বার্নিং মাউথ সিনড্রোম খুবই অস্বস্তিকর রোগ।
বলা হয়, জনসংখ্যার ২ শতাংশের বেশি মানুষ, বিশেষ করে নারীরা এতে ভুগছেন। এ রোগে মূলত জিব এবং কারও কারও মাড়ি, ঠোঁট, গালের ভেতর, তালু বা মুখের বড় অংশজুড়ে জ্বালাপোড়া করে।
সামান্য মসলাযুক্ত বা ঝালজাতীয় খাবারেও কষ্ট হয়। গরম পানীয়, যেমন চা-কফি খেলে মুখ পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। সঙ্গে মুখের স্বাদে পরিবর্তন, যেমন তিতা বা ধাতব স্বাদ; মুখ শুষ্ক হয়ে আসা, বারবার পিপাসা লাগা, জিবের অসাড়তা দেখা দেওয়া ইত্যাদি ঘটে।
কারণ
প্রাইমারি কারণ মুখের মধ্যকার স্বাদ ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর জটিলতা। অন্যটি সেকেন্ডারি কারণ। এর পেছনে থাকে অন্য কোনো সমস্যা, যেমন:
ড্রাই মাউথ: কোনো কারণে মুখের স্বাভাবিক লালা নিঃসরণ কমে গেলে এমনটি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি শুষ্ক মুখের অন্যতম কারণ, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে বিষণ্নতা ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধক ওষুধ, কেমো বা রেডিওথেরাপি কিংবা লালাগ্রন্থির কোনো রোগ।
অপুষ্টি: পর্যাপ্ত পুষ্টি ও ভিটামিনের অভাব, বিশেষ করে আয়রন, জিংক, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ডির অভাব।
মুখের রোগ: ছত্রাক সংক্রমণ; কিছু ক্রনিক রোগ, যেমন লিকোপ্লাকিয়া, লাইকেনপ্লানাস।
আপত্তিকর অভ্যাস: নিজের অজান্তে দাঁতে দাঁত ঘষা, জিব দিয়ে দাঁত ঠেলা, শক্ত টুথব্রাশ ও কয়লা-ছাই ব্যবহার।
প্রতিরোধ
বার্নিং মাউথ সিনড্রোম সারানোর তেমন উপায় না থাকলেও কিছু নিয়ম পালন করলে ভালো থাকা যায়।
তামাক সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।
অ্যাসিডিক বা মসলাদার খাবার সীমিত করা।
কার্বোনেটেড পানীয় পান না করা।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার।
সতর্কতা
কিছু ক্ষেত্রে এ সমস্যা অন্যান্য স্নায়ুরোগের কারণে হতে পারে। আবার কিছু প্রি-ক্যানসারাস ক্ষত থেকেও হতে পারে।
সমাধান
ঠান্ডা পানি বা বরফ মুখে রাখলে কিছুটা আরাম দেবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস, লবণযুক্ত পানি বা অ্যালকোহলমুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার, টক দই, পনির, লেবুর রস, মধু, চিনিমুক্ত চুইংগাম অনেক ক্ষেত্রে কষ্ট কমিয়ে দেয়।
অনেক ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে এমনিতেই এ সমস্যা কমে আসে। ডেন্টিস্ট অনেক সময় কিছু ভিটামিন, মিনারেল সাপ্লিমেন্টসহ বিশেষ কিছু অয়েন্টমেন্ট দিতে পারেন।
বিষণ্নতা দূর করার পরামর্শ নিতে পারেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। অ্যান্টিডিপ্রেশন ওষুধ ভালো কাজ করে।
ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা।