আজ শুধু একটি বছর নয়, শেষ হচ্ছে একটি দশকও। ২০১৯ সালের শেষ দিনে তাই ‘রিভিউ’ করা যেতেই পারে, ছেলেদের ফ্যাশনে কেমন গেল ৩৬৫ দিন। ছেলেদের ফ্যাশন ও স্টাইলে বেশ চমক জাগিয়ে গেল এই দশকের শেষ বছর। সেটা পোশাক থেকে অনুষঙ্গ সবকিছুতেই।
এই বছরের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, সত্তর দশকের স্টাইল থাকবে পুরো বছর। সেটা ছিলও, তবে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে। চেক, ফুল আর পশুপাখির নকশা দেখা গেছে সব ধরনের পোশাকে। সত্তর দশকে ছেলেদের প্যান্টে যে বেল বটমের চল ছিল, সেটা এ বছর দেশি ফ্যাশনে জায়গা পায়নি। পলিশ করা ঝকঝকে জুতার চেয়ে ম্যাটমেটে রঙের লোফার বেশি পরেছে ছেলেরা। আবার ফরমাল পোশাকের সঙ্গে পরেছে ঝকঝকে কালো ও বাদামি জুতা।
বাংলাদেশে এখন প্রায় ৯ মাস গরম আবহাওয়া থাকে। বাকি তিন মাস শীত শীত ভাব। তারপরও এই তিন মাসেই ছেলেদের স্টাইল বেশি জোরেশোরে দেখা যায়। এবারও যেমন নানা রকম জ্যাকেট চলছে। বছর শুরুর মাসেও দেখা গেছে শীতের পোশাকের ফ্যাশন। বোম্বার জ্যাকেট, বাইকার জ্যাকেট, আর্টিফিসিয়াল লেদার ও গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা সোয়েটার পরেছে বেশি। উলের টুপিও পরতে দেখা গেছে ২০১৯ সালে। আবার হাই ফ্যাশনে চলেছে পুরোটা সাধারণের বাইরে। বিভিন্ন দাওয়াত, পার্টি বা পাবলিক অনুষ্ঠানে হাই ফ্যাশনেবল পুরুষেরা ইউরোপ–আমেরিকার স্টাইল বেছে নিয়েছেন। পরেছেন কুচিওয়ালা প্যান্ট, ভিন্ন কাটের জ্যাকেট।
তরুণেরা বেশি ঝুঁকেছেন স্লিম ফিট ফ্যাশনের দিকে। যে পোশাক খানিকটা আঁটসাঁট, সেটার দিকে বেশি ঝুঁকতে দেখা গেছে। সাদা জুতার একটা ট্রেন্ড ছিল বছরজুড়ে। যেকোনো পোশাকের সঙ্গে সাদা স্নিকার বেছে নিতে দেখা গেছে। এই ধারা সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চলেছে একযোগে। আর পরতে দেখা গেছে লোফার। বিয়ের মতো বিশেষ দিনের সাজেও শেরওয়ানির সঙ্গে নাগরা ছেড়ে মখমলের লোফার পরতে দেখা গেছে। বাইরে ঘুরতে বা রেস্তোরাঁয় খেতে যেতে খাটো প্যান্ট পরে বের হওয়ার চল দেখা গেছে। মুঠোফোনে সময় দেখায় অভ্যস্ত হলেও ঘড়ি পরার চল বেড়েছে সব বয়সীদের। তরুণেরা স্পোর্টস ওয়াচ ও স্মার্ট ওয়াচ বেশি পরেছে। বিশেষ করে যেসব ঘড়ির সঙ্গে মুঠোফোন যুক্ত হতে পারে, ক্যালরি মাপা যায় এমন ধরনের ঘড়ি পরতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মধ্যবয়সী ও বয়স্ক লোকেরাও ঘড়ি পরেছে, তবে সেটা ক্লাসিক।
এই বছরের পুরো গরমের সময়টা হালকা রঙের পোশাক বেশি চলেছে। ছিল ক্রিস্টাল রঙের পোশাকও। তবে সবকিছুতে প্রিন্টের নকশা বেশি দেখা গেছে। হ্যাট বা ক্যাপ তেমন একটা চলেনি। তবে সুগন্ধির ব্যবহার বেড়েছে। সুগন্ধির গন্ধের মধ্যে উডি, রোজ বা স্পাইসি ধরনের গন্ধগুলো বেশি চলেছে দেশে–বিদেশে। সুগন্ধিতে ‘লং লাস্টিং’ (দীর্ঘ সময়) জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ছেলেদের মধ্যে ব্র্যান্ডের পোশাক পরার ঝোঁক বেশি ছিল। এমনকি অনেক দেশি ব্র্যান্ড ভিনদেশের স্টাইল অনুসরণ করে বানানো পোশাক তরুণদের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে। তরুণেরাও সামর্থ্যের মধ্যে সেসব পোশাক পেয়ে কিনে নিয়েছে। মোটা দাগে এই ছিল ২০১৯ সালের ফ্যাশন হালচাল। পুরাতনকে পর্যালোচনা শেষ। এবার চলুন স্বাগত জানাই ২০২০ সালকে। নতুন বছর, নতুন দশক—তাই স্টাইলে আরও বড় চমক আসতে যাচ্ছে নতুন বছরজুড়ে।
আসিফ ইকবাল, ফ্যাশন পরামর্শক