১৭ জুলাই রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল ইন্টারনেট। পরদিন ১৮ জুলাই রাতে বন্ধ হয় ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ডের লাইন। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তারা। ২৩ জুলাই ইন্টারনেট চালু করে দেওয়া হলেও বন্ধ আছে ফেসবুক। যে কারণে অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তাদের ব্যবসা থমকে আছে। সম্প্রতি কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাঁদের উৎকণ্ঠার কথা।
শাহনাজ সুলতানা, রংধনু ক্রিয়েশন
হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ি, কামিজ থেকে গৃহসজ্জাসামগ্রী—সবকিছুই পাওয়া যায় ফেসবুকভিত্তিক পেজ রংধনু ক্রিয়েশনে। এর উদ্যোক্তা শাহনাজ সুলতানা জানালেন, ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর থেকে থমকে আছে তাঁর ব্যবসা। তাঁর এখানে ছয়জন স্থায়ী কর্মী কাজ করেন। বেচাকেনা না থাকলেও কর্মীদের বেতন নিয়মিত দিতে হবে। এ নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় আছেন এই উদ্যোক্তা। ‘আসলে এখন যে অবস্থা তাতে করে হয়তো এই মাস কর্মীদের বেতন দিতে পারব। কিন্তু এভাবে যদি ফেসবুক বন্ধ থাকে, তাহলে পরবর্তী মাসে কীভাবে কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’
তানজিল আহসান, তানজিল কিচেন
‘খরচ আর স্টাফদের বেতন বাদ দিয়ে মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ থাকত, আর গত সপ্তাহে মাত্র ৩ হাজার ৭৯০ টাকার খাবার বিক্রি হয়েছে।’ কথা হচ্ছিল ফেসবুকভিত্তিক বাড়িতে তৈরি খাবারের পেজ তানজিল কিচেনের স্বত্বাধিকারী তানজিল আহসানের সঙ্গে। ঢাকার মিরপুর থেকে কাজ করছেন তিনি। মজা করে তিনি বললেন, ‘আগে যেখানে সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে এক দিন বিশ্রাম নিতাম, সেখানে এখন সপ্তাহে সাত দিনই বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। যাঁরা আমাকে রান্নার কাছে সাহায্য করেন, তাঁরা নিয়মিত আসছেন। তাঁদের তো এটা মাসিক রোজগার। এভাবে ফেসবুক বন্ধ থাকলে কীভাবে কাজ এগোবে, বুঝতে পারছি না।’
সাঈদা সুলতানা, দয়িতা
আট বছর ধরে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন সাঈদা সুলতানা। গয়না নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ক্রেতাদের পছন্দে তৈরি হয় তাঁর গয়না, যে কারণে ক্রেতাদের কাছে তাঁর গয়নার গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। ফেসবুক বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন। কবে এ পরিস্থিতির সমাধান হবে, জানেন না বলেই বর্তমানে অফলাইনে যাওয়ার চিন্তা শুরু করেছেন এই উদ্যোক্তা।
ইয়াসিন হোসেইন, সবজিওয়ালা
সবজিওয়ালা মূলত তাজা ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস নিয়ে কাজ করে থাকে। এর উদ্যোক্তা ইয়াসিন হোসেইন বলছিলেন, ‘এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে আমাদের বিকল্প ব্যবসার কথা ভাবতে হবে।’ তিনি আরও বললেন, ‘পাহাড়ি বাজার বলে একটা সাইট আমাদের আছে, যেখানে পার্বত্য অঞ্চলের সবজি, ফলমূল পাওয়া যায়। যেহেতু আমাদের সরবরাহের মূল মাধ্যমই বন্ধ, তাই তাদের থেকে পণ্য আনাও সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে শুধু মূল উদ্যোক্তারাই নন, তাঁদের সঙ্গে জড়িত তৃণমূলে কাজ করা লোকজনও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, জেলেবাড়ি
পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে মাছ বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেন বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। পৈতৃক ব্যবসাকে ধরে রাখার চেষ্টা আরকি। এ ব্যবসায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন ভাবতে পারেননি। জেলেবাড়িতে রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, বরিশাল থেকে মাছ আনা হয়। এখন মাছ সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। পরিস্থিতি যদি এমন থাকে, তাহলে নতুন কিছু করার কথা ভাবতে হবে। তবে সেখানে কতটুকু সফলতা পাবেন, সেই বিষয়েও এখন সন্দিহান।