এখন শুনি, প্রেমিকা আমার সেই বন্ধুকে এক বছর আগেই বিয়ে করেছে

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

মিতি সানজানা
মিতি সানজানা

প্রশ্ন: কলেজে পড়ার সময় থেকে একটি মেয়েকে আমি খুব ভালোবাসি। পাঁচ বছর আগে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে তাকে ভালোবাসার কথা জানাই। মেয়েটিও তাতে সম্মতি দেয়। এরপর আমরা ফোনে কথা বলা শুরু করি। সে যখন যা চেয়েছে, কিনে দিয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার মনটা সব সময় ছটফট করত। কিন্তু সপ্তাহে সে দুবারের বেশি কথা বলত না। বলত, বাসায় জানলে সমস্যা হবে। আমি সেসব বিশ্বাস করতাম। প্রেমের দুই বছর পর আমি ইতালি চলে আসি। এর পর থেকে যেকোনো দরকারে আমার বন্ধুর মাধ্যমে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। মাঝেমধ্যে দুজন ফোনে কথা বলতাম। বিদেশে এসে এ পর্যন্ত তাকে আমি দুই লাখ টাকা দিয়েছি। এই বছর আমাদের বিয়ে করার কথা। আমি দেশে আসব, সে তার পরিবারের কাছে জানাবে। এখন শুনি, আমার প্রেমিকা আমার সেই বন্ধুকে এক বছর আগে বিয়ে করেছে। তারা এখন আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। দুজনে মিলে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাকে বোকা বানিয়ে নানা সময়ে টাকা নিয়েছে। এখন আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়েছি। তবে আমি আমার টাকা ফেরত চাই। যখনই তাকে টাকা দিয়েছি, ব্যাংকে পাঠিয়েছি। সেসবের তথ্য ও প্রমাণ আমার কাছে আছে। এখন আইনের আশ্রয় পেতে কী করব?

সাগর ভূঁইয়া, ইতালি প্রবাসী

উত্তর: আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রেমিকাকে উপহারসহ টাকা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আপনাকে ছেড়ে আপনার বন্ধুকে বিয়ে করেছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান-প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া-নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।

প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে দুই পক্ষেরই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত। তবে আপনার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে, মেয়েটি হয়তো অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তিকে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটিও প্রতারণা হবে।

দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। আপনার ক্ষেত্রে প্রেমিকা আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেছেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জনের পর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন, এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আপনি যদি আদালতে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন, তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।

টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে মানি মোকদ্দমা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দাবি করা টাকার অনুপাতে কোর্ট ফি দাখিল করতে হয়। ফৌজদারি আদালতে আশ্রয় নিতে হলে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে সিআর (নালিশি) মামলা করা যায়। এ ছাড়া থানায় এজাহার হিসেবেও মামলা করার সুযোগ রয়েছে। আদালতে সরাসরি মামলা করলে আদালত জবানবন্দি নিয়ে সরাসরি সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা

প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)  ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA