অফিসের বস গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ ধরিয়ে দিয়েছেন কিংবা কোনো অ্যাসাইনমেন্ট ধরিয়ে দিয়েছেন শিক্ষক। তাকিয়ে দেখলেন, ডেডলাইন এক সপ্তাহ পর। মনের অজান্তেই কাজটাকে ঠেলে সরিয়ে দিলেন দূরে। ‘হাতে সাত দিন সময় আছে তো, আস্তেধীরে করা যাবে।’ সময়ের কাঁটা ঘুরে ডেডলাইন সামনে আসতে থাকে। এ দিকে কাজে আর হাত দেওয়া হয় না। এমন একটা সময় চলে আসে, যখন হাতে সময়ও নেই, আবার কাজটাও শেষ করা প্রয়োজন। কোনো কাজ করতে হবে জেনেও তাকে পরবর্তী কোনো একসময়ের জন্য ফেলে রাখাকে বলে প্রোকাস্টিনেশন। প্রোকাস্টিনেশন নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রত্যেকেই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে প্রোকাস্টিনেশন করেছেন, করে যাচ্ছেন। কাজ ফেলে রাখতে রাখতে এমন একটা সময় আসে, যখন কাজটি করতে আর মন সায় দেয় না। কখনো কখনো কাজটিকে ভয়ও পেতে শুরু করেন অনেকে। কিন্তু সময়মতো কাজ তো জমা দিতে হবে। ফেলে রাখা কাজ কীভাবে শেষ করবেন, তাই জেনে নিন।
কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিন
কোনো কাজ শুরু করার আগে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। সেটা অফিসের কাজ হোক কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট, শুরুতেই কাজের পরিধি জেনে নিন। এতে করে কাজের ধরন যেমনই হোক না, কাজ সম্পর্কে আপনার একটি সুনির্দিষ্ট ধারণা থাকবে। কাজের পরিধি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে সহকর্মী বা সহপাঠীর কাছ থেকে শুরুতেই জেনে নিতে পারেন। কাজের পরিধি জানা থাকলে কাজ সম্পর্কে পরিকল্পনা করা অনেকাংশেই সোজা হয়ে যায়।
কাজের পরিকল্পনা করুন
কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকলে কাজের পরিকল্পনা করাও সহজ হয়ে যায়। কাজের পরিকল্পনা করতে নিজেকে প্রশ্ন করুন। কাজটি সম্পন্ন করতে কী কী লাগবে, কীভাবে কাজটি শুরু করবেন, কাজ শেষ করতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে, কাজ করতে গেলে কী কী বাধার সম্মুখীন হতে হবে। এ রকম ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই ভেবে রাখুন। প্রয়োজনে প্রশ্নগুলো ও তার সমাধান লিখেও রাখতে পারেন। এই কাজগুলো নিজের অলস সময়ের ভেতর অতি সহজেই করে ফেলা সম্ভব।
এ ছাড়াও কাজ শুরুর আগেই কাজের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হলে কাজ করতেও কষ্ট কম হয়। শুধু তাই নয়, সেই বাধা-বিপত্তি উতরে কীভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারেন, সে সম্পর্কেও একটি উত্তর আপনার কাছে থাকবে। এতে আপনি কাজটি শুরু করার জন্য মানসিকভাবে তৈরি হয়ে থাকলেন।
ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলুন
কাজের ব্যাপারে ধারণা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা শেষে কাজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করুন। সব চেয়ে ভালো হয়, পরিকল্পনামাফিক যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেভাবে ধরে ধরে কাজ ভাগ করুন। একটি বড় কাজকে ছোট ছোট কয়েকটি কাজে ভাগ করে নিলে কাজের চাপ অনেকাংশেই কমে যায়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কোন কাজটা আগে করলে কাজ সহজে হবে, সেটি বের করুন।
একটি একটি করে কাজ সম্পন্ন করুন। এতে করে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ক্লান্তি আসবে না। এমনকি ছোট ছোট কাজ হওয়ায় কাজও সহজে শেষ হবে। আর একটি করে কাজ শেষ হলে কাজও যেমন এগিয়ে যাবে, তেমনই পরবর্তী কাজ করার অণুপ্রেরণাও জোগাবে।
নিজেকে মোটিভেটেড করুন
গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অলসতা ভর করতেই পারে। যে কারণে যখনই কাজ শুরু করুন না কেন, নিজেকে মোটিভেটেড রাখুন। প্রতিটি ধাপ শেষ করে নিজেকে একটু বিরতি দিন, প্রয়োজনে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। এতে করে পরবর্তী ধাপের জন্য যেমন মোটিভেশন পাবেন, তেমনই ধীরে ধীরে কাজও এগোতে থাকবে।
ডিসট্রাকশন দূর করুন
বর্তমানে যেকোনো কাজের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। একবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলে কখন যে সময় কেটে যায়, হিসাবই থাকে না। তাই কাজের শুরুতে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে, এমন সব কাজ সরিয়ে রাখুন। এতে করে কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজে মনোযোগ থাকবে। এমনকি কাজ শেষ করতেও সুবিধা হবে।
লেখাটা পড়া শেষ? এবার, ফেলে রাখা কাজটি ধরুন।
তথ্যসূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ