কুমিল্লা হয়ে উঠছে উঁচু দালানের শহর

কুমিল্লা পুরানো শহর। তবে আধুনিকায়নের ফলে এখন সেখানে বহুতল ভবনের ছড়াছড়ি। চাহিদা থাকায় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও একের পর এক হাতে নিচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প। এই মুহুর্তে কুমিল্লা শহরে ৪৫টির মত প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ ব্যবসা করছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন গাজীউল হক

কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে উঁচু উঁচু ভবন
ছবি: মাহফুজুল হাসান

ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী জেলা কুমিল্লা। ইতিহাস–ঐতিহ্যে ঘেরা মায়াময় এক শহর। কয়েক বছর আগেও কুমিল্লা শহরে গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে দোতলা বাড়িই দেখা যেত বেশি। এসব বাড়িতেই মিলেমিশে থাকত যৌথ পরিবারের সদস্যরা। সময়ের পরিক্রমায় পরিবার বড় হয়েছে। ছোট আকারের ভবনে তাদের সংকুলান করাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, ফলে উপরের দিকে বাড়তে শুরু করেছে ভবন। ফ্ল্যাটের চাহিদা মেটাতে শহরজুড়েই এখন বহুতল ভবনগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। কুমিল্লা এখন উঁচু দালানের শহর।

যেভাবে শুরু

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে কুমিল্লায় প্রথম ফ্ল্যাট ব্যবসা শুরু করেন। তাঁরা কুমিল্লা জিলা স্কুলের পাশে সমতট লিগ্যাসি নামের একটি ১৩ তলা ভবন করেন। ওই ভবন থেকে প্রথম ফ্ল্যাট কেনাবেচা শুরু হয়। প্রতি বর্গফুট তখন সেখানে ২ হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি হতো। ২০০৮-০৯ সালে লেক ভিউ সিটাডেল নামের একটি প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগরের দক্ষিণ পাড়ে নয়তলা একটি ভবন করে। ওই ভবন হোয়াইট হাউস নামে পরিচিত। তখন সেখানে ৩ হাজার ৬০০ টাকা করে প্রতি বর্গফুট বিক্রি হয়। একই ভবনের পশ্চিম পাশে একই নির্মাণপ্রতিষ্ঠান এখন ফ্ল্যাট বিক্রি করছে প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার টাকা করে। এই শহরে এখন ৪৫টির মতো নির্মাণপ্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট ব্যবসা করছে। ঢাকার নামকরা আবাসন প্রতিষ্ঠানও কুমিল্লায় তাদের নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

কুমিল্লা শহরে স্বর্ণ কুটির ডেভেলপারস ও প্রপার্টিজ লিমিটেড তৈরি করেছে ১০টির মতো বহুতল ভবন। তারা শহরের পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকায় সর্বোচ্চ ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রদীপ চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘এলাকা ভেদে নির্ধারিত হয় ফ্ল্যাটের দাম। আমাদের সর্বনিম্ন দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা বর্গফুট। সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে।’ 

কুমিল্লার একটি বহুতল ভবন

শহরের বিভিন্ন এলাকায় ২০টির মতো বহুতল ভবন করেছে এমআরসি বিল্ডার্স। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের ফ্ল্যাটের মান ভালো। দামও নাগালের মধ্যে। বিভিন্ন আকারের ফ্ল্যাট আছে। যথাসময়ে শর্ত মোতাবেক আমরা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করে থাকি।’

গোল্ড সিলভার হোমস লিমিটেড কুমিল্লায় ৩০টির মতো ভবন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন অব কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘কুমিল্লায় আমাদের ফ্ল্যাটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আমরা যথাসময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করি। দামও নাগালের মধ্যে।’ 

ধর্মসাগর দিঘিকে বলা হয় কুমিল্লা শহরের প্রাণ। এর চারপাশে এখন বড় বড় ভবন

কুমিল্লায় নান্দনিক বহুতল ভবন করেছে সেল। নগরের ফৌজদারি মোড় এলাকায় ১৮ তলা ভবন করেছে সেল। সেল নিসর্গ নামের এই ভবনে আছে ৭২টি ফ্ল্যাট। শুরুতে ওই ভবনে ৫ হাজার ৫০০ টাকা বর্গফুট দরে বিক্রি হত ফ্ল্যাট। এখন ওই ভবনের অদূরে আদালত এলাকায় একই আবাসন প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে প্রতি বর্গফুট ৬ হাজার ৮০০ টাকা করে।

কোটি টাকার ফ্ল্যাট আছে কুমিল্লায়

কুমিল্লা নগরের পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকায় সেলের ভবনের ছয়তলায় থাকেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া খন্দকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের চারজনের পরিবার। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনি। প্রতি বর্গফুট ৪ হাজার ৩০০ টাকা। এতে তিনটি বেড়রুম, দুটি বারান্দা, তিনটি বাথরুম, ডাইনিং ও ড্রয়িংরুম আছে।’ 

কুমিল্লার ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, প্রাচীনকাল থেকে কুমিল্লা সমৃদ্ধ জনপদ। এখানে এখন বহুতল ভবনের ছড়াছড়ি। বেশির ভাগ আবাসন কোম্পানি স্থানীয়। ঢাকার হাতে গোনা কয়েকটি। এর মধ্যে সেল ভালো করেছে। তাদের ভবনগুলোতে বৈচিত্র্য আছে। কুমিল্লায় অনেক মানুষ প্রবাসী। প্রবাসীরাই বেশি ফ্ল্যাট কিনছেন। সরকারি কর্মকর্তারা কিনেছেন। ক্রেতার তালিকায় আছেন শিক্ষকও। থাকার জন্য কুমিল্লা সুন্দর শহর।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন, কুমিল্লায় শত শত বহুতল ভবন আছে। মানুষ ফ্ল্যাট কিনছেন। ফ্ল্যাটের ব্যবসাও জমজমাট।

সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে গ্রাহকের চাহিদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের নানা রকম সুবিধা যুক্ত করছে। বিশালাকার ভবনগুলোর মাধ্যমে কুমিল্লা হয়ে উঠছে উঁচু দালানের শহর।

লেখাটি বর্ণিল বসত জানুয়ারি ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত