করোনার প্রকোপের সময় গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন কামরুন নাহার। তখন দেখতে পান, অন্য যেকোনো প্রাণীর চেয়ে মানুষ সাপের প্রতি নির্মম আচরণ করে বেশি। সাপ দেখলেই বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য হলেও নিষ্ঠুরতা দেখায়। কামরুন নাহারের খারাপ লাগত। তিনি ঠিক করেন, পরিবেশের জন্য উপকারী এই প্রাণী রক্ষায় কাজ করবেন। সেই থেকে শুরু। তিন বছর সাপ নিয়ে কাজ করছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের এই শিক্ষার্থী। এ পর্যন্ত শতাধিক সাপ উদ্ধার করেছেন। যার মধ্যে নির্বিষ ঘরগিন্নি, সুতানলি, জলঢোঁড়া থেকে শুরু করে বিষধর শঙ্খিনী, কালাচ, পাতিকালাচ, খৈয়াগোখরা, পদ্মগোখরাও আছে। তবে নাহার সবচেয়ে বেশি উদ্ধার করেছেন শঙ্খিনী সাপ। কামরুন নাহার বলেন, ‘এটি নিশাচর। যতগুলো উদ্ধার করেছি, সব রাতের বেলায়। বেশ লাজুক ও শান্ত প্রকৃতির হয় এরা। ভয় পেলে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে থাকে। এর কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড বাংলাদেশে নেই।’
যেকোনো জায়গা থেকে সাপ উদ্ধার করতে পারেন কামরুন নাহার। সেটা হোক বাসাবাড়ি, হল কিংবা মেস। বললেন, সাপ উদ্ধার করার সময় বা উদ্ধার শেষ হলে স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। তাঁদের অনুমতিক্রমে সাপকে এক দিন পর্যবেক্ষণে রাখেন—কোথাও আঘাত পেয়েছে কি না দেখার জন্য। অসুস্থ হলে সুস্থতা নিশ্চিত করে লোকালয় থেকে দূরে ছেড়ে দেন। এ কাজে তিনি এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছেন যে ক্যাম্পাসে কোথাও সাপ দেখা গেলেও নাহারের ডাক পড়ে।
এই আস্থা অর্জনের পেছনেও গল্প আছে, শোনালেন কামরুন নাহার, ‘গত বছর দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে একটা মেস থেকে রেসকিউ কল পাই। সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা একটা শঙ্খিনী। সেই রাতে আমার প্রতি সবার আস্থা ও আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করতে করতে ভোর হয়ে যায়। মেয়ে হয়েও এতটুকু অনিরাপদ বোধ করিনি সেদিন। আমার কাজের জন্য শিক্ষকেরা “সর্পকন্যা” বলে ডাকেন। তাঁরা যখন এই নামে ডাকেন, তখন অনেক গর্ব হয়। মনে হয়, প্রাণীদের জন্য অন্তত কিছু করতে পারছি।’