গত বছর মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ প্রতিযোগিতার বয়সসীমা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসে। এ বছর থেকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো নারী মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতাকে আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে এবং নারীদের যেকোনো বয়স উদ্যাপন করতেই এই সিদ্ধান্ত।
এ ঘোষণার পর ত্রিশোর্ধ্ব অনেক নারীই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছেন। এই নারীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ডমিনিকান রিপাবলিকের ৪৬ বছর বয়সী হেইডি ক্রুজ। তিনি মূলত ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর। ফিটনেস-সংক্রান্ত ভিডিওর জন্য ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে পরিচিত মুখ। দুই সন্তানের মা হেইডি ছোটবেলা থেকেই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু অল্প বয়সে মা হওয়ায় সেই স্বপ্ন পূরণের পথে আগে কখনো হাঁটা হয়নি। মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের বয়সসীমা তুলে দেওয়ার পর তিনিও ছুটে চলেছেন স্বপ্ন পূরণের পথে।
মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে হেইডি বলেন, ‘অন্যরা যা বলে তা কানে তুলি না। আমার লক্ষ্যগুলোয় মনোনিবেশ করি এবং সেসব অর্জনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মানুষ প্রায়ই তাঁদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা থেকে কথা বলে। কেউ কেউ হয়তো জানেন না যে মিস ইউনিভার্সের শর্তাবলি পরিবর্তিত হয়েছে। সমালোচনা কীভাবে গ্রহণ করতে হয়, তা আমি শিখেছি। আমি অন্যদের তাঁদের মতপ্রকাশ করতে দিই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমিই সিদ্ধান্ত নিই যে আমাকে কী প্রভাবিত করবে বা না করবে।’
৬০ বছর বয়সে মিস ইউনিভার্স বুয়েনস এইরেস খেতাব জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন আলেজান্দ্রা মারিসা রদ্রিগেজ নামের এক আর্জেন্টাইন নারী। ১৮ থেকে ৭৪ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী আরও ৩৪ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে তিনি এই খেতাব জিতেছেন। এটি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জয় নয়। তাঁর এই জয় মিস ইউনিভার্স সুন্দরী প্রতিযোগিতার বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি অঙ্গীকারের বিষয়কে মোটাদাগে দেখিয়ে দেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেস প্রদেশের লা প্লাতা থেকে আসা আলেজান্দ্রা মারিসা আইনজীবী এবং সাংবাদিক। মারিসা তাঁর নিজের বয়সের নারীদের মধ্যে প্রথম, যিনি সৌন্দর্যের জন্য এত মর্যাদাপূর্ণ খেতাব অর্জন করেছেন। তাঁর আচার-আচরণ, কমনীয়তা এবং উজ্জ্বল হাসি বিচারক ও শ্রোতার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে।
মারিসা আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য মিস ইউনিভার্স আর্জেন্টিনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মিস ইউনিভার্স আর্জেন্টিনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলে মারিসা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
মিস ইউনিভার্স বুয়েনস এইরেস খেতাব জেতার পর মারিসা বলেন, ‘আমি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নতুন যুগের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে সম্মানিত। কারণ, আমরা এমন একটি পর্যায়ে যাত্রা করছি, যেখানে নারীরা কেবল শারীরিক সৌন্দর্যই নয়, বিভিন্ন মূল্যবোধেরও বার্তাবাহী।’
মারিসা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, বিচারকেরা আমার মধ্যে আমার প্রজন্মকে প্রতিনিধিত্ব করার আত্মবিশ্বাস দেখতে পেয়েছেন। আমি ২০২৪ সালের মিস ইউনিভার্স আর্জেন্টিনা প্রতিযোগিতার মুকুট জয়ের জন্য লড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
নিউইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মারিসা ৬০ বছর বয়সেও তারুণ্য ধরে রাখতে পারার কৃতিত্ব দেন নিজের জীবনাচরণকে, ‘মূল বিষয় হলো একটি স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ, নিয়মমাফিক খাওয়াদাওয়া আর শারীরিক পরিশ্রম। আর ব্যাপারটা কিছুটা জিনগত।’
মিস ইউনিভার্স বুয়েনস এইরেস প্রতিযোগিতার আরেক আলোচিত প্রতিযোগী ছিলেন ৭২ বছর বয়সী আইরিস আমেলিয়া আলিওতো। পেশায় তিনি নাচের শিক্ষক, অনুবাদক, মডেল ও অভিনেত্রী।
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা করছেন যে কীভাবে আইরিস অ্যামেলিয়ার সাহস, সংকল্প ও অধ্যবসায় একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তাঁদের জন্য, যাঁরা বিশ্বাস করেন, বয়স তাঁদের স্বপ্ন অর্জনের জন্য একটি বাধা।
অন্যদিকে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। অনেকেই মিস আর্জেন্টিনা হিসেবে বয়সী কাউকে দেখতে চান না!
সূত্র: ডিএনএ, হিন্দুস্তান টাইমস, হোলা