সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক আপনাকে প্রতিনিয়ত বলতে থাকে, ‘হয়তো আপনার এখন ওই স্থানে থাকার কথা ছিল। তমুক কাজটা করার কথা ছিল। অমুকের মতো একজন সঙ্গী হলে আপনার ভালো হতো।’ ফলে নিজের মধ্যে বা বর্তমানে আপনি আত্মতৃপ্তি খুঁজে পান না। বরং অপরের ভেতর খুঁজতে থাকেন। ফলে আপনি কে, আপনার কী আছে, এসবে আপনি সন্তুষ্ট থাকেন না। এক কথায় বর্তমান আপনাকে সুখী করতে পারে না। সুখের একটা মিথ্যা মোহের দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে ক্রমাগত আপনি অসুখী হতে থাকেন।
কোনো একটা কিছু সার্চ করতে হরহামেশাই মুঠোফোন হাতে নিচ্ছে মানুষ। এরপর নিজের অজান্তেই কেটে যায় ৩০ মিনিট। তারপর যখন সে সম্বিত ফিরে পায়, তারপর যে অনুভূতিটা হয়, মোটেও সেটা সুখকর কিছু না। এভাবে লক্ষ্য থেকে ক্রমাগতই আপনি পিছিয়ে পড়তে থাকেন।
ফেসবুক আপনাকে প্রতিনিয়ত বলতে থাকে, ‘হয়তো আপনার এখন ওই স্থানে থাকার কথা ছিল। তমুক কাজটা করার কথা ছিল। অমুকের মতো একজন সঙ্গী হলে আপনার ভালো হতো।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ফলে মানুষের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা (এটেনশন স্প্যান) কমছে তো কমছেই। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ-অস্থিরতা, হতাশা আর অনিদ্রা। স্থূলতা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া আর হৃদ্রোগ এগুলোরই ‘বাই প্রোডাক্ট’। একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, পরকীয়া বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, ডিজিটাল অর্থনৈতিক ফ্রডিং, এগুলো তো এখন সময়ের, প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের বাস্তবতা।
সময়ের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন সব তথ্য ও আধেয়ের সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ইয়ুথ রিস্ক সার্ভের ২০২১ সালের প্রতিবেদনের অন্যতম পর্যবেক্ষণ হলো:
১. দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটানো কিশোর বয়সীদের মধ্যে বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তায় ভোগার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ।
২. ১৩-১৭ বছর বয়সীদের ৪৬ শতাংশ তাদের শরীরের গঠন নিয়ে বাজে ধারণা পেয়েছে। ৬৪ শতাংশ মাঝেমধ্যে অথবা প্রায়ই ঘৃণাভিত্তিক আধেয়ের মুখোমুখি হয়েছে।
৩. ৫০ শতাংশ টিনএজার জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বের হয়ে আসা তাদের জন্য খুব কঠিন। ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক বছর ধরে ক্রমাগত খারাপ লাগার অনুভূতি ছিল। ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করবে কি না, এ বিষয়ে গভীরভাবে ভেবেছে।
এই ৩ বছরে সংকট আরও বেড়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের গবেষকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বেরিয়ে আসার পর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব পড়ে, এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ না করলে সপ্তাহে গড়ে অন্তত ৯ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পাওয়া যায়।
অন্য একটি গবেষণা বলছে, আপনার সময় আর এনার্জি সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় তিনটি খাতে। একেবারে প্রথম অবস্থানে আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দ্বিতীয় অবস্থানে অর্থহীন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অর্থহীন সম্পর্ক। আর এই তিনটা কারণের সঙ্গেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
সূত্র: সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান ও ভেরিওয়েল মাইন্ড