আসছে বৈশাখ, বাঙালি সাজের দিন

তবে কিছুটা কি ব্যতিক্রম হয় না? হয় অবশ্যই। সেটাও হয় বাঙালিয়ানা মেনেই।

ঠোঁটে নয়, পোশাকে লাল থাক

ঠোঁটে নয়, পোশাকে লাল থাক

এবারের বৈশাখের আয়োজন হবে অন্যান্যবারের চেয়ে একেবারে ভিন্ন। বাইরের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। সে জন্য বেশির ভাগ আয়োজনই হবে বাড়িতে বা একেবারে ঘরোয়া। আর আয়োজন যা–ই থাকুক না কেন, মুখে মাস্ক থাকতেই হবে। ফলে মুখের সাজের বেশির ভাগটাই ঢাকা পড়ে যাবে। বিশেষ করে ঠোঁটের লাল লিপস্টিক। কিন্তু লাল ছাড়া কি বৈশাখ জমে? প্রশ্নটা মাথায় ঘুরেফিরেই আসে। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায়, এবার সবকিছুতেই ছাড় দিতে হবে। তেমনি ছাড় দিতে হবে সাজগোজেও। ঠোঁটের লাল এবার ঢাকা থাক, বরং বাড়ুক পোশাকের লাল।

সাদা আর লাল বৈশাখের ট্রেডমার্ক রং। তাই পোশাক হোক সাদা-লালে। নারী–পুরুষ, তরুণ–তরুণী, বয়স্ক–শিশু—সবার পোশাকই হোক লাল-সাদায়। এখন বাবা-মায়ের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে কেনা যায় শিশুদের পোশাক। তাতেও লাল-সাদা থাক। পোশাকের লাল আর সাদায় মুছে যাক ঠোঁট রাঙাতে না পারার দুঃখ।

পোশাকে ঐতিহ্য ও হাল ফ্যাশনের ধারায় সমন্বয় থাকতে পারে

শাড়ির সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সাজ দিতে চাইলে কপালে একটি লাল টিপ থাকতেই পারে। কুর্তা, ফতুয়া, স্কার্ট ও ধুতি-পায়জামার সঙ্গে চুল সামনে একটু পাফ করে নিয়ে পনিটেল বা স্টাইলিশ কোনো বেণি করে নিতে পারেন। বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে গয়নাতেও। রঙিন পুঁতি বা কাপড়ের মালা কেউ চাইলে মাথায়ও ব্যবহার করতে পারেন। সাদামাটা শাড়ির সঙ্গে রঙিন গয়না পরে সামঞ্জস্য আনা যেতে পারে। শাড়িটি যদি হয় রংচঙে, তাহলে মেকআপ ও গয়নার রং হালকা হলেই ভালো দেখাবে।

সাজে ঐতিহ্য ও হাল ফ্যাশনের ধারায় সমন্বয় থাকতে পারে। শাড়ি বা কামিজে দেশি নকশা থাকলেও চুলটা ছিমছাম ও ট্রেন্ডি ধাঁচে বেঁধে নিতে পারেন। অনুষঙ্গ ঐতিহ্যবাহী বা ফাংকি—দুই রকমই চলবে।

দেশি ঢঙে

দেশি ঢঙে শাড়ি পরতে পারেন

পয়লা বৈশাখে তো সব বয়সীর পোশাকেই উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তরুণীরা নানা ঢঙে শাড়ি পরতে পারেন। মাঝবয়সী কেউ কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরতে পারেন, সঙ্গে একটি হাতখোঁপা আর কপালে গোল টিপে ছিমছাম সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। তবে কেউ চাইলে এক প্যাঁচেও শাড়ি পরতে পারেন এই দিনে। এর সঙ্গে টিকলি বা নথও লাগাতে পারেন। পুরোপুরি দেশি ঢঙে সাজতে পারেন।

অতিথি আপ্যায়নে

আগেই বলেছি, এবারের বৈশাখ হবে অন্যান্যবারের থেকে একেবারে আলাদা। করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছে। ফলে সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে দূরে থাকাই ভালো হবে। অতিথি যদি আপ্যায়ন করতেই হয়, তাহলেও সচেতন থেকে সেটা করতে হবে। সামাজিক দূরত্বটা ভালোভাবে মানা যায়, এমনভাবে নিমন্ত্রণ করতে পারেন অতিথিদের। সেটাই হবে সুবিবেচনার কাজ।

আর একটি বিষয় জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। এবার পয়লা বৈশাখের দিন হতে পারে রমজান মাসেরও প্রথম দিন। সে বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে সাজগোজের ক্ষেত্রে। শুধু সাজগোজ নয়, বাঙালির উৎসব মানেই খাবারদাবারের অফুরন্ত আয়োজন। চাঁদের ওপর নির্ভর করে রোজা যদি শুরু হয়েই যায়, তাহলে খাবারদাবারের ক্ষেত্রেও আনতে হবে পরিবর্তন। সে ক্ষেত্রে খাবারদাবারের আয়োজন হবে রাতে।

রাতের মেকআপে বেস ব্যবহার দিনের চেয়ে ভারী হতে পারে। ঠোঁটে পোশাকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লাল বা বেরি রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ সময় ব্লাশন ও চোখের শেড গাঢ় হলেও সমস্যা নেই। তবে এবার চোখকে প্রাধান্য দিন। চোখ হোক স্মোকি কিংবা ন্যাচারাল শেডের ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ।

পোশাকের রঙের সঙ্গে মানিয়ে ব্যবহার করুন মাস্ক

দিনে শাড়ি পরে বের হলে রাতের দাওয়াতে আরামের কথা বিবেচনা করে বেছে নিন ছিমছাম পোশাক। গাউন, জিনস-টপ বা যেকোনো পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সাজ দেওয়াই ভালো। চোখে টানা কাজল, কপালে বড় টিপ ও হাতভর্তি চুড়ি তোলা থাক দেশীয় পোশাকের জন্য। দাওয়াতে শাড়ির আঁচল ছেড়ে রাখতে পারেন। রাতের নিমন্ত্রণে চুলটা সুন্দর করে সেট করে ছেড়ে রাখতে পারেন। অথবা চুলটা উঁচু করে বেঁধে ব্যবহার করতে পারেন কোনো হেয়ার অ্যাকসেসরিজ।

বাড়িতে আছেন বলে ভেবে নেবেন না যে মাস্ক ব্যবহার করেন না। যেখানেই থাকুন, একাধিক মানুষ হলেই মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ু তুলুন। আর এখন মাস্কের নকশাতেও এসেছে ফ্যাশানের ছোঁয়া। পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে ব্যবহার করুন পছন্দমতো মাস্ক। সেটাই আপনার ফ্যাশন চেতনার বড় আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে এবারের বৈশাখে।