প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট কোডফোর্সেসে লক্ষাধিক প্রোগ্রামারের অ্যাকাউন্ট আছে। যাঁদের মধ্যে ‘রেডকোডার’-এর সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। রেডকোডারদের বলা হয় প্রোগ্রামিংয়ের গ্র্যান্ডমাস্টার। বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়জন রেডকোডার আছেন, তাঁদের একজনের সঙ্গে কথা বলেছেন তানভীর রহমান
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শাহজালাল সোহাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই বুঝতে পারছিলেন, বিষণ্নতায় ভুগছেন তিনি। দিন দিন কমে যাচ্ছিল কর্মক্ষমতা। নিজেকে অনুপ্রাণিত করতেই ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর প্রোগ্রামিংয়ের জগতে পা রাখেন সোহাগ। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন। এরই মধ্যে ৫ হাজার ৬০০-এর বেশি প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান করেছেন সোহাগ। হয়েছেন রেডকোডার।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট অনলাইনে প্রোগ্রামিং সমস্যা নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিভিন্ন দেশের প্রোগ্রামাররা তাতে অংশ নেন। যে যত বেশি সমস্যা, যত দ্রুত সমাধান করতে পারেন, তাঁর র্যাঙ্কিং তত ভালো হয়। এভাবে রেটিং পরিবর্তন হয়, প্রোগ্রামারদের বিভিন্ন টাইটেল দেওয়া হয়। এ রকমই একটি টাইটেল হলো ‘গ্র্যান্ডমাস্টার’। শাহজালাল সোহাগ জানালেন, ‘২ হাজার ৪০০ বা তার চেয়ে বেশি রেটিংয়ের অধিকারী যাঁরা, তাঁরাই গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পান। এই গ্র্যান্ডমাস্টাররাই প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং জগতের রেডকোডার।’ সোহাগ যোগ করেন, ‘এটা অনেকটা দাবা খেলার রেটিং সিস্টেমের মতো।’
সোহাগ শেখাতেও ভালোবাসেন। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড, কোডফোর্সেস, কোডসেফ, হ্যাকারর্যাঙ্কসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্মে ৬০টিরও বেশি সমস্যা বানিয়েছেন। ‘বাংলাদেশ সিপি সার্ভার-বিসিএস’ নামে প্রোগ্রামিং কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। ইউনোহু একাডেমি নামের একটি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতাও এই তরুণ। ইতিমধ্যে প্রায় ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী তাঁর একাডেমি থেকে প্রোগ্রামিং শিখেছে।
রেডকোডার হওয়া কতটা কঠিন? সোহাগ বললেন, ‘আমার জন্য ৫ হাজার ৬০০টি সমস্যা সমাধান করার মতো কঠিন।’ প্রতিদিন গড়ে তিনটি করে, টানা ছয় বছর তিনি সমস্যা সমাধানের পেছনে ছুটেছেন। সাড়াও পেয়েছেন চমৎকার। সোহাগ বলেন, ‘প্রোগ্রামিংয়ে আমি যাঁকে ফলো করতাম—এন্টন ট্রাইগাব, রেডকোডার হওয়ার পর তিনি নিজে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’
ভবিষ্যতে আরও অনেক অর্জনের পরিকল্পনা আছে সোহাগের। সেই কথাও জানালেন, ‘সামনে আরও ওপরের র্যাঙ্কে পৌঁছাতে চাই। ভালো প্রোগ্রামার হতে চাই। এ রকম কিছু বানাতে চাই, যা মানুষের জীবনে কাজে লাগবে, জীবনকে সহজ করবে।’