ছোট্ট বাবুটার ছবি পোস্ট করলে কত লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার পাওয়া যায়!
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মা-বাবারা নিজেদের ছবি তো দেনই, তাঁদের কোমলমতি সন্তানের ছবিও হরহামেশা শেয়ার করে থাকেন। কিন্তু এই অভ্যাস যে কতটা ভয়ানক ফলাফল বয়ে আনতে পারে, তা একবারও ভাবেন না অভিভাবকেরা। চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার সন্তানের কোন ধরনের ছবি অনলাইনে দেবেন না, কেন দেবেন না।
আপনার অবস্থান জানা যায়
কখনো আপনার অবস্থান উল্লেখ করে ছবি শেয়ার করবেন না। অবস্থান উল্লেখ করা আপনার কাছে স্বাভাবিক বিষয় মনে হলেও সেটা আপনার বা আপনার সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আপনার বাড়ি বা অবস্থান যে কারও জন্য হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই তথ্য ব্যবহার করে আপনার সন্তানের পরিচয় চুরি পর্যন্ত হতে পারে। পরিচয় চুরি মানে, কারও নাম–পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কাজে ব্যবহার করা। ছবির অবস্থানের সূত্র ধরে সরাসরি কিংবা ডিজিটাল কিডন্যাপ পর্যন্ত হতে পারে আপনার সন্তান। ডিজিটাল কিডন্যাপ হচ্ছে ছবি বা তথ্য ব্যবহার করে কারও সন্তানকে নিজের বলে দাবি বা প্রচার করা।
ব্যক্তিগত পরিচয় বহন করে এমন কিছু শেয়ার করবেন না
আপনার সন্তানের হাতের লেখার কোনো ছবি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে দিলেন। সেখানে লেখা ‘আজ আমার পঞ্চম জন্মদিন’। আপনার সন্তান বড় হচ্ছে! আপনার কাছে হয়তো ব্যাপারটা খুবই উপভোগ্য।
আবার ধরুন, আপনার গাড়ির লাইসেন্স পাওয়ার খুশিতে লাইসেন্স কার্ডের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। একবার ভাবুন তো, ওই কার্ডের মধ্যে আপনার কী কী তথ্য যাচ্ছে। এসব তথ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে আপনার ও আপনার সন্তানের জীবনকে। জন্মতারিখ, জন্মস্থান বা পুরো নাম আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বা স্পর্শকাতর বিষয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। ভাবুন, আপনার সন্তানের এই তথ্যগুলো আগে থেকেই কেউ সংগ্রহ করে রেখেছে, যাতে তারা এর অপব্যবহার করতে পারে।
শিশুদের নগ্ন ছবি
বাচ্চাকে গোসল করানোর সময় হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে পানি ছিটানো—কী চমৎকার দৃশ্য! তাই না? তবে এ রকম খালি গায়ে কিংবা সামান্য কাপড় পরা অবস্থায় কোনো ছবি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। শুধু নিজের বাচ্চা নয়, অন্যের বাচ্চার ছবিও শেয়ার করতে হলেও ওই শিশুর অভিভাবকের অনুমতি নিন। কারণ, এসব ছবি বা ভিডিও ভুল হাতে পড়ে গেলে সেগুলো নিয়ে অনেক খারাপ কাজে ব্যবহার হতে পারে। আবার আপনার সন্তানও বড় হওয়ার পর তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে ছোটবেলার নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি। কিন্তু তখন আর আপনার কিছু করার থাকবে না। কেননা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
সন্তানের দুর্বলতা বা বিব্রতকর মুহূর্ত
সন্তানের অসুস্থ অবস্থার ছবি শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য ও সমবেদনা অর্জন করতে পারেন। তবে এটি আপনার সন্তানকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে, একবার ভেবে দেখুন।
আপনার সন্তানের কাছে ব্যাপারটা বিব্রতকর হতে পারে। বাচ্চার সর্দি, হাসপাতালে ইনজেকশন নেওয়ার সময় সাহসী ভঙ্গির ছবি তোলা বা সেগুলো প্রচার করার আগে ভাবুন, আপনার সন্তান কি ভবিষ্যতে অনলাইনে নিজের এই ছবি দেখতে চায়? এই বিষয়গুলোর মতো যেকোনো অর্জনের ছবিও আপনার সন্তানকে ভবিষ্যতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।
সন্তানের অভিনয়ের ছবি
আপনার সন্তানের বুদ্ধিবৃত্তিক বা নায়কোচিত কোনো অভিনয় বা আচরণের ছবি বা ভিডিও দেওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। আপনার কাছে ব্যাপারগুলো আনন্দের হতে পারে। কিন্তু এই ধরনের আচরণ ভবিষ্যতে আপনার সন্তানকে বিপদে ফেলতে পারে। অভিভাবক হিসেবে সন্তানের যেকোনো বিষয় অনলাইনে শেয়ার করার অধিকার আপনার আছে। তবে সেটি দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার সন্তানকে আপনার কারণে যেন শেমিংয়ের শিকার হতে না হয়!
সন্তানের আচরণগত ত্রুটি
বিছানায় প্রস্রাব করা হোক বা পড়তে শেখার সমস্যা অনেকের হতেই পারে। কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এসব কিছুর ছবি তুলবেন না এবং শেয়ারও করবেন না। এমনভাবে ক্যাপশনও দেবেন না বা কিছু পোস্টও করবেন না, যাতে আপনার সন্তানের দুর্বলতা প্রকাশ পায়! এগুলো আপনার সন্তানকে উত্ত্যক্ত ও উত্পীড়নের দরজা খুলে দিতে পারে। নাম–পরিচয় প্রকাশ না করে আপনি সমস্যার সমাধান চাইতে পারেন।
সন্তানের খারাপ ফলাফল শেয়ার করবেন না
সন্তান পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করতে না পারলে কিছু মা–বাবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের দুঃখ শেয়ার করেন। এ বিষয়টি আপনার সন্তানকে মারাত্মক নেতিবাচক মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য করে। তারা চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই অনলাইনে শেয়ার করে সন্তানকে লজ্জায় না ফেলে তাকে আগামী দিনে ভালো করতে উদ্বুদ্ধ করুন। সময় দিন।
অনলাইন রিক্রুটমেন্ট সাইট ক্যারিয়ার বিল্ডারের মতে, প্রায় এক–পঞ্চমাংশ নিয়োগকর্তা চাকরিপ্রার্থীদের ব্যাপারে জানার জন্য তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইতিবৃত্ত ঘেঁটে দেখেন। তাই আপনার সন্তানের এই ছবিগুলো শেয়ার করে তাঁর ভবিষ্যতকেও ঝুঁকিতে ফেলবেন না।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট