টেলিভিশনের পর্দায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় দেশ-বিদেশের নানা খবর নিয়ে হাজির হন কেতাদুরস্ত পরিপাটি কিছু মানুষ। সংবাদ উপস্থাপনার এই পেশায় খ্যাতি তো পাওয়াই যায়, কিন্তু রোজগার কেমন? টেলিভিশন চ্যানেলের তিন সংবাদ উপস্থাপক চ্যানেল ২৪–এর ফারাবি হাফিজ, যমুনা টিভির মৌসুমি আক্তার লোপা এবং বাংলাভিশনের সাবেক উপস্থাপক কাজি সাবিরের কাছে এ প্রশ্নেরই উত্তর জানতে চেয়েছিলাম আমরা।
২০১১ সালে সময় টিভির হাত ধরে টিভিতে সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করেন মৌসুমি আক্তার লোপা। এর আগে বাংলাদেশ বেতারে কাজ করেছেন প্রায় ১১ বছর। ২০১৪ সাল থেকে উপস্থাপনা করছেন যমুনা টিভির হয়ে। নানা জায়গায় কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, একেক স্টেশনের বেতন কাঠামো একেক রকম। তাই নির্দিষ্ট করে বলা বেশ কঠিন। তবে একেবারে নতুন হলে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। যাঁরা দীর্ঘদিন এই পেশায় আছেন, তাঁদের বেতন আবার বেশ ভালো। লাখ টাকা কিংবা তারও ওপরে আয় করছেন অনেকেই, জানান লোপা। তিনি বলেন, আয়ের বিষয়টি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভর করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর।
তিনভাবে কাজের সুযোগ, তিনভাবে আয়
‘এই পেশায় তিনভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আয়ের বিষয়টাও নির্ভর করে এই কাজের বিভাজনের ওপর,’ বলেন ফারাবি হাফিজ। প্রথমটি হচ্ছে, চ্যানেলের হয়ে পূর্ণকালীন কাজ। সে ক্ষেত্রে যতগুলো খবরই পড়ুক না কেন, মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হবে।
দ্বিতীয়ত, খণ্ডকালীন বা পার্ট-টাইম। ফারাবি হাফিজ নিজেও চ্যানেল ২৪-এ খণ্ডকালীন সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি ও চ্যানেল মিলে চুক্তি করলেন যে সময় ও সুযোগমতো মাসে ২০টি খবর পড়বেন। এ জন্য খবরপ্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনাকে দেওয়া হবে।’
তৃতীয়ত, চুক্তিভিত্তিক কাজ। এ ক্ষেত্রে ধরা-বাঁধা কোনো নিয়ম থাকবে না। কয়টি খবর পড়তে হবে, তা–ও নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া থাকবে না। চ্যানেল ও আপনার সুবিধামতো মাসে যতটি খবর পড়বেন, সে হিসাবে অর্থপ্রাপ্তি হবে।
ফারাবি হাফিজ জানান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে উপস্থাপকদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। শ্রেণির ভিত্তি করেও আয়ে বেশ-কম হয়। দেখা যায়, ‘এ’ শ্রেণির উপস্থাপক খবরপ্রতি পান পাঁচ হাজার টাকা, ‘বি’ শ্রেণি পান তিন হাজার এবং ‘সি’ শ্রেণি পান দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তাই, এ পেশায় ভালো আয় করতে চাইলে সময়ের সঙ্গে দক্ষ হয়ে ওঠা খুবই জরুরি, বলেন ফারাবি হাফিজ।
শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল টেলিভিশনে উপস্থাপনা করবেন। ২০০৬ সালে সে সুযোগও পেয়ে যান বাংলাভিশনের সাবেক সংবাদ উপস্থাপক কাজি সাবির। সেখানে কাজ করেছেন প্রায় পাঁচ বছর। বলছিলেন এই পেশার পূর্বাবস্থার কথা। সাবির বলেন, সে সময় এ পেশায় আয় এতই কম ছিল যে পূর্ণকালীন সময় ধরে কেউই কাজ করতেন না। অন্য কাজের পাশাপাশি খবর পাঠের কাজটা অনেকটা শখের মতো করতেন অনেকে। প্রথম দিকে সাবির পেতেন আট হাজার টাকা। তবে সময়ের সঙ্গে এ পেশায় পরিবর্তন এসেছে। বিষয়টি খোলাসা করলেন সাবির। তিনি বলেন, শুধু সংবাদ পাঠক, বিষয়টা এখন আর এমন নেই। মূলত নিউজরুমে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাই এখন সেটি উপস্থাপন করছেন। তাঁদের আয়ের কাঠামোও বেশ ভালো। অনেকেই ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকাও আয় করছেন। সে জন্য, আজকাল এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা বলা যাচ্ছে।