মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা কিংবা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ হিসেবেই লোকে তাঁকে চিনত। তবে এখন চিন্তাবিদ, মানবহিতৈষী হিসেবেই বিল গেটস বেশি পরিচিত। সম্প্রতি নিজের ব্লগ গেটসনোটসে এই ধনকুবের লিখেছেন তাঁর এ বছর পড়া প্রিয় বইগুলোর কথা।
ছুটির শুভেচ্ছা! আশা করছি আপনি ও আপনার কাছের মানুষের বছরের সবচেয়ে আরামদায়ক সময়টা উপভোগ করছেন। পরিবারের পাশাপাশি কিছু ভালো বইয়ের সঙ্গেও নিশ্চয়ই আপনাদের সময় কাটবে।
আপনি কি কিছু ভালো বইয়ের খোঁজ করছেন? তাহলে আপনাকে আমার কয়েকটা প্রিয় বইয়ের কথা বলতে পারি, যেগুলো এ বছর পড়েছি। যে চারটি বই নিয়ে বলব, সবই কোনো না কোনোভাবে আমাদের চারপাশের পৃথিবীকে অনুধাবনের কথা বলে। ভেবেচিন্তে এমন বিষয় বেছেছি, তা নয়। তবে এই যে বিষয়গুলোর মধ্যে একধরনের মিল পাওয়া গেল, এতে আমার আপত্তি নেই। যে দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তার মধ্যে আসলে এমন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিক।
এমন দুটি বই আছে, যেখানে ভবিষ্যৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান, প্রযুক্তিগত বিশাল অগ্রগতি কীভাবে আমাদের জীবন বদলে দিচ্ছে, এসব বিষয় পেয়েছি।
তালিকায় এমন দুটি বই আছে, যেখানে ভবিষ্যৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান, প্রযুক্তিগত বিশাল অগ্রগতি কীভাবে আমাদের জীবন বদলে দিচ্ছে, এসব বিষয় পেয়েছি। একটি বই বলছে, উত্তর খুঁজতে অনেক সময় অতীতে তাকাই। অতীতের কঠিন সময়গুলোতে আমাদের নেতারা কীভাবে সামাল দিয়েছেন, সেটা ফিরে দেখা একই সঙ্গে স্বস্তিদায়ক ও মুগ্ধকর। চতুর্থ বইটাজুড়ে আছে শুধু বর্তমানের কথা। সমাজের যে অদ্ভুত, অদৃশ্য শিরদাঁড়া আমাদের আগলে রেখেছে, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এই বই সাহায্য করবে।
বোনাস হিসেবে আরও একটা বইয়ের কথা এখানে বলেছি। যদি টেনিসপ্রিয় কারও জন্য বই খোঁজেন, এই বইটার কথা মাথায় রাখতে পারেন। যত বই-ই পড়েন না কেন, আসলে সেটা কখনোই যথেষ্ট হবে না; বিশেষ করে বছরের এই সময়ে।
আমি ডোরিসের বইয়ের বিশাল ভক্ত। তবে তাঁর এই জীবনীগ্রন্থ পড়ার আগে মানুষটার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম না। বইতে মূলত তাঁর প্রয়াত স্বামীর গল্প গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি ছিলেন একজন শাসন-প্রণালি বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে অশান্ত সময়টাতে যিনি প্রেসিডেন্ট কেনেডি ও প্রেসিডেন্ট জনসনের বক্তৃতালেখক হিসেবে কাজ করেছেন। ডোরিস সত্যিই একজন অসাধারণ লেখক। বইতে তাঁর প্রেমের অধ্যায়টা যতখানি আকর্ষণীয়, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও কেনেডিকে হত্যা করার ঘটনাটাও ঠিক ততটাই।
এ সময়ের শিশুদের যাঁরা বড় করছেন, যাঁরা তাদের সঙ্গে কাজ করেন, কিংবা তাদের পড়ান—এই বই তাঁদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। বইটা পড়ে আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। মা-বাবার অজ্ঞাতে নানা জায়গায় ঘুরঘুর করতাম, কখনো কখনো বিপদেও পড়তাম, সেই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে আজকের আমি বানিয়েছে। হাইট বর্ণনা করেছেন, খেলাধুলায় মেতে থাকা ছেলেবেলা আর ফোন নিয়ে মেতে থাকা ছেলেবেলার মধ্যে পার্থক্য কোথায়, কীভাবে আজকের শিশুদের আবেগ-অনুভূতির ধরন বদলে যাচ্ছে। একটা ব্যাপার ভালো লেগেছে। তিনি শুধু সমস্যার কথাই বলেননি। বরং সত্যিকার সমাধানও দিয়েছেন।
মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা কোনো অস্বাভাবিক পাইপ দেখে কখনো কি ভেবেছেন, ‘এটা কোথা থেকে এল?’ যদি ভেবে থাকেন, এই বই আপনার জন্যই। হিলহাউজ এখানে কেব্ল বক্স থেকে শুরু করে ট্রান্সফরমার কিংবা সেলফোনের টাওয়ারের মতো রহস্যময় কাঠামোগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। বর্ণনা করেছেন, এগুলো কীভাবে কাজ করে। এই বই আপনার কৌতূহল মেটাবে। এমন সব প্রশ্নের উত্তর দেবে, আপনি জানতেনও না এসব প্রশ্ন আপনার মনে ছিল।
বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কে মুস্তফা খুব গভীর জ্ঞান রাখেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বিজ্ঞানের আরও সব অত্যাধুনিক নিদর্শন, যেমন জিন সম্পাদনা—এসব কীভাবে আমাদের সমাজ আমূল বদলে ফেলবে, সেটা তিনিই আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভালো বর্ণনা করেছেন। লিখেছেন, কীভাবে এসব প্রযুক্তির বিপদগুলো এড়িয়ে আমরা এর সুবিধাগুলোকে স্বাগত জানাতে পারি। যদি এআইয়ের উত্থানটা বুঝতে চান, তাহলে এই বই আপনার জন্য সেরা।
এই বইটা সবার জন্য নয়। বেশ দামি। ওজনটাও ছোটখাটো একটা কুকুরের সমান। কিন্তু আপনি বা আপনার প্রিয়জন, কেউ যদি রজার ফেদেরারের ভক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এই বই পড়ে জীবন ও ক্যারিয়ার সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিটা জানতে পারবেন। আমার ধারণা ছিল টেনিসে রজার ফেদেরার ইতিহাস আমি মোটামুটি জানি। কিন্তু বইটা পড়ে ভুল ভাঙল। আরও অনেক জানলাম। বিশেষ করে তাঁর শুরুর দিককার কথা। বইতে এমন অনেক ছবি আছে, যা আগে কখনো দেখিনি। টেনিসভক্তদের জন্য এই বই একটা উপহার হতেই পারে।
সূত্র: গেটসনোটস ডট কম