দুই দশক হলো অযত্ন–অবহেলায় পড়ে ছিল কুষ্টিয়ার ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ চত্বর। তরুণ শিক্ষার্থীদের হাতে প্রায় পরিত্যক্ত সেই ম্যুরালটিই আবার রং ফিরে পেল। জানাচ্ছেন তৌহিদী হাসান
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুষ্টিয়া পৌরবাজারের সামনে বোমা নিক্ষেপ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এতে সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ পৌর বাজারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক ম. ম. রেজার উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে একটি ম্যুরাল নির্মাণের ব্যবস্থা করে নাগরিক কমিটি। শিল্পী শহীদ ও লুৎফর রহমানের হাতে গড়ে ওঠে ৭২ ফুট দীর্ঘ ও ৭ ফুট উচ্চতার ম্যুরাল ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরতে তাতে চিত্রিত হয় বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত ইতিহাসের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম।
তখন ম্যুরালটি ছিল সাদা-কালো। প্রায় দুই দশক আগে সেটা রঙিন করা হয়। তারপর অযত্নে-অবহেলায় আস্তে আস্তে সেটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ম্যুরাল চত্বরটিতে আবর্জনা ফেলত বাজারের মানুষ।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে ৭ আগস্ট বৈঠকে বসেন কুষ্টিয়ার তরুণেরা। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন জঞ্জাল পরিষ্কার করে রঙিন করে সাজাবেন পুরো শহর। ঠিক হয় ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’কে রঙিন করার মাধ্যমেই শুরু হবে তাঁদের কাজ। রাতেই ফেসবুকে বিষয়টি সবাইকে জানান তাঁরা। পরদিন সকাল থেকেই আগ্রহী ব্যক্তিরা জড়ো হতে থাকেন। কেউ কেউ অর্থ সহযোগিতাও করেন। জোগাড় হয়ে যায় ১৫ হাজার টাকা। কেনা হয় রংতুলি।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিলয় মাহমুদ, চৌধুরী ইতিয়াক হোসেন, সাফিম আহাম্মদ, তানজিম আহমেদ, সারোয়ার জাহান, নাইমুর রহমান প্রমুখের উদ্যোগে শুরু হয় ম্যুরাল রঙিন করার কাজ। ধীরে ধীরে তাঁদের সেই যজ্ঞে যোগ দেন বিভিন্ন স্কুল–কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০–৫০ জন শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্রী ফাতেমা তুজ জহুরা। টানা প্রায় ১৫ ঘণ্টার কাজ শেষে রাত পৌনে দুইটায় ম্যুরালটিতে আবার ফিরে আসে রং।
রঙিন ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ দেখতে সকাল হতেই জড়ো হতে থাকে মানুষ।