অফিসপাড়ায় ঈদের ছুটি শেষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে যাবে আর কদিন বাদে। বিদায় নেবে ছুটির আমেজও। ফিরতে হবে আটপৌরে কর্মব্যস্ত জীবনে। তবে ব্যস্ত জীবনে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আলস্য। ছুটিতে কত আরামেই না ছিলাম সবাই। যতক্ষণ খুশি ঘুমানো যেত, চাইলেই বেড়াতে বের হওয়া যেত। আবার সেই ঘড়ি ধরা জীবনে ফিরতে মন চায় না অনেকের। তবু ফিরতে তো হবেই। তাই আজ থাকছে ছুটি শেষে আলস্য দূর করার কিছু পরামর্শ। শুধু এবারের ছুটিই নয়, পরবর্তী যেকোনো ছুটির পর ক্লান্তি আর আলস্য দূর করতে এসব পরামর্শ কাজে দেবে।
ছুটির পর ক্লান্তি বোধ করলে খুব সম্ভবত আপনার ভালো ঘুম হচ্ছে না। ছুটির পর নিজেকে আরও প্রাণবন্ত রাখতে আপনার অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম দরকার। ভালো ঘুমের জন্য নিচের প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করুন—
অনেকে ভাবেন, ধরাবাঁধা একটা সময়ে ঘুমাতে যাওয়া শুধু শিশুদের জন্যই জরুরি। ব্যপারটা আদতে বড়দের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ঘুমের জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যাওয়া প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান, তাঁরা অন্যদের তুলনায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন এবং তাদের ঘুমও হয় গভীর। কাজের ক্ষেত্রে তাঁদের মনোযোগ এবং দক্ষতাও বেশি হয়। সুতরাং প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া শুধু ঘুমের জন্যই নয়, বরং পরদিন আপনার কাজের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্যও জরুরি।
রাতে যতক্ষণ ঘুম না আসে ততক্ষণ মুঠোফোন চালানো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রল করার অভ্যাস থাকলে বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। মুঠোফোনের পর্দা থেকে বিচ্ছুরিত আলো আপনার মস্তিস্ক থেকে মেলাটোনিন নিঃসরণে বাঁধা সৃষ্টি করে। মেলাটোনিন মাস্তিস্কের পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন, যা ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই বিছানায় গিয়ে অযথা মুঠোফোন চালানোর বদভ্যাস থাকলে দ্রুত দূর করতে সচেষ্ট হোন। সম্ভব হলে রাতে ঘুমানোর ১-২ ঘণ্টা আগেই মুঠোফোন বন্ধ করে রাখুন।
ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। ব্যায়াম করলে স্বাস্থ্য তো ভালো হয়ই, ঘুমেরও অনেক উন্নতি হয়। তাড়াতাড়ি ঘুম আসা, পর্যাপ্ত এবং ভালো ঘুম হওয়ার জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট ব্যায়াম করুন। যেমন হাঁটাহাটি, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো ইত্যাদি।
ভাল ঘুম আপনার ত্বকের জন্যও উপকারী। আপনার চেহারায় যদি ক্লান্তির ছাপ দেখা দেয়, তাহলে নিয়মমাফিক ঘুমানো আপনার জন্য খুবই প্রয়োজন। নিয়মিত ঘুমের কারণে আপনার ত্বক উজ্জীবিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে।
ছুটিতেও কিন্তু ঝক্কিঝামেলা কম থাকে না। উৎসবের দিনগুলোতে রান্নাবান্না, আত্মীয়স্বজনদের বাসায় দাওয়াতে যাওয়া, সবার জন্য কেনাকাটা, ঘরবাড়ি গোছানো আরও কত কাজ! আমাদের দেশে সাধারণত ছুটির সময় গৃহকর্মীরাও ছুটিতে থাকেন। তাই কোনো সাহায্যকারী ছাড়াই বাসার সব কাজ নিজেদেরকেই করতে হয়। এত সব কাজের মধ্যেও নিজের যত্ন নিতে ভোলা যাবে না। নিজের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। নিজেকে সময় দিন। হতে পারে সেটা যোগব্যয়াম করা, ফেস মাস্ক ব্যবহার, বাবল বাথ কিংবা একটুখানি বাইরে থেকে ঘুরে আসা। ছুটির মধ্যে নিজের যথেষ্ট যত্ন নিতে পারলে ছুটির পরে এসব অভ্যাস আলস্য দূর করে আপনাকে চনমনে রাখতে জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করবে।
ছুটির পরে অনেকে এতই ক্লান্ত বোধ করেন যে তঁদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। কোনোকিছুই ভালো লাগে না। অল্পতেই বিরক্তি এসে ভর করে। এমন সমস্যা আপনারও থাকলে একটু বাইরে ঘোরাঘুরি করুন। সবসময় আয়োজন করে বেড়াতে যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু কিছুটা সময়ের জন্য বাইরে তো একটু বের হওয়াই যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির মধ্যে পাঁচ মিনিট কাটালেও মন ভালো হয়ে যায়, অনেক ইতিবাচক অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
ছুটির পর আবারও কাজে ফিরে মন বসানো, প্রতিদিনের ক্লান্তিকর রুটিনে ফিরে যাওয়া সত্যিই কষ্টকর। কিন্তু ওপরের পরামর্শগুলো মেনে চললে এই ক্লান্তিকর কাজটি আমাদের জন্য অনেকটাই সহজ হবে।
সূত্র: ডার্মোভিয়া