কারও কাছে খাবার মানে মৌলিক চাহিদা। কারও কাছে খাদ্য হলো ভালোবাসা। কেউ আবার খাদ্যকে পরিণত করেছেন শিল্পে। এমন খাবারও আছে, যা মুখ তুলতে পকেট থেকে চলে যাবে লাখ টাকা। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খাবারের তালিকায় স্থান করে নেওয়া কিছু খাবারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
ব্যয়বহুল আর সুস্বাদু খাবারের তালিকা করলে তাতে শুরুর দিকে থাকবে ক্যাভিয়ারের নাম। ক্যাভিয়ার মূলত একধরনের সামুদ্রিক মাছের ডিম। বেলুগা স্টার্জেন মাছ থেকে পাওয়া যায় পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু ক্যাভিয়ার। শুধু কাসপিয়ান ও কৃষ্ণসাগরে এই মাছ পাওয়া যায়।
অন্যান্য মাছের মতো মৌসুমভেদে ডিম পাড়ে না এই মাছ। একটি বেলুগা স্টার্জেন পূর্ণবয়স্ক হতে সময় নেয় প্রায় ২০ বছর। এরপর মাছটিকে হত্যা করে তার পেট থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয়। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, এক কেজি অ্যালবিনো ক্যাভিয়ারের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৩৪ হাজার ৫০০ ডলার বা ৩৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা, যা সংগ্রহ করা হয়েছিল ১০০ বছর বয়সী একটি বেলুগা স্টার্জেনের পেট থেকে।
পাখির ডিম তো আমাদের নিয়মিত খাদ্য, পাখির মাংসও খেয়েছেন অনেক। কিন্তু পাখির বাসা? কখনো পাখির বাসা খাওয়ার কথা ভেবেছেন? পৃথিবীর উন্নত দেশে নিয়মিতই খাওয়া হয় সুইফটলেট পাখির বাসা। এই পাখির বাসা অবশ্য অন্যান্য পাখির বাসার মতো নয়। এই পাখি লালা দিয়ে তার বাসা তৈরি করে। সেখান থেকেই ব্যতিক্রমী একটি স্যুপ তৈরি করেছেন চীনা রন্ধনশিল্পীরা, যা বার্ডস নেস্ট স্যুপ নামে পরিচিত। এটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল খাবারগুলোর একটি। লাল, হলুদ ও সাদা—তিনটি ভিন্ন রঙে পরিবেশন করা হয় এই স্যুপ। পাখির বাসার এক বাটি স্যুপ খেতে আপনাকে খরচ করতে হবে ১০ হাজার ডলার বা ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
যে মসলার টানে দূরদূরান্ত থেকে এশিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন বণিকেরা, সেই বিখ্যাত মসলার নাম জাফরান। ফুল থেকে সংগৃহীত জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা হিসেবে পরিচিত। শরতের শুরুতে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য জাফরান ফুল ফোটে। আর সেখান থেকেই বছরের সব জাফরান সংগ্রহ করে রাখা হয়। খাবারের স্বাদ ও রং বৃদ্ধির জন্য জাফরান ব্যবহার করা হয়। প্রতি কেজি জাফরানের মূল্য ১০ হাজার ডলার বা ১০ লাখ টাকা।
শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন, ভাবছেন, কালো তরমুজ তো বাজারেই পাওয়া যায়...এই তো সেদিন দোকান থেকে ১০০ টাকায় কিনে আনলাম! পার্থক্যটা জাতে। পৃথিবীতে প্রায় ১ হাজার ২০০ প্রজাতির তরমুজ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে দামি জাত হলো ডেনসুক ব্ল্যাক তরমুজ। এই জাতের তরমুজ শুধু জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের উত্তরাঞ্চলেই পাওয়া যায়। তিন থেকে চার মাস কঠোর পরিশ্রমের ফসল এই তরমুজ। প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হয় প্রায় ৬ হাজার ডলার বা ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়।
সাদা ট্রাফলস মূলত ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বেশি জন্মাতে দেখা যায়। তবে এর বিলাসিতা প্রকাশ পায় এর সংরক্ষণ প্রণালি থেকে। ফ্রিজে এই ট্রাফলস সংরক্ষণ করা যায় না। বরং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় একে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। বন্য পরিবেশে বসন্তকাল ও বর্ষাকালে এই মাশরুম জন্মায়। মাটির নিচে জন্মায় বলে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না এই মাশরুম। যে কারণে এটি খুঁজে পেতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর বা শূকর ব্যবহার করা হয়। প্রজাতিভেদে প্রতি কেজি ট্রাফলসের দাম তিন থেকে চার লাখ টাকা।
আয়াম সিমানি ইন্দোনেশিয়ার বিরল জাতের মুরগি। জিনগত পরিবর্তনের কারণে এই মুরগির পালক থেকে শুরু করে মাংস, জিহ্বা—সবকিছুর রংই কালো। শুধু রক্তের রং লাল। ইন্দোনেশিয়ায় সহজলভ্য হলেও ইন্দোনেশিয়ার বাইরে এর দাম বেশ চড়া। বিভিন্ন দেশে এটি স্পোর্টস চিকেন নামেও বিখ্যাত। ইন্দোনেশিয়ায় এই বিরল মুরগি কিনতে গেলে আপনাকে খসাতে হবে ২০০ ডলার। অন্যদিকে, দেশের বাইরে তার দাম বেড়ে হয় এক থেকে দেড় হাজার ডলার বা ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
এক কাপ কফির দাম কত হতে পারে? রাস্তার পাশে কোনো দোকান থেকে কিনলে ২০ টাকা, আর নামীদামি কোথাও গেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কোপি লুয়াক নামক এই কফির প্রতি কাপের মূল্য ১০০ ডলার বা প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি কফির ক্যান কিনতে খরচ করতে হবে ৭০০ ডলার বা ৭০ হাজার টাকা। কোপি লুয়াক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল কফি। এটি গোল্ডেন কফি বিন থেকে তৈরি করা হয়। এশিয়ান পাম সিভেট নামের বিড়ালের মল থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয় কফির বীজ। এ ধরনের বিড়াল পাওয়া যায় একমাত্র ইন্দোনেশিয়ায়।
জাপানের তাম্বা অঞ্চলে জন্মানো একধরনের মাশরুম হলো মাতসুতাক। মিষ্টি ও মসলাদার স্বাদের জন্য বেশ জনপ্রিয় এই খাবার। বছরে মাত্র একবার, বিশেষত শরৎকালে জন্মায় এই মাশরুম। মজার ব্যাপার হলো, এই মাশরুম চাইলেও যেকোনো জায়গায় জন্মানো সম্ভব নয়। বরং একটি নির্দিষ্ট জাতের রেড পাইনগাছের মূল থেকে জন্মায় মাশরুমগুলো। স্বাভাবিকভাবেই এই জাতের মাশরুমের চাহিদাও অনেক বেশি। প্রতি কেজি ৬০০ ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া