মানুষের জীবনে কিছু বন্ধু থাকে, যারা সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকে। মনোবিজ্ঞানে এমন সাত ধরনের বন্ধুর কথা বলা হয়েছে। জেনে নেওয়া যাক সেই বন্ধুদের বৈশিষ্ট্য।
তালিকার প্রথমেই থাকবে আপনার সেই বন্ধু, যিনি সব সময় আপনাকে উৎসাহ দেন, উজ্জীবিত রাখেন। আপনার অতি তুচ্ছ কোনো সাফল্যেও যিনি যারপরনাই উচ্ছ্বসিত হন। আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে এমন বন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কেবল ভালো সময়েই নয়, কঠিন বিপর্যয়ের সময়েও তাঁর উৎসাহদানে ভাটা পড়ে না। আপনি যোগ্য, সক্ষম, আপনাকে দিয়ে হবে—আপনার ভেতর এমন একটা আত্মপ্রত্যয় সদা জাগিয়ে রাখেন তাঁরা।
এ ধরনের বন্ধু হয়তো সব সময় আপনার পছন্দের কথাটি বলবেন না। প্রয়োজনে আপনার শক্ত সমালোচনাও করবেন। অনেক সময়ই সেসব ভালো লাগবে না। হজম করতে কষ্ট হবে। কিন্তু তাঁর এই কঠিন কথা, গঠনমূলক সমালোচনাই আপনাকে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেবে। সৎ সমালোচক বন্ধু অনেকটা আয়নার মতো। ব্যক্তিবৈশিষ্ট্যের অন্ধকার দিক, দুর্বলতার বাস্তব চিত্র তাঁরা তুলে ধরেন। ফলে আত্মোন্নয়নের দীর্ঘ যাত্রাপথে নিজেদের ক্রমাগত শুধরে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এর মধ্য দিয়ে তৈরি হয় বিশুদ্ধ মনন। অধিকতর ভালো মানুষ হয়ে উঠি আমরা। তাঁদের এই সমালোচনার উৎস হিংসা বা বিদ্বেষ নয়। আমাদের প্রতি তাঁদের নিরেট ভালোবাসা, সহানুভূতি, স্নেহ ও উদ্বেগ থেকেই তাঁরা এটি করেন।
এই বন্ধু অনেকটা পাথরের মতো। দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য। আপনার সবচেয়ে বড় ভক্ত ও অনুরাগী। যেকোনো ব্যাপারেই তাঁরা আপনাকে নিরবচ্ছিন্ন ও নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে থাকেন। আপনার কোনো ক্ষ্যাপাটে ধারণা, পাগলাটে সিদ্ধান্ত, যা হয়তো অন্যদের কাছে বাস্তবসম্মত নয়। সে ক্ষেত্রেও তাঁদের পাশে পাবেন। তাঁদের এই অবিরাম সমর্থনের ফলে আমাদের ভেতর তৈরি হয় অপ্রতিরোধ্য শক্তি ও সাহস। ফলে আমাদের অজেয় স্বপ্নও একদিন সত্যি হয়ে ধরা দেয়।
চতুর্থ ধরনের বন্ধুটি আপনার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। চোখ বন্ধ করে তাঁদের সঙ্গে পথ চলা যায়। কিচ্ছুটি না ভেবে আঁকড়ে ধরা যায় তাঁর বিশ্বস্ত হাত। গভীরতম ভয়, গোপনতম ভুল, অতি ব্যক্তিগত স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা তাঁদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন। সিলগালা নথিপত্রের মতো, তালাবদ্ধ সিন্দুকের মতো তাঁরা আপনার গোপন কথাটি গোপনে রাখবেন। আপনাকে দাঁড় করাবেন না বিচারিক কাঠগড়ায়। জীবনজুড়ে এমন একজন বন্ধু পাওয়া মানে দূষিত বায়ুমণ্ডলে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের উৎস খুঁজে পাওয়া।
এই ধরনের বন্ধু মেন্টর বা তাত্ত্বিক গুরুর ভূমিকা পালন করেন। তাঁরা জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ। চিন্তায় সুদূরপ্রসারী। যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে তাঁদের পরামর্শ নিয়ে থাকি আমরা। জীবনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার এবং যথাসময়ে যথাপরামর্শটি দেওয়ার ক্ষমতা থাকে তাঁদের। নিজের মতামত বা ইচ্ছাকে চাপিয়ে দিয়ে নয়, বরং আপনার ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও লক্ষ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন। তাঁরা অনেকটা কম্পাসের মতো। জীবনের জটিলতা মোকাবিলা করে ব্যক্তিগত সাফল্য ও সমৃদ্ধি প্রাপ্তির গতিপথ নির্ধারণে তাঁদের ভূমিকা অনন্য।
এমন বন্ধুর কেবল ধৈর্যশীল, সহানুভূতিশীল কান নয়, রয়েছে একটি দরদি মনও। আপনার আবেগ-অনুভূতির প্রতি তাঁদের শর্তহীন মমতা থাকে। কোনো রকম পূর্ব-বিচার না করে তাঁরা আপনার বেদনার কথা, অনুভবের আলাপ শোনেন। আলাপের মাঝখানে উটকো হস্তক্ষেপ করেন না। আপাত গুরুত্বহীন বা অপ্রাসঙ্গিক হলেও দীর্ঘ বাক্যালাপ শেষে সেই অপ্রাসঙ্গিকতার প্রসঙ্গ তোলেন না। তাঁদের সঙ্গে যেকোনো তুচ্ছ ব্যাপার নিয়েও কথা বলা যায় অনায়াসে। মানসিক বোঝা হালকা করতে এমন বন্ধু অতুলনীয়।
তালিকার সর্বশেষ তথা ৭ নম্বর বন্ধুটি তিনি, যিনি সর্বদা হাসিখুশি থাকেন। তাঁদের সঙ্গে প্রাণখুলে হাসা যায়, ভাসা যায় উত্তুঙ্গ আনন্দোল্লাসে। তাঁরা জীবনকে দেখেন অতি সহজভাবে। জটিলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলা এমন বন্ধু কখনো ছেড়ে যান না। তাঁরা সব সময়ে মনে করিয়ে দেন, জীবন এত কঠিন কিছু নয়। সহজ-কঠিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে মজামাস্তির গুরুত্ব কতটা, তাঁদের সান্নিধ্যে থাকলে তা বোঝা যায়।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে ও পারসোনাল ব্র্যান্ডিং ব্লগ