ঢাকার জিনজিরায় বড় হয়েছেন মিজানুর রহমান। স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতি ও পশুপাখির কাছাকাছি থাকার সুযোগ তাঁর হয়নি। ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মনটা খুশিতে ভরে যায়। ৭৫৩ একরের সুবিশাল সবুজ ক্যাম্পাস। মনে মনে সব সময় এমন ক্যাম্পাসই তো চেয়েছেন। কিন্তু মিজানুর লক্ষ করেন, বর্ষাকালে হলগুলোতে অনেক সাপ মারা পড়ে। সেই ছবি আবার ফলাও করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে প্রচার হয়। মিজানুর তখন সাপ–সম্পর্কিত বিভিন্ন সচেতনতামূলক লেখা ও পোস্টার বানাতে শুরু করেন, বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন। অধিকাংশ মানুষ তাঁর এই প্রচারণাকে ভালোভাবে নিত না। এ কারণে একের পর এক আসতে থাকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তাঁকে ‘ফেসবুকযোদ্ধা’ বলে কটাক্ষ করে। মিজানুর বুঝলেন, এভাবে হবে না। মাঠেই নামতে হবে। এর পরই শুরু করেন সাপ উদ্ধারের কার্যক্রম।
এ পর্যন্ত শতাধিক সাপ উদ্ধার করেছেন মিজানুর। এর মধ্যে বিষধর খৈয়াগোখরা, পদ্মগোখরা, কালাচ বা পাতি কালকেউটেসহ রাসেলস ভাইপারও (চন্দ্রবোড়া) আছে। মিজানুর একটা বিষয় পরিষ্কার করলেন, ‘সাপ ধরা আর সাপ উদ্ধার—দুটো আলাদা জিনিস। আমি হাঁটছি, একটা ঝোপে সাপ দেখলাম, একটা পুকুরে সাপ দেখলাম, আর ধরে ফেললাম; এটা করা যাবে না। সাপসহ সব বন্য প্রাণী মানুষকে এড়িয়ে চলে। কিছু কারণবশত মাঝেমধ্যে এরা লোকালয়ে চলে আসে। তখনই আমরা সাপ ও মানুষের সংঘাত কমাতে সাপটিকে উদ্ধার করি। উদ্ধারের পর নিরাপদ কোথাও অবমুক্ত করি।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, একাডেমিক ভবন থেকে যেমন মিজানুর সাপ উদ্ধার করেছেন; আবার সাপের জন্য পাবনা, নওগাঁ, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকায় গিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নাজমুল হোসেন, ব্যবস্থাপনা অধ্যয়ন বিভাগের হৃদয় ইসলাম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সামিত বিন রহমান ও সৌম্য চিরন্তন খান। ব্যবস্থাপনা অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতক মিজানুর জানান, তাঁর উদ্ধার করা বেশির ভাগ সাপই খৈয়াগোখরা। এই সাপের মূল খাবার ইঁদুর। অনেক সময় অন্য সাপকেও খেতে দেখা যায়। এমনকি রাসেলস ভাইপারও খেয়ে থাকে। বিষধর হলেও খৈয়াগোখরা উদ্ধার করা সহজ বলে মনে করেন মিজানুর। কেন? ‘কারণ, এরা ছোটাছুটি কম করে। বিপদ টের পেলে সেই জায়গাতেই ফণা তুলে দাঁড়িয়ে যায়। এতে সহজে বাগে আনা যায়।’