ছোট্ট শিশুর হাতে পর্যন্ত গ্যাজেট চলে এসেছে। স্মার্টফোন, ট্যাব, স্মার্ট টেলিভিশন—সব স্ক্রিনেই এখন শিশুর অবাধ বিচরণ। সময় কাটানো বা পড়াশোনা—দুটির জন্যই শিশুর হাতে তুলে দিতে হচ্ছে ডিজিটাল স্ক্রিন। এসব জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায় হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের হুড়োহুড়ি, ছোটাছুটি।
ডিজিটাল স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতে নিষেধ করছেন অভিভাবক, কিন্তু কথা শুনছে না শিশু। হামেশাই ঘটছে এমন ঘটনা। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে ছাড়ানো বেশ কঠিন। ডিজিটাল স্ক্রিনে সময় কাটিয়ে অভ্যস্ত শিশুর ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফল আদতে খুব একটা ভালো হয় না। বদলে শুরু থেকেই স্ক্রিন টাইম-বিষয়ক কিছু সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
শিশুর জন্য বেছে নিন শিক্ষামূলক ও তথ্যবহুল বিষয়। শিক্ষামূলক অ্যাপ যেমন বেছে নিতে পারেন, তেমনি তাকে দেখাতে পারেন তার বয়সের উপযোগী নানা ডকুমেন্টারি। এমন বহু মজার কাজের ভিডিও খুঁজে দিতে পারেন, যা দেখে সে নিজেও করতে পারবে। এই যেমন, শিশুকে ছবি আঁকার টিউটোরিয়াল দেখাতে পারেন। এমন কোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাকে নিয়ে যেতে পারেন, যেখান থেকে তার মধ্যে একটু গভীর ভাবনা কিংবা ছোটখাটো গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা আসতে পারে।
ডিজিটাল স্ক্রিনে কাজ করার সময় নিজের দেহভঙ্গি ঠিক রাখা এবং কিছুক্ষণ পরপর বিরতি নেওয়ার মতো বিষয়গুলোর চর্চা করুন। স্ক্রিনের ওপর ঝুঁকে পড়া বা স্ক্রিনের খুব কাছে চোখ নিয়ে যাওয়ার মতো অভ্যাস বর্জন করুন। স্ক্রিন ব্যবহারের মধ্যে বিরতি নিয়ে উঠে দাঁড়ানো, দূরে তাকানো এবং দেহের বিভিন্ন পেশি নাড়াচাড়ার অভ্যাসও গড়ে তুলুন। সারা দিনে কোনো না কোনো সময় মনকে ফোকাস বা স্থির রাখার চর্চাও করুন। স্ক্রিনে চোখ রাখাটাকে আসক্তির পর্যায়ে চলে যাওয়া থেকে আটকান, স্ক্রিন নির্ভরশীল হবেন না। সব বিষয় নিজে চর্চা করার পাশাপাশি শিশুকেও শেখাতে হবে। বুঝিয়ে বলুন এসবের গুরুত্ব। আর অবশ্যই মনে রাখবেন, তার সামনে আপনিই আদর্শ।
শিশু ডিজিটাল স্ক্রিনে সময় কাটাতে পছন্দ করলে আপনিও তার সঙ্গে থাকুন। একসঙ্গে ডিজিটাল জগতে বিচরণ করুন। আপনার দেখিয়ে দেওয়া নিয়ম মেনে সে ডিজিটাল মাধ্যমে কিছু করতে পারে আপনারই সঙ্গে। এতে শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে থাকবে। ডিজিটাল মাধ্যমে গল্প তৈরি, শৈল্পিক কাজ সৃষ্টি কিংবা কোডিংয়ের মতো বিষয়গুলোর চর্চা হতে পারে। তবে সবটাই করতে হবে তার বয়স ও আগ্রহ অনুযায়ী।
ঘুম থেকে উঠেই মুঠোফোন ধরবেন না। ঘুমের আগে মুঠোফোনে সময় কাটাবেন না। শিশুও এই বিষয়গুলো মেনে চলছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কতটা সময় সে ডিজিটাল স্ক্রিনে কাটাতে পারবে, কী ধরনের কাজ করতে পারবে—এসব নির্ধারণ করে দিন। স্ক্রিনে কাটানো সময়ের মাঝের বিরতিতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে উৎসাহ দিন। এ সময় সে তার ভালো লাগার অন্য অনেক কাজ করতে পারে, যেগুলোতে ডিজিটাল স্ক্রিনের প্রয়োজনই নেই। স্ক্রিন দেখার সময়টাতেও কেউ ডাকলে যাতে সে সাড়া দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
শিশুরা কেবল আকর্ষণীয় আনন্দের জন্যই ডিজিটাল স্ক্রিনে বাঁধা পড়ে। ডিজিটাল জগতের বাইরের সত্যিকার, বিশাল জগৎকে শিশুর সামনে আনন্দময় এবং আকর্ষণীয় করে তোলাটা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। সত্যিকার বই পড়া কিংবা পড়ে শোনানো, গল্প করা, মজার মজার খেলা বা দারুণ কোনো জিনিস তৈরি করার মতো বিষয়গুলোর চর্চা করতে পারেন।
সূত্র: ফেমিনা