এত এত পাসওয়ার্ড মনে রাখব কীভাবে

একেক পাসওয়ার্ড হতে হয় একেক রকম
একেক পাসওয়ার্ড হতে হয় একেক রকম

ওয়েব সিরিজ মহানগর-এ অভিনেতা মোশাররফ করিম ঘুরেফিরে বারবার বলেন, ‘দুটো জিনিস মনে রাখবেন…’। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, শুধু দুটো জিনিস মনে রাখলে কি চলে! এক পাসওয়ার্ডই তো মনে রাখতে হয় আধডজন! ফেসবুকের পাসওয়ার্ড, মেইলের পাসওয়ার্ড, ব্যক্তিগত কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড, ভিন্ন ভিন্ন অ্যাপের পাসওয়ার্ড…কত ঝক্কি!
আবার একেক পাসওয়ার্ড হতে হয় একেক রকম। কখনো শুধু ৪ ডিজিটের সংখ্যা, কখনো আবার সংখ্যা-চিহ্নযুক্ত ৮ ডিজিট, কোথাও আবার পাসওয়ার্ড হতে হয় ৬ ক্যারেক্টারের। আবার সব জায়গায় একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতেও নিষেধ করেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এখন এত এত পাসওয়ার্ড মনে রাখব কী করে?

যা সহজেই মনে রাখা যায়

এমন পাসওয়ার্ড নির্বাচন করুন, যা সহজেই আপনার মনে থাকবে। এই বিশেষ শব্দটি তৈরি করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সহজেই অনুমেয় কোনো পাসওয়ার্ডের কারণে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে। সাধারণত ছোট শব্দ বা শব্দগুচ্ছ সহজে মনে রাখা যায়। কিন্তু সেই ছোট শব্দ নিরাপদ না-ও হতে পারে। কমপক্ষে ৮ অঙ্কের এবং বিভিন্ন ধরনের বর্ণ ও চিহ্ন মিলিয়ে এটি তৈরি করা উচিত। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির জন্য বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করা যায়। প্রথমত, কোনো বিশেষ ঘটনা বা গল্পের মাধ্যমে মনে রাখা। ধরুন, আপনার বাবা আপনাকে ২০১০ সালে একটা নকিয়া ফোন উপহার দিয়েছিলেন। ইংরেজিতে আপনি সেটাকে এভাবে পাসওয়ার্ডে রূপান্তর করতে পারেন— 10BaGiNokMo:D। এই পাসওয়ার্ডটি কীভাবে হলো? শব্দগুলোর ইংরেজি রূপ অনুসারে 2010 থেকে 10, Baba থেকে Ba, Gift থেকে Gi, Nokia থেকে Nok, Mobile থেকে Mo এবং সবশেষে খুশি হওয়ার ইমোজি: D নিয়ে এটা তৈরি হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, প্রতিদিন আমাদের সঙ্গে ঘটে, এমন কোনো বিষয় আমরা পাসওয়ার্ড হিসেবে ঠিক করতে পারি। যেমন বাসে যেতে একজনের প্রতিদিন হয়তো ৮০ টাকা খরচ হয়। তিনি এভাবে পাসওয়ার্ড ঠিক করতে পারেন—  BusBhara:80#kosto। অর্থাৎ বাংলা বাক্যটির ‘বাংলিশ’ রূপ ব্যবহার করা হয়েছে৷ এ ছাড়া জন্মসাল দিয়ে, ইংরেজি বাক্য লিখে সেটি থেকে স্বরবর্ণ বাদে বাকি বর্ণগুলো দিয়ে একটি বড় শব্দ তৈরি করেও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বানানো যায়।

এত এত পাসওয়ার্ড মনে রাখাই মুশকিল

বেশি পাসওয়ার্ড, বেশি ঝামেলা

আপনার হয়তো ২০টি অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি কি ২০টি পাসওয়ার্ড দেবেন? অর্থাৎ প্রতিটি পাসওয়ার্ডই আলাদা দেবেন। এটি খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বরং এই সংখ্যাটা সীমিত রাখাই ভালো৷ সব মিলিয়ে ৫-৬টি পাসওয়ার্ড ঘুরেফিরে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যেসব ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইট আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেখানে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করাই শ্রেয়। যেমন ফেসবুক এবং যে মেইল দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে—দুটির পাসওয়ার্ড এক রাখবেন না।

পাসওয়ার্ড খাতায় লিখে রাখুন

ফোর্বস ম্যাগাজিনে ২০২১ সালের একটি জরিপ প্রকাশিত হয়। বিষয় ছিল—পাসওয়ার্ড মনে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় কোনটি? যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ১ হাজার ৬০০ মানুষের মধ্যে পরিচালিত এ জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শতকরা ৫৯ ভাগ মানুষ নিজের স্মৃতির ওপরই ভরসা রাখেন। পরের ৩৩ ভাগ মানুষের মতে, পাসওয়ার্ড খাতায় লিখে রাখাই শ্রেয়।

আপনি চাইলে পাসওয়ার্ডগুলো খাতায় লিখে রাখতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে বাসায় একটি নির্দিষ্ট ও নিরাপদ জায়গায় খাতাটি রাখতে হবে। এমন যেন না হয়, পাসওয়ার্ড যে খাতায় লিখে রেখেছেন, সেই খাতা কোথায় রাখা আছে, সেটাই আপনি ভুলে গেছেন! মোবাইল বা কম্পিউটারের নোটবুকে লিখে রাখার চেয়ে খাতায় লেখা উত্তম। কারণ, হ্যাক করে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে পাসওয়ার্ড জেনে নেওয়া সম্ভব।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার

যেকোনো পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজার হতে পারে ভালো সমাধান। একটি সঠিক ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বানাতে সাহায্য করার পাশাপাশি অসংখ্য পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করতেও এ ধরনের অ্যাপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম্পিউটার বা ফোনে অ্যাপ রাখলে পাসওয়ার্ড লেখার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ, প্রয়োজন হলেই দেখে নেওয়া যাবে পাসওয়ার্ড। জনপ্রিয় কয়েকটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার হলো—বিটওয়ার্ডেন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার, লাস্টপাস, লগ মি ওয়ান্স ইত্যাদি। ওপেন সোর্স হওয়ায় বিটওয়ার্ডেনের নিরাপত্তা অন্যদের তুলনায় ভালো। বিটওয়ার্ডেন, লাস্টপাসের মতো পাসওয়ার্ড ম্যানেজারগুলো ফায়ারফক্স, গুগল ক্রোমসহ জনপ্রিয় প্রায় সব ব্রাউজারে ব্যবহার করা যায়। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসে অ্যাপ হিসেবেও ব্যবহার করার সুযোগ আছে। বিনা মূল্যে প্রাথমিক সুবিধা নেওয়া গেলেও সব রকম সুবিধা পেতে কিনতে হবে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন। মোটাদাগে এসব অ্যাপ দীর্ঘ সময়ের জন্য নিরাপদ হিসেবেই ধরা হয়।