চোখ বন্ধ করে শক্তসমর্থ, মারপিটে পারদর্শী, সুদর্শন, বুদ্ধিদীপ্ত একজন পুরুষকে কল্পনা করুন। অনেকেরই মনে ভেসে উঠবে বড় পর্দার ‘বন্ড…জেমস বন্ড’ ড্যানিয়েল ক্রেগের ছবি। ‘সুপুরুষ’দের তালিকার প্রথম সারিতে তাঁর নাম দেখে কেউ-ই অবাক হবেন না। সেই ড্যানিয়েল ক্রেগ তাঁর শেষ ‘বন্ড’ সিনেমা ‘নো টাইম টু ডাই’-এর প্রিমিয়ারে লালগালিচায় কী পরে এসেছিলেন, মনে আছে? গোলাপি রঙের ডাবল ব্রেস্টেট ব্লেজার বা পোসাকটিকে সহজভাবে বলা যেতে পারে গোলাপী জ্যাকেট! হ্যাঁ, গোলাপি জ্যাকেটেই সবচেয়ে পুরুষালি হয়ে লালগালিচায় হাজারো ক্যামেরার ক্লিকে ধরা দিয়েছিলেন তিনি।
সামাজিকভাবে আরোপিত বিভিন্ন ধারণায় নারী আর পুরুষের জন্য অনেক কিছু ঠিক করে দেওয়া আছে। বাণিজ্যিক সফলতার জন্যও নারীদের রং গোলাপি আর পুরুষের রং নীল, মেয়েশিশু আর ছেলেশিশুর আলাদা খেলনা—এভাবে ঠিক করে দেওয়া। তা না হলে ছেলের জন্য যে গাড়ি কেনা হয়েছে, মেয়ের জন্য সেটিতেই চলে যেত; আলাদা করে পুতুল কিনতে হতো না। তাতে ক্ষতি হতো ব্যবসার! রঙের পেছনে অবশ্য একটা ঐতিহাসিক বাস্তবতা আছে। পুরুষের চেয়ে নারীরা রঙের বৈচিত্র্য চেনায় বেশি পারদর্শী। কেননা, প্রাচীনকালে পুরুষেরা শিকারে যেত, আর নারীরা কৃষিকাজ করত। কোন ফসল পাকলে কী রং হয়, কোন ফল কী রং ধারণ করলে খাওয়ার উপযোগী হয়, এসব নারীরা দেখত। কিন্তু এখন নারী আর পুরুষ সেই আদ্যিকালের বেঁধে দেওয়া ‘জেন্ডার রোল’ ভেঙে স্বাধীন জীবন যাপন করতে চায়। তাই ‘জেমস বন্ড’ও ক্যারিয়ারের এ রকম গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে বেছে নেন গোলাপিকেই।
‘নো টাইম টু ডাই’ ড্যানিয়েল ক্রেগের পঞ্চম ‘বন্ড’ সিনেমা। এ সিনেমার প্রিমিয়ারের দিন গোলাপি স্যুটে দেখা দিয়ে ক্রেগ জানালেন, প্রথমত, লিঙ্গের সঙ্গে রঙের বেঁধে দেওয়া নিয়মে তাঁর সায় নেই। তিনি এসব পাত্তা দেন না। দ্বিতীয়ত, গোলাপি রং তাঁর ব্যক্তিত্বকে সঠিকভাবে বহন করে এবং অন্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। অ্যান্ডারসন অ্যান্ড শেপার্ড থেকে ক্রেগ তাঁর গোলাপি ভেলভেটের জ্যাকেট-স্যুটটি নিয়েছেন। পরেছেন কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট আর কালো বো-টাইয়ের সঙ্গে।
আরেক হলিউড তারকা জ্যারেড লেটো। ‘ডালাস বায়ারস ক্লাব’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা সহ-অভিনেতার অস্কার হাতে তুলেছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি পর্দা ভাগ করেছেন লেডি গাগার সঙ্গে, ‘হাউস অব গুচি’ সিনেমায়। এই সিনেমার প্রিমিয়ারে জ্যারেড পরেন লাইট পিঙ্ক স্যুট। আর এর সঙ্গে গুচির কালো গ্লাভস। পরবর্তী কয়েক দিন গাগাকে ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল জ্যারেডের এই পোশাক। বরাবরই জ্যারেডের ফ্যাশন সেন্স, ‘রেড কার্পেট মোমেন্ট’ হয় টক অব দ্য টাউন। আর এই গোলাপি প্যান্ট-স্যুট আলাদাভাবে নজর কেড়েছিল, জায়গা করে নিয়েছিল ফ্যাশনের আলোচনায়।
হলিউডের আরেক স্টাইলিশ পুরুষ চলচ্চিত্রকার স্পাইক লি। তাঁর মাথায় বিভিন্ন ধরনে হ্যাট-বেনিস, বেসবল ক্যাপ, বেরেটস থাকবেই। পায়ের স্নিকারে থাকে সোনা বসানো। ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনে তিনি হাজির হয়েছিলেন ‘হট পিংক’ স্যুট আর প্যান্টে। এর সঙ্গে ম্যাচিং করে পরা সানগ্লাসটির রংও গোলাপি। পোশাকটি নেওয়া লুই ভিতোঁ থেকে। ডিজাইন করেছেন ভার্জিল আব্লোহ। ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের জরিপে কানের লালগালিচায় সেরা দশ পোশাকের একটি ছিল এটি।
এসব নমুনা তাই বলছে, যেকোনো পুরুষই নিজের সৌন্দর্য, শক্তি আর ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন গোলাপি যেকোনো পোশাক।