চকচক করলে যেমন সোনা হয় না, ঠিক তেমনই দেখতে অবিকল টাকার মতো হলেই টাকা হয় না। জাল টাকার জালে আটকা পড়েছেন তো ঠকেছেন! এমন যেন ঠকতে না হয়, তার জন্যই এই লেখা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক সাহিদুল ইসলাম জানান, টাকার নকল নোট থেকে সতর্ক থাকতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব ব্যাংক শাখায় সতর্কতামূলক দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। সেসব খেয়াল করলে জাল টাকা নিয়ে প্রতারিত হতে হবে না।
নিরাপত্তা সুতা
১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোটের বাঁ পাশে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার, ১০০০ টাকার নোটে ৫ মিলিমিটার চওড়া অনেকটা মাথায় বেণির মতো প্যাঁচানো নকশার নিরাপত্তা সুতা আছে। ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোটের সুতার এক অংশ ক্রমে লাল হতে হতে সবুজ রঙে পাল্টে যায়। আর অন্য অংশে ছাপানো থাকে টাকার মান। ১০০০ টাকার নোটের সুতার এক অংশ ক্রমে সোনালি থেকে সবুজ রঙে পরিবর্তন হয়।২০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুতার অংশে নোটের মান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ছাপানো আছে। নোটগুলো নাড়াচাড়া করলে হলোগ্রাফিক ইমেজের চকচকে ভাব চোখে পড়ে। নকল টাকার ক্ষেত্রে যা সম্ভব হয় না।
লুকানো ছাপার অক্ষর
১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের যে পিঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আছে, তার নিচের অংশে মাঝখানে বিভিন্ন নকশার আড়ালে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ সংখ্যাটি ছাপানো আছে। নোটটি একটু কাত করে ধরলে এসব সংখ্যার উপস্থিতি বোঝা যায়। আর ২০০ টাকার ওই অংশে ইংরেজি অক্ষরে লেখা আছে 'TWO HUNDRED TAKA'।
খুব সূক্ষ্ম ফন্টে (অক্ষরে) লেখা
১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের পেছনের পিঠের নিচের দিকে বাঁ পাশে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ সংখ্যা মানের সঙ্গে BANGLADESH BANK লেখা আছে।
২০০ টাকার নোটের এক্কেবারে বাঁ পাশের নকশার মাঝে মাঝে অতি ছোট্ট অক্ষরে 200 লেখা আছে। তবে এতটাই সূক্ষ্ম সেই অক্ষর যে খালি চোখে দেখা মুশকিল। আতশী কাচ বা উন্নতমানের স্মার্টফোনের ক্যামেরা নোটের ওপর ধরে যথেষ্ট পরিমাণ জুম করলে দেখা সম্ভব। জুম করলেও এই সূক্ষ্ম ফন্ট ফাটবে না, কিন্তু নকল টাকার ক্ষেত্রে ফেটে যাবে।
খসখসে ভাব
সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, খালি চোখে জাল টাকা শনাক্ত করা একটু জটিলই বটে। তবে খুব সহজ একটি উপায় হলো স্পর্শ। হাতে নিয়েই বোঝা যায়! আসল নোট কিছুটা খসখসে হয়। অন্য দিকে ছাপানো জাল টাকা মসৃণ থাকে।
লেখায় রঙের পরিবর্তন
১০০ ও ১০০০ টাকার নোটের এদিক-ওদিক পরপর মেলে ধরলে প্রতি কোনায় থাকা সংখ্যার রং হয় সোনালি থেকে সবুজ এবং ৫০০ টাকার ক্ষেত্রে রং হয় ম্যাজেন্টা থেকে সবুজ। আবার ১০০০ টাকার নোটের পেছনে বাঁ দিকে হালকা নীলচে রঙের ইংরেজি অক্ষরে নিচ থেকে ওপরের দিকে লেখা আছে ‘BANGLADESH BANK’লেখাটি। নোটটি এদিক-ওদিক করে নেড়েচেড়ে দেখলে চোখে পড়বে তা।
স্পার্ক বা ঠিকরে পড়া আলো
২০০ টাকার নোটে ওপরে ডান কোনায় সোনালি থেকে সবুজ রং ছড়ানো চৌম্বকীয় কালি ব্যবহার করা হয়। ফলে এদিক-ওদিক কাত করলে এটি জ্বলজ্বল করতে থাকে। একই সঙ্গে একটি উজ্জ্বল আলোর রেখা ওপর-নিচে ওঠানামা করে।
আরও কিছু বিষয়
আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিবেশ ভবনের অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার তানভীর আহমেদ জানান, নকল টাকা সাধারণ কাগজে তৈরি হয় বলে নরম ধরনের হয় নোট। আসল টাকা বিশেষ ধরনের কাগজে তৈরি হয় বলে নোট হয় একটু শক্ত।
নকল নোটে জলছাপ হয় অস্পষ্ট ও নিম্নমানের। আসল নোটে স্পষ্ট জলছাপ রয়েছে।
আসল নোটের বাঁ পাশে বিশেষ নকশা ছাপানো থাকে। নোটটি ঘুরিয়ে আলতোভাবে মোড়ানো হলে বাঁ পাশের অংশটি ডান পাশের নকশার সঙ্গে মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করবে। নকল নোটে এ রকম মেলানো কঠিন।
আলট্রাভায়োলেট রশ্মির ডিটেক্টর মেশিনের ব্যবহার
জাল টাকা শনাক্তের অন্যতম উপায় হচ্ছে ডিটেক্টর মেশিনের আলট্রাভায়োলেট লাইটের ব্যবহার। এই লাইটের মাধ্যমে জাল টাকা শনাক্ত করা খুবই সহজ। আসল নোটে এই লাইটের আলো ধরলে নোটের ওপর রেডিয়ামের প্রলেপ জ্বলজ্বল করে উঠবে। জাল নোটে এমনটা হয় না।