লন্ডন ফ্যাশন উইকে পারিয়া ফারজানেহর বসন্ত-গ্রীষ্ম সংগ্রহের উপস্থাপনা
লন্ডন ফ্যাশন উইকে পারিয়া ফারজানেহর বসন্ত-গ্রীষ্ম সংগ্রহের উপস্থাপনা

পারিয়ার পোশাক-নকশায় যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যাসংকুল বর্তমান

বাকিংহ্যাম্পশায়ারে অনুষ্ঠিত তরুণ ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার পারিয়া ফারজানেহর বসন্ত-গ্রীষ্ম ২০২১ কালেকশনের শো হয়েছে একেবারেই সবুজ বাতাবরণে। পারিয়ার উপস্থাপনা দেখে বোঝার উপায় ছিল না সেটা আসলে ফ্যাশন শো ছিল, নাকি যুদ্ধক্ষেত্র। বরং বিস্ফোরণ, সেনাসাজ, ড্রোন—আয়োজনে কমতি রাখেননি পারিয়া। নিজের উপস্থাপন নিয়ে তাঁর বক্তব্য, বড় কিছুর জন্যই তো এই প্ল্যাটফর্ম।

ক্যামোফ্লাজ প্রিন্ট স্কার্টের সঙ্গে হাইনেক স্লিভলেস ইউটিলিটি জ্যাকেট

এবারের ফ্যাশন উইক অন্য সময়ের চেয়ে একেবারেই আলাদা। তাই সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হচ্ছে। বাকিংহ্যাম্পশায়ারের আমারশামের ছোট্ট সবুজ গ্রাম লিটল মিসেনডেন, অদূরে চিলটার্ন পাহাড়ের হাতছানি। পারিয়া লটবহর নিয়ে হাজির হয়ে যান সেখানে। উপস্থিত ছিলেন হাতে গোনা কিছু অতিথি। রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনে ঘাসের ওপরে বসে ফ্যাশন ক্যাটওয়াক নয়, কোনো যুদ্ধনাটক মঞ্চস্থ হতেই যেন দেখলেন উপস্থিত দর্শকেরা।

বোমা বিস্ফোরণের দৃশ্য তুলে ধরতে ছিলেন পাইরোটেকশিয়ানরা। তাঁরা আতশবাজি ফুটিয়েও বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আর সেই ধোঁয়ার মধ্যেই পারিয়ার নকশা করা পোশাক পরে সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটেছেন মডেলরা। তাঁরা পরেছেন ক্যামোফ্লেজ আর ইউটিলিটি-ইনফ্লুয়েন্সড পোশাক। এ সংগ্রহে ছিল ব্যাগিপ্যান্ট স্টাইলের পকেট দেওয়া ঢিলেঢালা ঘেরের গাউন, যা পরা হয়েছে বম্বার জ্যাকেটের সঙ্গে। দেখলে মনে হবে কোনো নান জলপাই রঙের হুডি আর গাউনে হেঁটে চলেছেন।

আতশবাজির ধোঁয়ায় যুদ্ধদৃশ্য তৈরির প্রয়াস

পারিয়া উপস্থাপন করেছেন স্ট্রিট স্টাইল সংগ্রহ। ক্যামোফ্লেজ প্রিন্টের পাশাপাশি ছিল হলুদ, জলপাই, কালোসহ নানা রঙের পোশাক। নানা প্যাটার্নের শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও স্কার্ট ছিল লক্ষণীয়।

পারিয়া ফারজানেহ, উদীয়মান ডিজাইনার হিসেবে বর্তমানে ব্রিটিশ ফ্যাশন পরিমণ্ডলে পরিচিত নাম। তাঁর নামেই স্পষ্ট করে দেয় তাঁর শিকড়। ইরানি বংশোদ্ভূত তিনি। তাঁর পিতামহ ছিলেন দরজি। সেই রক্ত প্রবাহিত তাঁর শরীরে। ফেলে আসা মাটির সোঁদা গন্ধ এই বিভুঁইয়েও তাঁর সৃজনের প্রেরণা হয়। ফলে ইরানের চিরাচরিত সব সুচিকর্ম অনায়াসে স্থান করে নেয় আধুনিক কাট আর প্যাটার্নের সঙ্গে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং এবারের সংগ্রহ তৈরিতে তিনি ইরানের হাতে বোনা কাপড়ও ব্যবহার করেছেন।

বিস্ফোরণের পটভূমিতে মডেল

বরাবরের মতো তাঁর সমাজবীক্ষণ ফুটে উঠেছে পোশাকের ক্যানভাসে। তিনি অস্থির আমেরিকার প্রতিচ্ছবি যেন তুলে ধরতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চলমান দাবানল কিংবা পুলিশের নিপীড়নসহ নানা ঘটনাকেই তিনি প্রতীয়মান করেছেন। এ জন্যই এ সংগ্রহের নাম দিয়েছেন ‘সমস্যাসংকুল আমেরিকা’।

অনেকেরই মনে থাকার কথা তাঁর গত জানুয়ারির ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপনায় ছিল ইরানের সেনাপ্রধান জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিবাদ।

তথ্যসূত্র: এএফপি