পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কাজ শুরু করার পর থেকেই আমি বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার গল্প সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তাই জাতিসংঘের বার্ষিক সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব পার্টিজে’ (কপ) অংশগ্রহণের ইচ্ছাটাও অনেক দিনের। এই সম্মেলনে সব দেশের প্রতিনিধিরা এক হয়ে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করেন। এ বছর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ২৯তম কপ অনুষ্ঠিত হয়। স্লোগান ছিল ‘ইন সলিডারিটি ফর আ গ্রিন ওয়ার্ল্ড’ অর্থাৎ সবুজ পৃথিবীর জন্য সংহতি। বলতেই হয়, এই স্লোগান আমার জন্য বিশেষ কিছু। কারণ, এই একই লক্ষ্য নিয়েই (একটি সবুজ পৃথিবী গড়তে) প্রতিষ্ঠা করেছিলাম পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ‘গ্রিন লিড’। সেদিক থেকে স্লোগানটি আমার বিশ্বাসেরই প্রতিফলন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক শেষ করেছি এ বছর। তবে আমার ধ্যানজ্ঞান পরিবেশ। সেই সুবাদে কপ২৯-এ অংশ নেওয়া।
সম্মেলন শুরু ১১ নভেম্বর। ৯ নভেম্বর চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করি, সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে বাকু। আগেও আমি দেশের বাইরে গিয়েছি। কিন্তু এটি যেহেতু আমার প্রথম কপ ও বাকু সফর, তাই রোমাঞ্চ আর অনিশ্চয়তা মিলে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছিল। ১০ তারিখ সকালে আজারবাইজানের মাটিতে পা রেখেই হায়দার আলিয়েভ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা পাই। শুরুতেই মনটা ভালো হয় যায়। বাকুতে পৌঁছেই ভেন্যুতে চলে যাই। নিবন্ধন শেষে ভেতরে প্রবেশ করার আগেই বাংলাদেশের পতাকা হাতে একটি ছবি তুলে ফেলি।
কপ সম্পর্কে একটু ধারণা দিয়ে রাখি। কনফারেন্স অব পার্টিজ হলো এমন একটি ধারাবাহিক সম্মেলন, যেখানে সরকার ও অংশীজনেরা বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তির অগ্রগতি মূল্যায়ন করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে কাজ করে। বিশ্বের ১৯৮টি দল (১৯৭টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে) এতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। এ বছর বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা ছাড়াও আমরা বেশ কয়েকজন তরুণ সম্মেলনে অংশ নিয়েছি।
আগেই শুনেছিলাম, প্রথম কপ আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সম্মেলনের প্রথম দিনেই তা অনুভব করি। চারদিকে একসঙ্গে অনেক কার্যক্রম চলছিল। বিশাল ভেন্যুতে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর জন্য অনেক হাঁটতে হয়। প্রথমবার অংশগ্রহণকারী হিসেবে পুরো প্রক্রিয়া ও অংশীজনদের ব্যাপারে সামগ্রিক ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। গ্লোবাল স্টকটেকের সভায় অংশগ্রহণ করেছি। যেখানে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যসমূহের প্রতি দেশগুলোর অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়। এরপর মিটিগেশনের একটি সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বক্তব্য শুনি। ১৩ নভেম্বর ‘ক্যাপাসিটি টু অ্যাকশন: ইউথ ক্লাইমেট টকস’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নিই। সেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গ্রিন লিডের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করি। উপস্থিত সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। এরপরই যোগ দিই ‘ইউথ গ্যাদারিং টু বিল্ড আ নিউ সিভিলাইজেশন’ আয়োজনে। বাংলাদেশ সরকার এর আয়োজক। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নই জীবনের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। যদি স্বপ্ন দেখো, তোমার জীবনে একটি বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি স্বপ্ন না দেখো, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, পরিবর্তন কখনোই আসবে না।’
এই সম্মেলনে আমি বিশ্বের তরুণ নেতৃত্বদের কর্মতৎপরতা দেখেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে ‘সবুজ পৃথিবী’ গড়তে আরও প্রত্যয়ী হয়েছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের প্রজন্মের মধ্যেই একটি সবুজ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার সম্ভাবনা আছে। কপ২৯ এ অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে টেকসই ও সহনশীল পৃথিবী গড়তে কাজ করে যেতে চাই।