ওজন কমাতে অনেকেই খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ বা নির্দিষ্ট কোনো ডায়েট অনুসরণ করেন। ডায়েট নিয়ে এমন কিছু তথ্য প্রচলিত আছে, যার কিছু ঠিক, কিছু আবার পুরোপুরি ঠিকও নয়। এই যেমন কেউ কেউ মনে করেন, গ্রিন টি খেলে ওজন কমে কিংবা ওজন কমাতে বেশি বেশি পানি খাওয়া উচিত। চলুন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিনের কাছ থেকে এমন পাঁচ তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিই।
গ্রিন টি কিংবা দুধ-চিনি ছাড়া চা-কফি খেলে কারও কারও দেহের বিপাক হার কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এই কারণে কিন্তু ওজন খুব একটা কমে না। মূল বিষয়টা হলো এগুলো খেলে এক-দু ঘণ্টা পর্যন্ত আর তেমন ক্ষুধা লাগে না। তাই ক্যালরি গ্রহণও কমে। এভাবে পরোক্ষভাবে ওজনও কিছুটা কমে। তার মানে কিন্তু এই নয় যে এসব পানীয় খেলেই ওজন কমবে কিংবা ওজন কমাতে এসব পানীয় গ্রহণ জরুরি।
খাবার না খেয়ে পানি খেলে ওজন কমবে, এমন ধারণা ভুল। তবে হ্যাঁ, খাবারের আগে পানি খাওয়া হলে স্বাভাবিকভাবেই খাবার গ্রহণের আগেই পেটের কিছু অংশ পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর কিছুটা কম খাবার খেলেও আপনার ক্ষুধা মিটে যাবে। এভাবে খাবারের পরিমাণ কমাতে পারলে ওজন কমবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, খাবার খাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে পানি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, খাবার উগরে আসার মতো অনুভূতি হতে পারে। তাই খাওয়ার আগে পানি খেতে চাইলে অন্তত আধঘণ্টা আগে খেয়ে নিন।
ওজন কমাতে রাতের খাবার বাদ দেন অনেকেই। আসলে ওজন কমানোর জন্য দিন-রাতের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্যালরি কম গ্রহণ করা। একেবারে বাদ না দিয়ে বরং কিছুটা আগেভাগে সেরে নিতে পারেন রাতের খাবার। এ অভ্যাস যে কারও জন্যই স্বাস্থ্যকর। আগেভাগে রাতের খাবার খেলে সন্ধ্যায় ভারী নাশতা থেকে বাড়তি ক্যালরি গ্রহণও হবে না। তবে আগেভাগে রাতের খাবার খেলেও রাতের বাকি সময় পানি খাবেন অবশ্যই। রাতে ক্ষুধা পেলে টক ফল, পানসে স্বাদের ফল কিংবা সবজি খেতে পারেন।
শর্করা থেকে ক্যালরি আসে এটা ঠিক, কিন্তু এই শর্করা শরীরের জন্যও প্রয়োজনীয়। তাই শর্করা জাতীয় খাবার একেবারে বাদ দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। তা ছাড়া সব খাবারেই কমবেশি শর্করা থাকে। কোন ধরনের শর্করা জাতীয় খাবার রাখবেন খাদ্যতালিকায় এবং সেগুলো কতটা খাবেন, সেটা ঠিক করে নিন। পরিশোধিত শর্করার চেয়ে গোটা শস্য (হোল গ্রেইন) ভালো। যেমন ওটস, লাল চাল বা লাল আটা। কতটা শর্করা খাবেন রোজ, সে বিষয়ে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তেল একেবারে বাদ দিতে হবে, সেটাও ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন, কোন ধরনের তেল খাচ্ছেন এবং কতটা খাচ্ছেন। সয়াবিন তেল বা শর্ষের তেল এড়িয়ে চলুন। জলপাই তেল ভালো। ডিপ ফ্রাই করা বা তেলে ভাজা খাবার খাবেন না। সাধারণভাবে রান্নায় যতটা প্রয়োজন, ততটা তেল ব্যবহার করাই যথেষ্ট। মাছের তেল স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। তবে ইলিশের তেল বাদে। খাবার থেকে চর্বিও বাদ দিয়ে দিন