বিয়ে শব্দটির অনুভব সব দেশেই এক। তবে রীতিনীতি আলাদা। কনের পোশাকেও দেখা যায় ভিন্নতা। লাল ও সাদা রং জনপ্রিয় বিয়ের পোশাকের ক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি উজ্জ্বল কিছু রঙের ব্যবহারও নজর কাড়ে। অনেক দেশে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের পাশাপাশি জায়গা করে নিচ্ছে আধুনিক কাটের গাউন কিংবা লেহেঙ্গ।
বেনারসি শাড়ি এ দেশের চিরায়ত বিয়ের কনের পোশাক। শাড়ির রং বদলেছে সময়ের সঙ্গে, কিন্তু আবেদন কমেনি। ধীরে হলেও বিয়েতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে জামদানি শাড়ির ব্যবহার। জর্জেটের ওপর ভারী পাথরের কাজও বেছে নেন অনেকে। শাড়ির পাশাপাশি ইদানীং লেহেঙ্গা পরছেন অনেক কনে।
শাড়ি দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের বিবাহের পোশাক হিসেবে এগিয়ে আছে। উত্তর ভারতের বধূরা লেহেঙ্গা, ঘাগড়া চোলি ও ওড়নাকে বিয়ের পোশাক হিসেবে পছন্দ করেন। এ দেশে নানা ধরনের সংস্কৃতি থাকায় বিয়ের পোশাকেও ভিন্নতা দেখা যায়। সাদা রঙের শাড়িও যেমন আছে কনের পোশাকে, লাল রঙের বেনারসিও আছে। সালোয়ার-কামিজও পরেন অনেক স্থানের কনেরা।
শাড়ি, শারারা, লেহেঙ্গা আর কামিজ—এ ধরনের পোশাক পাকিস্তানের বধূরা বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে পরে থাকেন। পোশাকে ভারী হাতের কাজ আবশ্যক। পাকিস্তানে বিয়ের পোশাকের কোনো নির্দিষ্ট রং নেই।
কাজাখস্তানের বিয়ের কনেদের জন্য সুকেল বাধ্যতামূলক। চোখা ও লম্বাটে ধাঁচের টুপিটি পরিচিত সুকেল নামে। কনের পোশাকে এটিই সবচেয়ে দামি জিনিস। স্বর্ণ, রুপা, কোরাল, সাফায়ার ইত্যাদি দামি পাথর দিয়ে সাজানো হয় এটি। এর সঙ্গে লাগানো থাকে একটি পাতলা লেসের ওড়না, এটি ঝেলেক নামে পরিচিত। এটি বলা হয়ে থাকে যে একটি সুকেলের দাম দিয়ে ভালো জাতের ঘোড়া কেনা যায়। সুকেল অনেক সময় বংশেরও পরিচয় বহন করে। কাজাখস্তানে সাদার পাশাপাশি লাল, নীল, কালো ও সবুজ রঙের পোশাক পরে থাকেন কনেরা।
কালো রংটি প্রায়ই প্রাচ্যে ব্যবহৃত হয় কনের পোশাক হিসেবে। কারণ, এ অঞ্চলে কালো রং ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও সম্পদের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি গোত্রের বিয়ের পোশাকের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন, পোশাকের এই ভিন্নতাই একটি গোত্রকে অন্য গোত্র থেকে আলাদা করে তোলে। কাজাখস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা পোশাকে সূচিকর্ম পছন্দ করেন। উত্তরের বাসিন্দারা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের মালা পছন্দ করেন। উরাল পাহাড়ের কনেরা রাশিয়ার সানড্রেসের সঙ্গে মিল আছে, এমন কাটের বিয়ের পোশাক পরেন।
নাইজেরিয়া প্রায় ২৫০ জনগোষ্ঠী ও ৫০০টির বেশি ভাষার দেশ। অঞ্চল, ধর্ম ও জাতিগত পটভূমি অনুসারে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো পরিবর্তিত হয়। তবে নাইজেরিয়ার বধূরা প্রায়ই উজ্জ্বল রঙের ও নকশার বিয়ের পোশাক পরে থাকেন। মাথা স্কার্ফ দিয়ে প্যাঁচানো থাকে, যা গেলে নামে পরিচিত।
ঘানার ঐতিহ্যবাহী বিয়ের পোশাকগুলো খুব বর্ণিল হয়ে থাকে। প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব নকশার প্যাটার্ন কনে ও বরের পোশাকে তুলে ধরা হয়।
জাপানি বিয়ের পোশাকে ‘উচিকাকে’ পরিচিত নাম। এটি ঐতিহ্যবাহী পোশাকের আনুষ্ঠানিক স্টাইল। এর লম্বা হাতা সিল্ক থেকে তৈরি। উচিকাকে কনের কিমোনোর ওপর সামনে খোলা রেখেই পরা হয়। বেল্ট দিয়ে বাঁধা হয় না। এ দেশের বিয়ের কনেরা সাধারণত সাদা রঙের কিমোনো পরতেন মাথার বড় টুপিসহ। এখনো অনেকে তা–ই পরেন। তবে কিছু কনে বিয়ে ও পরবর্তী অনুষ্ঠানের জন্য পাশ্চাত্য ধাঁচের গাউনও পরছেন এখন। সাদা গাউনের পাশাপাশি কিমোনো দিয়ে তৈরি গাউনও বানিয়ে নিচ্ছেন অনেকে।
পাশ্চাত্যের পোশাকে সাধারণত সাদা রঙের বিয়ের গাউন জনপ্রিয়। ইউরোপের প্রায় সব জায়গায় সাদা রঙের নানা কাটের গাউন পরেন কনেরা। যেমন নরওয়ের কনেরা ঐতিহ্যবাহী বুনাদ পোশাক পরতেন একসময়। এখন সাদা রঙের গাউনের প্রচলনও চোখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোতে সাদা রঙের গাউন পরেন বধূরা।
সাধারণত চারবার পোশাক পরিবর্তন করেন চাইনিজ কনেরা। ঐতিহ্যবাহী লাল রঙের কিপা অথবা সাদা রঙের বল গাউন—সবই পরা হয় বিয়েতে।
বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে তুরস্ক অটোমান সাম্রাজ্যের প্রভাবে ছিল। এ কারণে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকটিও আগের সময়ের দ্বারা প্রভাবিত। অটোমান শাসনের সময় মেয়েরা সাধারণ পোশাক পরতে পছন্দ করত। কারণ, সে সময় শোভাযুক্ত বা চটকদার পোশাক পরা অশালীন বলে বিবেচিত হতো। বিয়ের পোশাকটিতে রুপা ও সোনার অলংকারযুক্ত সিকুইন যুক্ত করা থাকত। বিয়ের পোশাকের সঙ্গে থাকত হেড ড্রেস এবং ওড়নাসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ। নীল, লাল, বেগুনি বা গোলাপির মতো উজ্জ্বল রংগুলো পছন্দ করা হতো আগে। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাবে এখন বিয়ের পোশাকে প্যাস্টেল রং ও গাউন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
পাত্রী তার বাবার বাড়ি থেকে বিয়ের স্থানের দিকে যখন যায়, কনের ভাই বা চাচা তাঁর কোমরের চারদিকে লাল সিল্কের ফিতা বেঁধে রাখেন। এটি সাধারণত কনের সব সুখ, নির্দোষিতা ও শুভকামনার জন্য।