২০২২ সালের ২২ অর্জন

বিদায় নিয়েছে আরও একটি বছর। ২০২২ সাল কেমন ছিল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য? অর্জনের তালিকায় একবার ফিরে তাকানো যাক।

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপকে (ডব্লিউইউডিসি) বলা হয় বিতর্কের বিশ্বকাপ। এ বছর এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশের দুই তরুণ—সৌরদীপপাল ও সাজিদ আসবাত খন্দকার।
ছবি: প্রথম আলো
নরওয়ের অসলো শহরে অনুষ্ঠিত ৬৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ বছর পেয়েছেন একটি ব্রোঞ্জপদক ও পাঁচটি সম্মানজনক স্বীকৃতি। ব্রোঞ্জটি এসেছে সরকারি আনন্দমোহন কলেজের তাহজিব হোসেন খানের হাত ধরে।
৫২তম আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ বছর দুটি ব্রোঞ্জপদক ও তিনটি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের গোলাম ইশতিয়াক ও রাজশাহী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ফাহিম আবরার ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন।
৫৪তম আন্তর্জাতিক রসায়ন অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল পেয়েছে একটি ব্রোঞ্জপদক। বাংলাদেশের পক্ষে পদক জিতে নেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের অভিষেক মজুমদার।
আর্মেনিয়ার ইয়েরেভানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের ৩৩তম আসরে চারটি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে বাংলাদেশ। পদকবিজয়ীরা হলেন রাজধানীর এসএফএক্স গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী রায়ান রহমান, নটর ডেম কলেজের খন্দকার ইশরাক আহমদ, আলফ্রেড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তাহসিন শান ও স্কলাস্টিকা স্কুলের ফাইয়াদ আহমেদ।
কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় অনুষ্ঠিত ১৯তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের অর্জন চারটি ব্রোঞ্জপদক। পদকজয়ীরা হলেন খুলনা জিলা স্কুলের এস এম আবদুল ফাত্তাহ ও কাজী নাদিদ হোসেন, ঢাকার উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আজমাঈন আদিব ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের মো. নাফিজ নূর।
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২-এ বাংলাদেশের দল ‘লেইজি-গো’ ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। বাংলাদেশের আরেকটি দল ‘রোবনিয়াম বাংলাদেশ’ হয়েছে অষ্টম। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড রোবোটিকস প্রতিযোগিতার ২৪তম আসরে এবারই প্রথম সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ নামের প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য মার্স সোসাইটি। এ বছর প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) দল ইউআইইউ মার্স রোভার টিম সামগ্রিকভাবে ১৩তম ও এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর করে।
ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড ইনভেনশন ফেয়ার (আইএসআইএফ) ২০২২-এর প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দল, টিম এটলাস। ইন্দোনেশিয়ার ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। কৃষিকাজের উপযোগী রোবট তৈরি করে শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রতিযোগিতার নাম ‘থ্রি মিনিট থিসিস (থ্রিএমটি)’। একজন প্রতিযোগীকে তিন মিনিটের মধ্যে তাঁর স্নাতক গবেষণার বিষয়বস্তু বর্ণনা করতে হয়। এ বছর এই প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্বে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আতিয়া বিনতে আমিন। তিনি কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবদেহের জিনতত্ত্বের ওপর পিএইচডি করছেন।
প্রতিবছর লন্ডনে বসে আন্তর্জাতিক ইংরেজি প্রতিযোগিতা টিনইগলের চূড়ান্ত আসর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। কুইজ, ইংরেজিতে লেখালেখি, বানান ও বক্তৃতা—চার বিভাগে দেখাতে হয় দক্ষতা। এ বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থী নাহিয়ান মাহজাবীন।
গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস আয়ারল্যান্ডভিত্তিক অলাভজনক একটি সংগঠন। পুরস্কারটির পৃষ্ঠপোষক আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস। বিশ্বের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র ও সৃজনশীল কাজগুলোকে স্বীকৃতি দেয় এ পুরস্কার। এ বছর ‘গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস’ বিজয়ীদের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জারীন তাসনীম শরীফের নাম।
সানহাক শান্তি পুরস্কারের মোশন গ্রাফিকস তৈরির প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গ্র্যান্ড প্রাইজ’ জিতেছেন তাহসিন আলম। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল বিভাগে পড়ছেন এই তরুণ। বিশ্বব্যাপী সংঘাত, দারিদ্র্য, পরিবেশ বিপর্যয়—এমন নানা সমস্যার সমাধান খোঁজাই ‘সানহাক শান্তি পুরস্কার’-এর লক্ষ্য।
ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই) হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেশাদার প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট সংস্থা। প্রতিবছর সিগন্যাল প্রসেসিং কাপ নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তারা। এ বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি দল। ‘টিম সিন্থেসাইজার’ নামের দলটির সদস্যরা হলেন আওসাফুর রহমান, বিস্ময় পাল, নাজিবুল হক সরকার ও জাবের ইবনে আবদুল হাকিম।
ফেলে দেওয়া মাস্ক থেকে কংক্রিট তৈরির উপায় বের করেছেন বুয়েটের আট শিক্ষার্থী। তাঁদের এ প্রকল্প উপস্থাপন করেছেন আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট (এসিআই) আয়োজিত ‘কংক্রিট সলিউশন’ প্রতিযোগিতায়। জিতেছেন উদ্ভাবনী নকশার পুরস্কার। এ ছাড়া ‘মোস্ট ইনোভেটিভ ডিজাইন’ বিভাগে তৃতীয় হয়েছেন তাঁরা।
প্রথমবার ‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ল্ড পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ অংশ নিয়েই চতুর্থ হয়েছেন লালমাটিয়ার ম্যানগ্রোভ কলেজের রাইয়ান রহমান। ‘ওয়ার্ল্ড সাব-জুনিয়র (অনূর্ধ্ব-১৮) পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২২’-এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘৫৯ কেজি’ শ্রেণিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া স্কোয়াটে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে রৌপ্য ও ডেডলিফটে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন তিনি।
পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ‘ইআরএল ইমার্জেন্সি লোকাল কম্পিটিশন’ প্রতিযোগিতায় চতুর্থ হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দল—ব্র্যাকইউ দ্বিচারি। প্রতিযোগিতার যৌথ আয়োজক ছিল ইউরোপিয়ান স্পেস ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড অ্যারোস্পেস টেকনোলজিস ও পোজনান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি। প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দুর্যোগে কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রোবটকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করা।
ভারতের আইআইটি বোম্বে আয়োজিত টেকফেস্টে অংশ নিয়ে রোবোটিকস প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ ও দ্বিতীয় রানারআপ—দুটি স্থানই পেয়েছেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ আর্কএশিয়া। এশিয়ার ২২টি দেশ নিয়ে গঠিত এ কাউন্সিল। এ বছর আর্কএশিয়ার ‘থিসিস অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন বুয়েটের তাওরেম সানানু। এ ছাড়া দ্য গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভর্ন্যান্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোল আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া কম্পিটিশন ২০২২-এ তাঁর নকশা করা একটি পোস্টার জিতে নিয়েছে গ্রাফিক ডিজাইন ক্যাটাগরির প্রথম পুরস্কার।
ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারটির প্রবর্তন করেছে প্রিন্সেস ডায়ানার নামে প্রতিষ্ঠিত একটা দাতব্য সংস্থা। ন্যূনতম এক বছর কোনো মানবিক কাজ করেছেন এবং বয়স ৯-২৫ বছরের মধ্যে, এমন উদ্যমী তরুণদেরই কেবল দেওয়া হয় এই পুরস্কার। বাংলাদেশি আট তরুণ ‘চেঞ্জমেকার’-এর নাম এসেছে এ বছরের তালিকায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন কমিউনিটিভিত্তিক গ্রুপগুলোর প্রশাসকদের (অ্যাডমিন) নেতৃত্ববিষয়ক দক্ষতা বিকাশের জন্য ‘এশিয়া প্যাসিফিক কমিউনিটি এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম’ চালু করেছে মেটা (ফেসবুকের মাদার কোম্পানি)। এ বছর এই প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশের ছয়টি ফেসবুক গ্রুপ—কাস্টঅ্যাওয়ে অন দ্য মুন, অপরাজিতা, পেনসিল, ফুডব্যাংক, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ার্স ও উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২২ প্রতিযোগিতায় ‘সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী প্রকল্প (মোস্ট ইন্সপিরেশনাল প্রজেক্ট) হিসেবে এ বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের দল ‘টিম ডায়মন্ডস’।