অনেক দিন পাদপ্রদীপের আলোয় নেই ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক। শারীরিক অসুস্থতাই মূলত তাঁর এই অজ্ঞাতবাসের অনুঘটক। গৃহবন্দী থাকলেও কিছুটা সুস্থ হয়ে ঠিকই কাজে ফিরেছেন তিনি। পুরোনো অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে মেতে উঠেছেন সৃষ্টির আনন্দে। একেবারে সমসময়ের উপযোগী পোশাক এবং অনুষঙ্গ তৈরি করছেন তিনি। এসব পণ্য অচিরেই পাওয়া যাবে তাঁর ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে।
সারা বিশ্বই এখন পরিবেশ বাঁচাতে সচেতন। করোনাকালের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ জন্যই তিনি কাজ করছেন প্রাকৃতিক রং ও পরিবেশবান্ধব উপকরণে। তাঁর নতুন পণ্যসম্ভারে রয়েছে দুই ধরনের কুইল্ট, পঞ্চ আর ছেলে ও মেয়েদের শাল। রিসাইকলড কটনের প্যাচওয়ার্ক কুইল্ট ছাড়াও তৈরি করা হয়েছে নবদম্পতিদের জন্য কাতান ও ভেলভেট দিয়ে তৈরি কুইল্ট। এসব কুইল্ট আরামদায়ক আর পরিবেশবান্ধব। সব কটিই কিংসাইজ। সম্প্রতি আলাপকালে িএসব তথ্য বিস্তারিত জানালেন এমদাদ হক।
তিনি বলেন, বাতিল সুতি সুতাকে নতুন করে ব্যবহার করা হয়েছে। এই সুতা হাতে কেটে সেই সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে খাদি কপড়। আর সেই কাপড় দিয়ে বানানো হয়েছে পঞ্চ। এ ছাড়া আরও রয়েছে ছেলে ও মেয়েদের শাল। এসব পোশাক আধুনিক, পরিবেশবান্ধব এবং আকর্ষণীয়। সঙ্গে যোগ করলেন, আরো তৈরি করা হয়েছে প্রাকৃতিক রঙের পরিবেশবান্ধব গামছা।
তাঁর এই পণ্য সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন এফ-কমার্সের (@IamEmdadHoque) মাধ্যমে। এখনই কোনো শপ খোলার ইচ্ছা তাঁর নেই বলে জানিয়েছেন এমদাদ হক। বলেছেন, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কুইল্টের অর্ডারও পেয়েছেন। এ ছাড়া এমদাদ হকে পণ্য কেনার জন্য ফোনে যোগাযোগ (০১৮৩৩৩৭৫১১১) করা যাবে।
নিজের নানা ধরনের কাজের মধ্যে এমদাদ হক সব সময়েই বিয়ের পোশাক তৈরি করেছেন। তাঁর ক্লায়েন্টেলও ছিল উল্লেখ করার মতো। এমনকি তাঁর ডিজাইন করা বিয়ের পোশাকে চাহিদাও ছিল যথেষ্ট। অনেক দিন পর আবার সেই কাজেও হাত দিয়েছেন। ওয়েডিং কুইল্টগুলো সেই প্রয়াসের ফল। অবশ্য এর বাইরেও তিনি বিয়ের জন্য শেরওয়ানি ও পাঞ্জাবি করছেন নিয়মিত।
বাংলাদেশের বিয়ের বাজারের সিংহভাগেই দখলে বিদেশি পণ্যের। সেখানে এমদাদ হক সেই ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এর বাইরে তাঁর নতুন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ, বিশ্বই ঝুঁকছে পুনর্ব্যবহাযোগ্য পোশাক এবং অন্যান্য পণ্যের দিকে। এমদাদ হক একেবারেই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে তাঁর প্রোডাক্ট লাইন সাজিয়েছেন। এখানে ক্রমেই যোগ হবে নতুন নতুন পণ্য।
ফ্যাশন ডিজাইনার এবং ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এমদাদ হকের অভিজ্ঞতার ঝুলি যারপর নাই ঋদ্ধ। তিনি শুরু করেছিলেন অধুনালপ্ত সাময়িকপত্র বিচিত্রায় লেখালেখি দিয়ে। বাংলাদেশে ফ্যাশন সাংবাদিকতার ভিত গড়ে দেয় ওই বিচিত্রা। পরে তিনি লেখাপড়া শেষ করে যোগ দেন ব্র্যাকের রেশম প্রকল্পে।
সেখান থেকে যোগ দেন গ্রামীণ উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে। পাট ও রেশম নিয়ে নানা নিরীক্ষা করেছেন। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয় গ্রামীণ উদ্যোগের প্রথম আউটলেট। মিরপুরের সনি সিনেমা হলের নিচে এবং তাঁর ডিজাইন করা একটি পাঞ্জাবি নিয়ে ১৯৯৮ সালের ঈদে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। গ্রামীণে অন্যান্য প্রকল্পেও তিনি কাজ করেছেন। সেই সময়ে বিভিন্ন বিদেশি ডিজাইনারদের সাহচর্য তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে। ঘুরেছেন বিভিন্ন দেশ। এরপর গ্রামীণের হয়ে তিনি তৈরি করে সিল্কের পণ্য। সেসব পোশাক তখন পরেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপারমডেল ম্যান্ডেলা, স্পেনের রানি সোফিয়া, বেলজিয়ামের রাজকুমার। উপহার দেওয়া হয় বিল ক্লিনটনকে তাঁর ঢাকা সফরে।
এরপর ২০০২ সালে গ্রামীণ উদ্যোগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সেখান থেকে বের হয়ে এসে শুরু করেন বাংলার মেলা। এখন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কচ্ছেদ না হলেও তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত নন। বরং পরে তিনি শুরু করেন স্টুডিও এমদাদ। বেশ কিছুদিন চলার পর তিনি অসুস্থতার কারণে চলে যান বিরতিতে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে আবার শুরু করেছে তাঁর নতুন অধ্যায়।
এরই মধ্যে গত বছর ডিসেম্বরে তিনি শুরু করেন মেধা, আমরাও পারি নামের একটি সংগঠন। মানুষেন সৃজনশীলতার বাস্তবায়নই এই ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য।
তবে নতুন পণ্য নিয়ে তিনি যে সবার মন জয় করে নিতে সক্ষম হবেন, তা বলাই যায়।