিবর্তনই বিশেষভাবে নজরে আনত ফ্যাশনবোদ্ধাদের। এখনো ডিজাইনাররা ডায়ানার অনুপ্রেরণায় গাউন বানাচ্ছেন। কারণ, একালের ক্রেতাদের কাছেও এ ধরনের গাউন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে
১৯৮৩ সালের ৯ আগস্ট তোলা ছবি। প্রিন্স চার্লসের পোলো খেলা দেখছেন প্রিন্সেস ডায়ানা। তাঁর চুলের কাট, সানগ্লাস, গলায় মুক্তার মালা, হিরের নেকলেস, হ্যাট, ফ্লোরাল প্রিন্ট, গাউন, চেক স্যুট, স্ট্রাইপ প্রিন্ট, বলপ্রিন্ট, সুগন্ধি— সবই বিশ্ব ফ্যাশনকে বৈপ্লবিকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে