চাইলেই কিন্তু নিজের মতো প্রতিবেশী বানানো যায় না বা বদলে নেওয়া যায় না। ভালো প্রতিবেশী পাওয়া নিঃসন্দেহে আশীর্বাদ। তবে ভালো প্রতিবেশী হয়ে ওঠা আরও বেশি সুন্দর। তথাকথিত আধুনিক সমাজে দুটোরই বড় অভাব। লালন সাঁইয়ের গানের কথা ধার করে বলা যায়, ‘আমি এক দিনও না দেখিলাম তারে।’
গ্রামীণ সমাজে এখনো অবশ্য পড়শির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। হয় সুখ-দুঃখের দৈনন্দিন ভাগ-বাঁটোয়ারা। কিন্তু শহুরে জীবনকাঠামোতে পড়শি যেন এক বিমূর্ত ব্যাপার। মুখোমুখি ফ্ল্যাটে বছরের পর বছর বাস করেও কথাবার্তা হয় না। আত্মিক যোগাযোগ তো দূর, সামান্য পরিচয়টুকু হয়ে ওঠে না।
একজন ভালো প্রতিবেশী বন্ধুসুলভ, সহযোগিতাপরায়ণ, পরোপকারী, শ্রদ্ধাশীল ও শান্তিপ্রিয় হয়ে থাকেন। পড়শির নির্বিঘ্ন জীবন বিঘ্নিত হয়, এমন কিছু তিনি করেন না। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকেন। নিজের ঘরে ভালো কিছু রান্না হলে প্রতিবেশীর ঘরে পৌঁছে দেন। বিভিন্ন আয়োজনে-উৎসবে পাড়াপড়শিরাই পেয়ে থাকেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। রোগ, মৃত্যু কিংবা যেকোনো সংকটে-বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসেন। একজন ভালো প্রতিবেশী অবশ্যই একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু।
পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেই প্রতিবেশীর অধিকার নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতিবেশীর ক্ষতিসাধন বা কোনোরূপ দুর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠিন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। মোটামুটি সর্বধর্মেরই সারকথা—প্রতিবেশীকে এমনভাবে ভালোবাসো, যেভাবে তুমি নিজেকে ভালোবাসো।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, উত্তম প্রতিবেশী দিবস। আমেরিকায় ১৯৭০-এর দশক থেকে এটি পালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা অঙ্গরাজ্যের হ্রদ-তীরবর্তী অঞ্চলের বেকি ম্যাটসন নাম্নী একজনের উদ্যোগে দিনটি চালু হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার একটি ঘোষণার মাধ্যমে দিবসটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেন।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে