নিউইয়র্ক ছেড়ে ফ্যাশন উইকের ক্যারাভান এখন তাঁবু গেড়েছে লন্ডনে। আর সুচনা দিনেই মাতিয়ে দিয়েছে বারবেরি। অবশ্য কিছুটা আভাস তারা আগেই দিয়ে রেখেছিল। জানিয়েছিল, কোনো দর্শক ছাড়াই আউটডোর উপস্থাপনা লাইভস্ট্রিমিং করা হবে। এই শোর নামই দেওয়া হয় ‘বারবেরি ইন নেচার’।
কিন্তু এই আউটডোর যেকোনো মাঠ বা রাস্তা বা কোনো প্রাসাদ আঙিনা নয়, একেবারে প্রকৃতির আদুরে আঁচলে, তা কে ভেবেছিল। অথচ সূচনা চিত্তচমৎকারী আয়োজনে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বারবেরি।
নিজেদের প্রয়োজনেই মানুষ ফিরতে চাইছে প্রকৃতির কাছে। বারবেরির ডিজাইনার রিকার্ডো তিসি তাই হয়তো আগে ভাগেই তাঁর সৃজনসম্ভার নিয়ে হাজির হয়ে গেছেন সবুজে নৈঃশব্দ্যে। যেখানে স্পষ্ট হয়েছে একাকিত্ব আর আর মুক্তির উদগ্রতা। আসলে লকডাউন–উত্তর সময়ে এটাই তাঁর প্রথম উপস্থাপনা।
করোনাকালের অবরুদ্ধতার পাশাপাশি জীবনকে নতুন করে দেখার অভিজ্ঞতাই তাঁর কাজের প্রেরণা হয়েছে। সেটা বোঝা যায় ঘেরোটোপের মধ্যে মডেলদের প্রস্তুতি থেকে বনপথে তাদের হেঁটে চলায়। এরই মধ্যে কিছু উপদান যোগ করে এই আসরকে জমিয়ে দেওয়া হয়।
শুরুটাই ছিল ডিকনস্ট্রাক্টেড ট্রেঞ্চ কোটে একজন মডেল। দেহরক্ষীর মতো কালো স্যুট আর কালো রোদচশমায়, হাসতে মানা তিন ব্যক্তির তাঁকে অনুসরণ। আস্তে আস্তে দৃষ্টিগোচর হয় কয়েকজন দর্শকের। বারবেরির সাদা পোলো শার্টে। আসলে এরাও এই উপস্থাপনার অংশ। মাত্রা যোগ করেছে প্রকৃতির আবহে।
দৃষ্টি অন্যদিকে সরালে চোখে পড়ে উঁচু মঞ্চে কিছু মানুষ। সংগীতশিল্পী। গিটার হাতে একজন। এই আয়োজনে দেখার অনেক কিছুই ছিল। কিন্তু মজার বিষয় হলো পোশাক পরে মেঘছোঁয়া গাছগুলোর মধ্য দিয়ে পায়েচলা পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া মডেলদের থেকে চোখ কিন্তু সরে না। বরং তিসির কালেকশন ঠিকই দেখা হয়ে যায়। এই শোর জন্য তিসি সঙ্গে নেন পুরস্কার বিজয়ী জার্মান শিল্পী এলিজা ডাগলাসকে। আর প্রোডিউস করেন অ্যাসন ইমফ। ফলে এই শোর অন্য রূপ ধরেছে সংগত কারণেই।
কিছু মানুষ যারা এই শোয়েরই অংশ, তারা ছাড়া মনে হয়েছে এই আয়োজনের সাক্ষী কেবল অরণ্যানী। যদিও সারা বিশ্ব টুইচের মাধ্যমে দেখেছে লাইভস্ট্রিমিংয়ে। যেখানে তিসি বলতে চেয়েছেন প্রকৃতির মতোই উচ্ছ্বল আর প্রতিনিয়ত বদলে ফেলা তরুণদের জন্যই যেন তাঁর এই সৃষ্টি। তাঁর এই সৃজনসম্ভারের নাম দিয়েছেন ইন ব্লুম।
মানুষকে বাতিঘরের রক্ষক হিসেবে দেখা তিসির এবারের সংগ্রহে ছিল ট্রেঞ্চকোট, মৎস্যজীবী প্রাণিত বিব-ফ্রন্ট ট্রাউজার, শিয়ার-শিফন ট্রাউজারের আর প্রিন্টের শর্ট।
সেলিব্রিটি হোস্ট এরিখ মাডু, রোজালিয়া, স্টিভ ল্যাসি ও বেলা হাদিদের মতো তারকা মডেলরা বনপথে হেঁটেছেন।
২০১৮ সালে বারবেরিতে যোগ দেওয়া তিসির একটা ট্রেডমার্ক আছে। সেটা হলো হাঙর। তাঁর কাজের কোনো না কোনোভাবে এই জলজ প্রাণীটির উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আবার এই হাঙর একাকিত্বের তো বটেই, মূলত ভয়ের প্রতীক। এই দ্বৈত বিষয় বস্তুত এই সংগ্রহে প্রতীক হয়েছে। কারণ করোনাকালের রুদ্ধ সময়ে মানুষ একাকিত্বের পাশাপাশি যারপরনাই ভিত ছিল। প্রতিদিন কেটেছে অজানা আশঙ্কায়। তবে তাঁর এই সংগ্রহে হাঙর আর মৎস্যকন্যার মিথস্ক্রিয়াই প্রতীয়মান হয়েছে।
পোশাক নকশার পাশাপাশি পুরো আবহ দর্শকদের অন্য জগতে নিয়ে গেছে। আর কিছু না হোক, অতিমারির আতঙ্ক থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মুক্তি দিয়েছে।
এখানে বল রাখা ভালো, এই ব্র্যান্ডের ৪০ শতাংশ ক্রেতাই চীনের। কিন্তু করোনার কারণে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে বারবেরি। তবে অনেক ব্র্যান্ডের মতো বারবেরির ক্ষতির পরিমাণটা কম নয়। বরং প্রথম কোয়ার্টারে ঘাটতি রয়েছে ৪৫ শতাংশ। যদিও চীনে তাদের বিক্রির পালের আবারও বাতাস লেগেছে। এরই মধ্যে করোনাপূর্ব সময়ের মতোই হতে শুরু করেছে।