কানাডার আবাসন-সংকট ও জীবনযাত্রার ঊর্ধ্বমুখী ব্যয় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত। ঠিক এ বিষয় নিয়েই আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি দল। বিজয়ীদের জন্য ঘোষিত আটটি পুরস্কারের মধ্যে শেষটি জিতে নিয়েছে তাদের দল ‘অ্যাসিমেট্রিক’। দলটির সদস্যরা হলেন মনীষিতা মুমতাহিনা, গোলাম আহমেদ, শাফি হাসনাইন ও আবদুল্লাহ আল আরেফিন। মনীষিতা ও গোলাম সদ্য স্নাতক শেষ করেছেন। শাফি ও আবদুল্লাহ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরামর্শক হিসেবে সাহায্য করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিব রেজা। আন্তর্জাতিক ডিজাইন প্রতিযোগিতা ২০২৪–এর অংশ হিসেবে ‘সারপ্লাস প্রোপার্টিজ ফর হাউজিং’ নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থপতিদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম আর্ক হাইভ।
কানাডার নোভা স্কশিয়া প্রদেশের রাজধানী হ্যালিফ্যাক্স। শুধু এই অঙ্গরাজ্যেই নয়, পুরো আটলান্টিক কানাডাতেই এটি সবচেয়ে জনবহুল শহর। শহরটিতে জীবনযাত্রাও বেশ ব্যয়বহুল। প্রয়োজনের তুলনায় আবাসনসুবিধাও অপ্রতুল। তাই প্রতিযোগিতার লক্ষ্য ছিল কম খরচে এমন বাসস্থানের নকশা করা, যেন সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এর সুবিধা পেতে পারে।
নকশা করার সময় কী কী বিষয় মাথায় ছিল? মনীষিতা মুমতাহিনা বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের নাম ছিল ‘ব্রিজিং দ্য গ্যাপ’। অর্থাৎ সব স্তরের মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার জন্য সাধারণ স্থানগুলোকে একত্রে অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করা। স্থাপত্যের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রাসঙ্গিক বিষয়, কম খরচের উপাদান, সবার জন্য সুযোগ-সুবিধা, উন্নত গ্রিনহাউস—ইত্যাদি বিষয় মাথায় রাখতে হয়েছে। যে জায়গাটা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে, সেটার কাছেই একটা বন্দর আছে। এই বন্দর থেকে কন্টেইনার রপ্তানি করা হয়। আমরা কন্টেইনারগুলো পুনর্ব্যবহার করে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিই। ফলে আবাসন ভাড়া অনেক কমে যাবে। বিশেষ করে, এ সমস্যায় পড়া উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।’ এ ছাড়া তুষারপাতের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়েও ধারণা দিয়েছে দলটি।
প্রতিবছর অনলাইনে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। স্থাপত্যের যেকোনো শিক্ষার্থী এতে অংশ নিতে পারেন। কাজ করতে হয় দুই ধাপে—ধারণা উপস্থাপন ও নকশা।
দলের অন্যতম সদস্য গোলাম আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের একমাত্র দল হিসেবে বিজয়ীদের তালিকায় থাকতে পেরে ভালো লাগছে৷ হ্যালিফ্যাক্স শহরের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী নকশার ভিন্নতা এবং দীর্ঘ স্থায়িত্ব বিবেচনা করা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। স্থপতি হিসেবে সব সময় পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিকতার মিশেলে নকশা করার চেষ্টা করি। এই প্রতিযোগিতাতেও তা–ই করেছি। মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ভূমিকা রাখাও একটা উদ্দেশ্য।’
পুরস্কার তো ছিলই। পাশাপাশি বিজয়ী নকশাগুলো ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে দেখানো হয়েছে।