‘চাপ’ কথাটি সাধারণত নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হলেও কখনো কখনো ভালো অর্থেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে। চাপ নিয়ে গবেষণায় পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত বিজ্ঞানী হ্যান্স স্যালিয়ে একে দুই ভাগে ভাগ করেছেন—ইউস্ট্রেস ও ডিস্ট্রেস।
ইউস্ট্রেস বা ইতিবাচক চাপের মাধ্যমে আমাদের শারীরিক ও মানসিক অভিযোজনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে শরীর ও মন। একটি নির্দিষ্টমাত্রা পর্যন্ত চাপ ও কর্মক্ষমতা সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। তবে মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি যে সেই নির্দিষ্টমাত্রার পর অবস্থাটি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। তখন চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষমতা ক্রমে কমতে থাকে, ক্রমে ডিস্ট্রেসে পরিণত হতে থাকে ইউস্ট্রেস।
চাপ আধুনিক যান্ত্রিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তবে দৈনন্দিন কাজের চাপ এবং চাপকে একসঙ্গে মেলানো যাবে না। চাপের কারণে অনেক সময় মানুষ অস্বাভাবিক আচরণ করে, তাদের দৈনন্দিন জীবনেও যা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
১. চাপের কারণে মানুষের আচরণে বেশ পরিবর্তন দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ অতিরিক্ত রাগান্বিত বা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সহজেই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন, ছোটখাটো বিষয়েও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখান।
২. চাপের কারণে অনেকেই উদ্বেগ ও হতাশার শিকার হন। এ অবস্থায় নিজেদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা বোধ করেন, স্বাভাবিক কাজকর্মে মনোযোগ দিতে পারেন না। উদ্বেগ ও হতাশা মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাকে হ্রাস করে।
৩. চাপের কারণে শারীরিক আচরণেও অনেক অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়। অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত খাওয়া বা না–খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপানের আশ্রয় নেন। এ ধরনের আচরণ শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে ও দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
চাপের কারণে অস্বাভাবিক আচরণ প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে-
১. নিয়মিত ব্যায়াম ও ধ্যান চাপ কমাতে সহায়তা করে।
২. পর্যাপ্ত ঘুম ও সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।
৩. প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো ও তাদের সঙ্গে মনের কথা ভাগ করলে চাপ কমতে পারে।
৪. খাদ্যাভ্যাস ও নেশা থেকে দূরে থাকলে চাপ মোকাবিলা সহজ হয়।
ডা. হিমেল বিশ্বাস, নিউরোমেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, পান্থপথ, ঢাকা