এখন আবহাওয়াটা বেশ অদ্ভুত। এই বৃষ্টি তো এই চিটচিটে গরম। এই আবহাওয়ায় আদরের পোষ্যকে সুস্থ রাখতে চাই বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা।
থাকার জায়গা
ঢাকার প্রাণিকুল অ্যানিমেল ওয়েলনেস সেন্টারের চিকিৎসক তানভীর আসিফা বলেন, বিড়াল, কুকুরের ক্ষেত্রে বাড়ির সবচেয়ে ঠান্ডা স্থানটি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো। তবে সরাসরি রোদ পড়ে, এমন জায়গায় রাখা যাবে না। বাতাস চলাচলের জন্য জানালা খোলা রাখতে পারেন। জানালায় অবশ্যই নেট থাকতে হবে। নইলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। পাখির ক্ষেত্রে খাঁচার ভেতরে একটা বাটিতে পানি অথবা খাঁচার ওপর একটা কাপড় ভিজিয়ে দিয়ে রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খাঁচার ভেতরটা ঠান্ডা থাকবে।
খাবার ও পানি
এ সময় পোষা প্রাণীর খাবারের রুচি অনেকটাই কমে যায়। রুচি ফেরাতে দৈনন্দিন খাবারের পাশাপাশি ১ থেকে ২ চামচ টক দই দেওয়া যেতে পারে বলে জানালেন তানভীর আসিফা। বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, গাজর ইত্যাদি সেদ্ধ করেও পোষা প্রাণীকে দিতে পারেন। তবে টিনজাত খাবার এবং সব ধরনের শুকনা খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেন তিনি।
এই গরমে পানিশূন্যতা রোধে পোষা প্রাণীর কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন, তা নিয়ে কথা বললেন ঢাকার কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক লুৎফুর রহমান। প্রায় ছয় বছর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তিনি। লুৎফুর রহমান বলেন, প্রাণীর ওজনের ওপর পানির পরিমাণ নির্ভর করবে। ৪০০ মিলিলিটার থেকে শুরু করে ১ লিটার পর্যন্ত পানি একটি বিড়াল গ্রহণ করতে পারে। কুকুরের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৭০০ মিলিলিটার। কুকুর–বিড়াল প্রচলিত পদ্ধতিতে না ঘামলেও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পানি ভূমিকা রাখে। লক্ষ্য রাখতে হবে পোষা প্রাণী যেন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি গ্রহণ করে। অনেক সময় শুধু পানি খেতে না চাইলে মাছ, মাংস সেদ্ধ করা পানি দেওয়া যেতে পারে জানান তিনি।
পাখির খাবারের ক্ষেত্রে তেলজাতীয় বীজের পরিবর্তে সবজি বা শাক দেওয়া যেতে পারে।
পোষা প্রাণীর পানির পাত্র দুই ঘণ্টা পরপর বদলে দেওয়া উচিত।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
পোষা কুকুর বা বিড়ালকে এক দিন পরপরই গোসল করানো যেতে পারে, জানান লুৎফুর রহমান। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন দ্রুতই গা শুকিয়ে দেওয়া হয়। পার্সিয়ান বা বিদেশি জাতের লম্বা পশমের বিড়ালের পশম ছোট করে দেওয়া যেতে পারে। গরমে কিছুটা আরাম পাবে। এ সময় পোষা প্রাণীর গায়ে পরজীবী কীট হয়। এ ধরনের পরজীবী থেকে বাঁচতে গোসলের পাশাপাশি বিড়াল-কুকুরের লোম আঁচড়ে দিতে হবে।
পাখির ক্ষেত্রে খাঁচার ভেতরে একটা বড় বাটিতে পানি দিয়ে রাখা যেতে পারে। পাখি চাইলে নিজেই প্রয়োজনে গা ভিজিয়ে নিতে পারবে।
অসুখ ও তার প্রতিকার
আমরা যেমন অসুস্থ হই, পোষ্যরাও হয়। ওদেরও প্রয়োজন চিকিৎসা এবং আন্তরিক সেবা। গরমে বিশেষ করে পোষা প্রাণীদের পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত শারীরিক তাপমাত্রা, জ্বর এবং হজমে সমস্যা দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ঠান্ডা তোয়ালে দিয়ে গা মুছে দেওয়া যেতে পারে। তবে সরাসরি বরফ না দেওয়ার পরামর্শ দিলেন তানভীর আসিফা।
টিকাদান
টিকা মূলত শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টি করে, শরীরকে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে। ঋতুভেদে নয়, বরং নির্দিষ্ট বিরতিতে বিড়াল–কুকুরকে রোগমুক্ত রাখতে টিকা দিতে হবে। লুৎফুর রহমান বলেন, সাধারণত আট সপ্তাহ বয়স থেকেই বিড়াল এবং কুকুরকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া যায়। ১২তম সপ্তাহে বুস্টার ডোজ দেওয়ার পর প্রত্যেক বছরই পোষা প্রাণীকে টিকা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন পশু হাসপাতাল থেকে টিকা দেওয়া যাবে।