শিশুর দাঁতের যত্নে আপনি হয়তো বেশ সতর্ক। শিশু নিয়ম করে দুই বেলা ব্রাশ করছে কি না, সেদিকে যেমন খেয়াল রাখেন, তেমনি চকলেট-আইসক্রিমের বায়নাও মেটান না খুব একটা। এত সতর্কতার পরও যখন শিশু দাঁতের ব্যথায় ভোগে, ক্যাভিটি হয় (সাধারণভাবে যাকে বলে ‘পোকাধরা’), তখন নিশ্চয়ই ভেবে পান না, কেন এমন হলো?
ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সাবেক পরিচালক ও অধ্যক্ষ ডা. এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের মুখে স্বাভাবিকভাবেই কিছু জীবাণু বাস করে। এমনিতে এসব জীবাণু ক্ষতিকর নয়। কিন্তু মুশকিল হলো, দাঁতের ফাঁকে খাবারের অংশ আটকে থাকলে এই জীবাণুরা সেই খাবার থেকে তৈরি করে অ্যাসিড। এই অ্যাসিড দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। ক্যাভিটির মতো সমস্যার সূত্রপাত হয় এখান থেকেই। তাই দাঁত পরিষ্কার রাখতেই হবে। তাহলেই আর ক্যাভিটির ভয় থাকবে না।’
যত্নের বিশেষ দিক
রোজ রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ ও কুলকুচি তো করতেই হবে। এরপরও কিন্তু এক মিনিটের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ বাকি থেকে যায়। সেটি হলো মাড়ি মালিশ। পরিষ্কার আঙুল দিয়ে ওপরের ও নিচের মাড়ি মালিশ করতে হবে রোজ। দুই মাড়িতেই পর্যায়ক্রমে মালিশ করতে হবে ওপর থেকে নিচ এবং নিচ থেকে ওপরের দিকে।
শিশু ঠিকভাবে ব্রাশ করতে পারছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে সাহায্য করুন তাঁকে।
ব্রাশটি শিশুর দাঁতের উপযোগী হতে হবে। নরম, ছোট ব্রিসলের ব্রাশ দিন শিশুকে।
পরিচ্ছন্নতার নিয়ম
৮ থেকে ১০ মাস বয়সে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, ঘুমানোর আগে ও প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করা আবশ্যক। প্রতিবার যে পেস্ট দিয়েই দাঁত মাজতে হবে, তা কিন্তু নয়। দুবার পেস্ট ব্যবহার করে বাকি সময় চাইলে কেবল পানি দিয়ে ব্রাশ ভিজিয়ে নিয়েও শিশুকে ব্রাশ করাতে পারেন। মেসওয়াকও করা যেতে পারে। ব্রাশ করার পর কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করতে হবে। যদি দুই বেলার বেশি ব্রাশ করা সম্ভব না হয়, তাহলেও প্রতিবার খাওয়ার পর নিদেনপক্ষে লবণমেশানো কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচির অভ্যাসটি গড়ে তুলতে হবে। এমনকি কুসুম গরম পানি না পেলে কেবল স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে হলেও কুলকুচি করতেই হবে। প্রতিবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ ও কুলকুচির পর ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। তাহলে আর দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে থাকবে না।
ছোট্টবেলার যত্নও গুরুত্বপূর্ণ
কোনো অবস্থাতেই শিশুকে ঘুমন্ত অবস্থায় খাওয়ানো যাবে না। প্রতিবার খাওয়ানোর পর অভিভাবক তাঁর আঙুলে পরিষ্কার, নরম একটি কাপড় পেঁচিয়ে আলতো করে পরিষ্কার করে দেবেন শিশুর দাঁত। শিশু যখন কুলি করতে শিখবে, তখন থেকে খাবার খাওয়ার পর কুলি করতে উৎসাহ দিতে হবে।