কাঁধে ব্যাগ, হাতেও ব্যাগ। কাঁধের ব্যাগে বই-খাতা, পড়ার সামগ্রী। আর হাতের ব্যাগে নানা রকম খাবার। তবে এই খাবার কিন্তু নিজের জন্য নয়। বিক্রির জন্য। ব্যতিক্রমী এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে যেতে পারে ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) ক্যাম্পাসে।
ইউআইইউর পুরকৌশল বিভাগের এই শিক্ষার্থীর নাম খালেকুজ্জামান। ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে খাবার বিক্রি করেন তিনি। খালেকুজ্জামান জানালেন, ইউআইইউ ক্যাম্পাসে আগে তিনটি ক্যাফেটেরিয়া ছিল। তবে বর্তমানে সচল আছে দুটি। শিক্ষার্থীরা যেন ক্যানটিনের পাশাপাশি আরও কিছু বিকল্প খাবার বেছে নেওয়ার সুযোগ পান, সে জন্যই উদ্যোগটি নিয়েছিলেন খালেকুজ্জামান। তাঁর বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা যেন উপকৃত হন, এমন কিছু করার চিন্তা আগে থেকেই ছিল। যখন দেখলাম ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের সংকট, ভাজাপোড়া ছাড়া অন্য তেমন কিছু পাওয়া যায় না, তখনই কাজটা শুরু করি।’
প্যাকেজ হিসেবে খাবার বিক্রি করেন খালেকুজ্জামান। দাম ৮০ টাকা। কী থাকে সেই প্যাকেজে? জানালেন, ভাতের সঙ্গে প্রধান খাবার হিসেবে থাকে মুরগি, মাছ, লাউ-চিংড়ি, রকমারি সবজি ও ডিম ভুনা। সঙ্গে আরও থাকে ডিমভর্তা, শুঁটকিভর্তা, ঢ্যাঁড়সভাজা, বেগুনভাজা, মিষ্টি কুমড়ার ভাজা, শাকভাজা, মাছভর্তা ও আলুভর্তা। ক্রেতারা প্যাকেজের আওতায় যেকোনো একটি প্রধান খাবার ও ভর্তা-ভাজা ৮০ টাকায় পেয়ে থাকেন। সপ্তাহে একবার মোরগ পোলাও, তেহারি ও গরুর মাংস রান্না করছেন তিনি। যা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় পাওয়া যায়।
রোজায়ও বন্ধ নেই খাবার বিক্রির কার্যক্রম। ইফতারে বেগুনি-পেঁয়াজু থেকে শুরু করে হালিম, লুচি, দই-চিড়া, ফলমূল—সবকিছুর ব্যবস্থাই করছেন তিনি। দাম সেই ৮০ টাকাই। খালেকুজ্জামান জানালেন, প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিনই তৈরি করেন তিনি। আশপাশের মেস, হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরাই এসব খাবার নেন। সাহ্রিতেও খাবার সরবরাহ করেন প্রকৌশলের এই শিক্ষার্থী।
শুরুটা হয়েছিল গত বছর আগস্ট মাসে। মায়ের রান্না করা খাবার পরিবেশন করতেন খালেকুজ্জামান। বর্তমানে কলেবর এত বেড়েছে যে রান্নার জন্য আলাদা একটা দল তৈরি করতে হয়েছে। হেঁটে হেঁটে খাবার বিক্রি করে কেমন আয় হয় জানতে চাই। খালেকুজ্জামান জানালেন, প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকার খাবার বিক্রি হচ্ছে। মাস শেষে কখনো কখনো সংখ্যাটা লাখ পেরিয়ে যায়।
পথচলাটা অবশ্য সহজ ছিল না। বিভিন্ন বিধিনিষেধ, প্রতিকূলতা পাড়ি দিতে হয়েছে। যেমন শুরুতে স্টলে খাবার বিক্রি করলেও এক মাস পর সেটা বন্ধ করে দিতে হয়। খালেকুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম মাসেই ৮ শর বেশি খাবারের অর্ডার পেয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা ক্যাফেটেরিয়া চালান, তাঁদের বিক্রি কমে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা বিষয়টা ভালোভাবে নেননি। পরে আর টেবিল নিয়ে বসার অনুমতি পাইনি।’
উদ্যোগটা চালিয়ে যেতে চান খালেকুজ্জামান। পড়ালেখার পাশাপাশি এই যে একটা কিছু করার, নেতৃত্ব দেওয়ার, দায়িত্ব নেওয়ার চর্চা হচ্ছে, এটাই তাঁর কাছে বড়।