মা-বাবার প্রথম সন্তানকে চমৎকার জীবন্ত খেলনার সঙ্গে তুলনা করেছেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। আসলেই তা–ই। প্রথম সন্তান হওয়ার সুবাদে সবার সর্বোচ্চ মনোযোগ, গুরুত্ব আর আদরযত্ন পেয়ে থাকে বড় সন্তানটি। ছোট সন্তান এসব তো পায়ই, পাশাপাশি পেয়ে থাকে অবাধ প্রশ্রয়। ছোট সন্তান মানেই যেন নির্ভার, নিশ্চিন্ত; গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ানো জীবন। আর মেজ সন্তান? এসব পারিবারিক ভালোবাসাবাসি-আদরযত্ন থেকে যেন অনেকটাই দূরে। বড় আর ছোটর মাঝে যে সংসারে আরেকটা ছেলে বা মেয়ে আছে, পরিবারের লোকজন এটা যেন অনেক সময় ভুলেই যান। অবশ্য পরিবারভেদে ভিন্নতা থাকে। সব পরিবারেই যে মেজ সন্তান অবহেলিত হয়, এমন নয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেজ সন্তান বেড়ে ওঠে কিছুটা অলক্ষ্যে, আড়ালে-আবডালে। অনেকটা নিজের মতো। একে বলা হয় ‘মিডল চাইল্ড সিনড্রোম’।
ব্যাপারগুলো তাদের মানসিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে প্রভাব ফেলে। মানসিকভাবে বেশ দৃঢ় হয় তারা। অবচেতনে বুঝে নেয় নিজের দায়িত্ব। তারা হয়ে থাকে দিলখোলা, সহানুভূতিশীল, আপসকামী ও শান্তিপ্রিয়। সাংসারিক নানা বিরোধ, জটিলতা ও বিপর্যয় সামলানোর ক্ষেত্রে অন্য ভাইবোনদের চেয়ে তারা একটু বেশিই পারঙ্গম হয়। অপেক্ষাকৃত সৃজনশীল ও সাহসী হয়ে থাকে। যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার শক্তি থাকে অনেক বেশি। তারা মিশুক, পরোপকারী ও বহির্মুখী। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার প্রবণতা তাদের বেশি। তাদের ভেতর জটিলতা কম। কোনো কিছু পছন্দ করার ক্ষেত্রে খুব বেশি খুঁতখুঁতে ভাব তাদের থাকে না। অল্পে তুষ্টি তাদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অভিযোগপ্রবণতা নেই বললেই চলে। তারা তুলনামূলক কম জাজমেন্টাল, কোনো বিষয়ে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় না।
আজ ১২ আগস্ট, মেজ সন্তান দিবস। ১৯৮৬ সালে এলিজাবেথ ওয়াকার নামের একজন মার্কিনের উদ্যোগে দিনটির চল হয়। মেজ সন্তানও যেন সমান গুরুত্ব, যত্ন ও ভালোবাসা পায়—এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতেই দিবসটির প্রচলন। আপনার পরিবারে যদি মেজ সন্তান, ভাই বা বোন থাকে, তাহলে আজ তার জন্য বিশেষ কোনো আয়োজন করতে পারেন। আজ থেকেই সচেতন হোন। তাদের প্রতিও সমান ভালোবাসা ও মনোযোগ দিন, যাতে মেজ সন্তান হওয়ার ফলে তার মনে জমে থাকা গোপন দুঃখ দূর হয়ে যায়।
সূত্র: ডেজ অব দ্য ইয়ার