সুখ রাজ্যের রাজা সুখবল আর রানি কঙ্কাবতী। এ রাজ্যে কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করতে হয় না। রাজ্যের রাজপুত্র আনন্দ রান্না করতে ভালোবাসে। আর রাজকন্যা সুখবতী তার ঘোড়া মণিলালকে নিয়ে ছুটে বেড়ায়। এ রাজ্যের পাশের সুবর্ণ রাজ্যে রান্না প্রতিযোগিতায় রাজপুত্র আনন্দ অংশ নিতে তার হাতি মৃণালকে নিয়ে রওনা দেয়। কিন্তু পথে হাতির পায়ে কাঠের টুকরো ঢুকে যায়। বোন সুখবতী তার ঘোড়া নিয়ে ভাইকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে সুবর্ণ রাজ্যে নিয়ে যায়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় একমাত্র ছেলে রাঁধুনি আনন্দ। আনন্দ সিদ্ধান্ত নেয় নিজ রাজ্যে ফিরে একটি রান্না শেখানোর স্কুল খুলবে। যেখানে...
প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে সুখ রাজ্যের আনন্দের গল্পটি যখন বলছিলেন, নিশাত সুলতানার চোখেমুখে তখনো আনন্দের ঝিলিক। কিন্তু তাঁকে বাস্তবে ফিরতে হলো। পরিবারে বাবা, ভাই বা ছেলেরা রান্না করছে—এমন দৃশ্য দেখতে বেশির ভাগ শিশুই তো অভ্যস্ত নয়, নিশাত সুলতানা বললেন। আরও বললেন, এই গল্পের মধ্য দিয়ে ১০০ জনের মধ্যে পাঁচজন শিশুর মনোজগতেও যদি একটু ধাক্কা দেওয়া যায়, তাই এমন গল্প লিখছেন তিনি।
নিশাত সুলতানা আনন্দ আর সুখবতীকে নিয়ে ‘রাঁধুনি রাজপুত্র’ গল্পটি লিখেছেন। এ ধরনের আরও গল্প নিয়ে বই প্রকাশ করবে গুফি বুকস। লাইট অব হোপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গুফি বুকস শিশুদের জন্য বিষয়ভিত্তিক বই নিয়ে কাজ করে, যা শিশুদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা শেখানোর পাশাপাশি শিশুদের বাস্তবজীবনের সমস্যা মোকাবিলায় দক্ষতা তৈরিতে কাজ করে।
নিশাত সুলতানা বলেন, শিশুরা যদি বুঝে যায় যে জেন্ডার বা এ ধরনের বিষয়গুলো তাদের শেখানো হচ্ছে, তখন তারা তা শিখতে বা মানতে চাইবে না। তাই গল্পের ছলে বা বিভিন্নভাবে তাদের সামনে বিষয়গুলোকে হাজির করতে হবে।
উত্তরবঙ্গের নওগাঁর মেয়ে নিশাত সুলতানা এবারই প্রথম শিশুদের মনোজগৎকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য লিখছেন, এমন কিন্তু নয়। বিভিন্ন সময়ে তাঁর লেখনীর মূল বিষয়ই হচ্ছে জেন্ডার। ‘প্রথম আলো’সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লেখেন। এ পর্যন্ত তাঁর মোট ১২টি শিশুতোষ বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘নিপুর রঙিন একদিন’ ও ‘সবার বন্ধু পিকু’ বই দুটির জন্য তিনি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পরপর দুই বছর জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। নিশাত বর্তমানে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত।