ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

ফ্যাশনে ম্যারাডোনার গোল

ম্যাজিশিয়ান ম্যারাডোনা প্রয়াত। বর্ণময় এক ফুটবলশিল্পীর চলে যাওয়া মানেই স্মৃতি মুছে যাওয়া নয়। তিনি কেবল সাফল্য আর ব্যর্থতার নিক্তিতে বিচার্য হবেন না বরং তাঁর জীবন, তাঁকে ঘিরে বিতর্কও আরও বহুদিন থাকবে আলোচনায়।  

ছবি: রয়টার্স

মাঠের বাইরে এই মানুষটির চলনবলনও সেই আলোচনার অংশ হতে পারে। সত্যি বলতে কি, ফ্যাশন দুনিয়ায় ম্যারাডোনার খুব একটা চলাফেরা ছিল বলে জানা যায় না। তবে নিজে যথেষ্ট ফ্যাশনেবল ছিলেন। অন্তত ফ্যানদের সেটাই দাবি। অবশ্য স্ট্রিটস্টাইলে ম্যারডানাকে আইকন বললে বাড়িয়ে বলা হবে। অনেকেই বলে থাকেন হালের জাইন মালিক (সুপার মডেল জিজি হাদিদের সঙ্গী), পিট ডেভিডসন আর জাস্টিন বিবাররা তাঁকে অনুসরণ করছেন।

যেটা হোক না হোক, ম্যারাডোনাকে নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়। তিনি চুল ডাই করেছেন কবে? তাও যেনতেনভাবে নয়। স্টাইল করেই। সেটা তো আশির দশকের কথা। এরপর আবার পুরো চুল ডাই করেছেন। আর পোশাক পরেছেন যেমন ইচ্ছা, যেখানে ম্যারাডোনাই উপস্থিত স্বমহিমায়। বেশির ভাগ সময় শর্টস, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, রাবমুড়া, হাওয়াই শার্ট কিংবা প্রিন্ট, চেকস বা স্ট্রাইপড। আবার স্যুটেও তিনি তাঁর মতোই। ট্রিম করা দাড়িতেও বেশ মানানসই। অনুরাগীরা গুরুতে অনুসরণ করেছেন বৈকি।

ছবি: রয়টার্স

এই আটপৌরে অথচ স্টাইলিশ, তাও আবার নিজের মতো করে। চাপিয়ে দেওয়া কিছু নয়। এটাই তো ম্যারাডোনা। এটাই তো তাঁর সিগনেচার।

দুহাতে দুই ঘড়ি

দুহাতে একই ডিজাইনের ঘড়ি পরতেন ম্যারাডোনা

কোথাও গেলে ম্যারাডোনা দুহাতেই ঘড়ি পরতেন। একটায় স্থানীয় সময়, অন্যটায় আর্জেন্টিনার সময় দেখার জন্য। এই ঘড়িজোড়া আবার হতো একই রকম। দুরকম কখনোই নয়। অর্থাৎ একই কোম্পানি, একই ডিজাইন। এটাও পরিণত হয় ম্যারাডোনা স্টেটমেন্টে।

ঘড়ির প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ দুর্বলতা

অন্যদিকে ঘড়ির প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ দুর্বলতা। দামি ঘড়ি তিনি পরতেন। সংগ্রহ করতেন। রোলেক্স ছিল তাঁর সবচেয়ে পছন্দের ব্র্যান্ড। পাশাপাশি হিউবল্টও ছিল তাঁর অনুরাগের তালিকায়। একসময় তিনি হিউবল্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও হয়েছিলেন। পরেছেন এই কোম্পানির দামি সব ঘড়ি: ক্ল্যাসিক ফিউশন থেকে হিরে বসানো বিগ ব্যাংগস। তাঁর সম্মানে হিউবল্ট সীমিত সংস্করণ বাজারে ছাড়ে, যেখানে মূল থিম ছিল নীল-সাদা রং আর তাঁর জার্সি নম্বর ১০।

অনেক কিছুর সঙ্গে থেকে যাবে তাঁর ঘড়ির স্মৃতি, থাকবে তাঁর সংগ্রহে থাকা ঘড়িগুলোও। এসবের ঊর্ধ্বে যেন মনে হচ্ছে তাঁর প্রয়াণে থমকে গেল সময়।

ম্যারাডোনা ১, ডলচে অ্যান্ড গ্যাবানা ০

ছবি: রয়টার্স

২০১৬ সালে সোফিয়া লোরেন এবং নেপলসকে প্রতিপাদ্য করে ফল বা অটাম-উইন্টার সংগ্রহ তৈরি করে বিখ্যাত ফ্যাশন হাউস ডলচে অ্যান্ড গ্যাবানা। ইতালির প্রথম অস্কারজয়ী অভিনয় ব্যক্তিত্ব সোফিয়া লোরেন যেমন নেপলসের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন, তেমনি আছে ডিয়েগো মারাডোনাও। তিনি নেপলসের হয়েও তো নেপলসেরই। কারণ এই শহরের একটি অখ্যাত দলকে তিনি ইউরোসেরার রূপান্তর করেন বলতে গেলে একক কৃতিত্বে। ফলে নেপলসকে নিয়ে কিছু করলে ম্যারাডোনাকে বাদ দিই–বা কীভাবে?

ছবি: ম্যারাডেনার ইনস্টগ্রাম হ্যান্ডল

এ জন্য ওই সংগ্রহে ডলচে অ্যান্ড গ্যাবানা জুটি রাখলেন ম্যারাডোনা বিশ্বকাপজয়ী ঐতিহাসিক ১০ নম্বর জার্সি। ফ্যাশন শো হলো দারুক জাঁকজমক করে। তারায় তারায় খচিত সে আসর। কিন্তু ছন্দপতন ঘটল তারপরই। মামলা ঠুকে দিলেন ম্যারাডোনা। কারণ তাঁর ১০ নম্বর জার্সি অনুসরণ করা হয়েছে তাঁকে না জানিয়ে। আর নেপলস ও ম্যারাডোনাকে ট্রিবিউট দিতে গিয়ে ছোট্ট এই ভুলটা করে বসেন এই ডিজাইনার জুটি। ফলে তার মাশুল গুনতে হয়। ম্যারাডোনার জার্সির প্রেরণায় তৈরি পোশাক নিয়ে ম্যারাডোনা শুরুতে প্রশংশাই করেন। কিন্তু তারপর তিনি মামলা করলে মিলানের আদালত ২০১৭ যে রায় দেন, সেটা ম্যারডোনার পক্ষেই যায়। তিনি সেই মামলা জিতে ৭০ হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ পান।

ম্যারাডোনাকে পিউমার সম্মান

তাঁর করা শতাব্দীর সেরা গোলের সম্মানে বুট বাজারে আনে পিউমা

১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘হ্যান্ড’স অব গড’ গোল ছাড়াও অসাধারণ একটি গোল তিনি করেছিলেন। সেটি ছিল দ্বিতীয় গোল। যেটা বলা হয় ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। সেই গোলের ৩০ বছর উপলক্ষে ২০১৬ সালে নতুন বুট বাজারে ছাড়ে পিউমা। নাম দেয় ‘কিং ম্যারাডোনা সুপার’। এই বুটের টাংয়ে ছিল ম্যারাডোনার ছবি আর আপারে তাঁর স্বাক্ষর। সেই সময়ে ওই বুটের দাম রাখা হয় ২৭৫ মার্কিন ডলার।
তথ্যসূত্র: হাইপবিস্ট, ড্রিম টিম, ভোগ