বিড়াল এমনিতেই পানি কম খায়। তাই বিড়াল পানি কম খাচ্ছে বলে মনে হলেই ভয় পাবেন না। রোজ অন্তত কতটুকু পানি খেলে বিড়াল সুস্থ থাকবে, জানা থাকলে অহেতুক ভয়ও হবে না, আর প্রয়োজনের তুলনায় সত্যি সত্যিই কম পানি খেলে ব্যবস্থা গ্রহণও সহজ হবে।
বিড়ালকে ঠিকভাবে পানি দিলেও সে ঠিক কতটুকু পানি খেল, হিসাব করে রাখা সম্ভব হয় না। বরং বিড়াল কম পানি খাচ্ছে মনে হলে তার পানিশূন্যতা আছে কি না, সেটি পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। এই পরীক্ষা ঘরেই করতে পারবেন খুব সহজে। বিড়ালের দুই কানের মাঝখানের চামড়া আলতোভাবে টেনে ধরার পর ছেড়ে দিলে যদি তা দুই থেকে চার সেকেন্ডের মধ্যে আগের অবস্থানে ফিরে যায়, তাহলে তার কোনো পানিশূন্যতা নেই। আর যদি আগের অবস্থানে যেতে এর চেয়ে বেশি সময় লাগে, তাহলে বুঝতে হবে, বিড়ালটির পানিশূন্যতা রয়েছে। এ রকম হলে প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পানি কম খাওয়ার ফলে মূত্রথলিতে সংক্রমণ (সিস্টাইটিস) কিংবা মূত্রথলিতে ক্রিস্টাল জমা (ইউরোলিথিয়াসিস) হতে পারে।
বিড়ালের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ৫৫-৭০ মিলিলিটার পানির প্রয়োজন। অর্থাৎ, চার কিলোগ্রাম ওজনের একটি বিড়ালের জন্য সারা দিনে ২২০-২৮০ মিলিলিটার পানিই যথেষ্ট। তা ছাড়া এই পানির পুরোটা ‘পানি’ হিসেবে গ্রহণ না করলেও অসুবিধা নেই। মাছ বা মাংসের ঝোল দিয়েই পানির অনেকটা চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
অনেকেই বিড়ালকে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা শুকনা খাবার (ড্রাই ফুড) দিয়ে থাকেন নিয়মিত। তবে দীর্ঘদিন একটানা ড্রাই ফুড দিলে বিড়ালের কিডনিবৈকল্য হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ড্রাই ফুড খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেলেও বাড়িতে তৈরি খাবারে বিড়ালকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তোলা উচিত। তা ছাড়া ড্রাই ফুডে অভ্যস্ত বিড়াল পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক। ড্রাই ফুড দিলেও সঙ্গে অবশ্যই নরম, জেলির মতো খাবার (ওয়েট ফুড, ক্যানড ফুড) মিশিয়ে দিতে হবে। এতে পানির চাহিদা পূরণ হবে। না হলে ড্রাই ফুডে অভ্যস্ত বিড়ালের পাকস্থলিতে প্রদাহ এবং ক্ষত (আলসার), দাঁতের প্ল্যাক (টারটার) বা ইউরোলিথিয়াসিস পর্যন্ত হতে পারে।
বিড়ালের জন্য পানি রাখুন এমন স্থানে, যেখানে সে সহজেই যেতে পারে।
পানির পাত্রটি রোজ পরিষ্কার করুন।
প্লাস্টিক কিংবা কোনো ভঙ্গুর পাত্রে পানি না রেখে মেলামাইনের পাত্রে পানি রাখতে পারেন।
পানিতে ময়লা বা ধুলার আস্তর পড়লে সঙ্গে সঙ্গে বদলে দিন। রোজ একাধিকবার পানি বদলে দেওয়া উচিত।
যদি হঠাৎ করে বিড়ালের পানি খাওয়ার পরিমাণ খুব কম কিংবা খুব বেশি হয়ে যায়, প্রচুর প্রস্রাব করে, ওজন কমে যেতে থাকে, তাহলে দ্রুত প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
*ডা. সুশ্যাম বিশ্বাস: প্রাণিচিকিৎসক, ঢাকা।