টেকো মাথায় চুলের আবাদ, ‘বিফোর-আফটার’ ছবিসহ চুলের এমন বিজ্ঞাপন হরহামেশা আমাদের চোখে পড়ে। এসব বিজ্ঞাপনের দিন বুঝি শেষ হয়ে এল। কারণ, মাথাভর্তি চুল আছে, এমন অনেকেই আজকাল মাথা কামিয়ে নিচ্ছেন। চেহারার আদল বুঝে মাথা কামালে সেই টাক মাথার স্টাইলই আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। ফ্যাশনেবল দেখাবে, আবার দেবে ফুরফুরে মেজাজও।
চুল থাকা মানে অনেক যন্ত্রণা। নিয়মিত শ্যাম্পু করো, শুকাও, যত্ন নাও, স্টাইল করো, স্টাইল শেষে চুল খোলার পর আরেক দফা যত্ন! দিনের একটা বড় অংশ চলে যায় চুলের পেছনে। তা ছাড়া যে গরম পড়ছে! এমন পরিস্থিতিতে ছোট চুল ও টাক মাথার চুল উঠে আসছে ট্রেন্ডে। একাধিক তারকা ন্যাড়া হয়ে টাক মাথাকে রীতিমতো ট্রেন্ডে নিয়ে এসেছেন।
৫ লাখ ৮২ হাজার ফলোয়ার–সমৃদ্ধ আইরিশ ল যেবার প্রথম ইনস্টাগ্রামে টাক মাথার ছবি দিলেন, ভক্তরা বলেছেন, খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। মার্কিন সংগীত তারকা, গীতিকার ও অভিনেত্রী ডেমি লোভাটোর টাক মাথায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন ভক্তরা। ডেমি জানিয়েছেন, টাক মাথায় তিনিই সেরা। ২৮ বছর বয়সী মার্কিন র্যাপার সুইটিও বিনা দ্বিধায় ফেলে দিয়েছেন লম্বা লম্বা চুল। কানাডীয় অভিনেত্রী জর্ডান আলেকসান্ড্রাও কেটে ফেলেছেন লম্বা চুল। এদিকে ২৫ বছর বয়সী স্লিক উড তো শুরু থেকেই ন্যাড়া মাথার মডেল হিসেবে পরিচিত।
পুরুষের টাক মাথা আগে থেকেই ট্রেন্ডে ছিল। অনেক পুরুষ তারকা নির্দ্বিধায় কেটে ফেলেছেন চুল। পিটবুল, ভিন ডিজেল, ডোয়ায়েন জনসন, জ্যাসন স্ট্যাথাম, জো গরগা, মাইকেল জর্ডানসহ এই তালিকা যথেষ্টই লম্বা। কিন্তু কেন নারীরা চুল কেটে ফেলছেন? এমন প্রশ্নে একেকজন দিয়েছেন একেক উত্তর। তবে যেটা সবচেয়ে বেশি বলা হয়েছে, সেটি হলো ইউরোপে একটা সময় চুল লম্বা রাখার সংস্কৃতি ছিল। কেবল চুলের যত্নের জন্যই থাকত একাধিক দাসী। চাপিয়ে দেওয়া সেই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে টাক মাথার ফ্যাশন অনেকটা প্রতিবাদের মতো। আরেকজন বলেছেন, ‘এমনিতেই নারীকে অনেক ভার নিতে হয়। চুলের ভারটা ফেলে দিয়ে না হয় একটু কমালাম।’
অনেক পুরুষ নারীকে লম্বা চুলে দেখতে পছন্দ করেন। এই ধারণা অনেকটা ‘নারীর সৌন্দর্য পুরুষের জন্য’ ধারণাকেই সমর্থন করে। সেদিক থেকেও অনেকে চুল কেটে ফেলছেন। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় কারণ হলো, চুল কেটে নিজেকে খুব সহজেই অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলা যায়। অনন্য ফ্যাশনের অধিকারী হয়ে যান সেই নারী।
মার্কিন লেখক র্যাচেল গ্যাবসন নারীদের টাক মাথার ফ্যাশনে আগ্রহী হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘এটা অনেকটা বডি ওনারশিপ বা নিজের শরীরের ওপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সব সময় দেখা যায় নারীর শরীর পুরুষ বা সন্তানের জন্য, নারী অন্যের জন্য বাঁচবেন—যুগ যুগ ধরে এমনটাই চলে আসছে। নারীর চুল, নারী কেটে ফেলবেন—এখানে নারীর স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। নিজের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণের ছোট একটি উদাহরণ এটি। এটা অনেকটা সমাজের মুখের ওপর “না” বলতে পারার মতো। কে বলেছে ন্যাড়া মাথায় দেখতে সুন্দর লাগে না? চুল কেটে ফেললে বিউটি ব্যবসায়ীদের সামান্য ক্ষতি। আর কারও তো কিছু যায়–আসে না!’