বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা আর ভারতের গুণী পরিচালক সৃজিত মুখার্জি তখন সবে বিয়ে করেছেন। নানা কারণেই তাঁদের বিয়ে আলোচনা–সমালোচনা মিলিয়ে চায়ের কাপে তুলেছিল ঝড়। প্রথমবারের মতো তাঁরা প্রথম আলোতে তাঁদের প্রেম, বিয়ে নিয়ে খোলাসা করতে রাজি হলেন।
উপস্থাপক, আরেক বাংলাদেশি নির্মাতা রেদওয়ান রনি সৃজিতের কাছে জানতে চাইলেন, ‘আপনি যখন শ্বশুরবাড়িতে যান, তখন কী নিয়ে যান? আপনার বাজারের ব্যাগে কী থাকে?’ উত্তরে সৃজিত বলেন, ‘সময়... আমার বাজারের ব্যাগভর্তি সময় থাকে। কেননা, আমি ভীষণ ব্যস্ত থাকি। সময়ই আমার কাছে সবচেয়ে দামি আর গুরুত্বপূর্ণ, যেটা আমি মিথিলা আর তাঁর পরিবারকে দিতে পারি।’
একদমই ঠিক। সময় ঠিক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে সময়ের চেয়ে দামি আসলেই কিছু হয় না। আর এখন সময়টাই এমন, কারোরই যেন সময় নেই। সবাই যেন সময়ের অভাবে ভুগছেন, ছুটছেন। হাপিত্যেশ করছেন। শুধু সময়ের অভাবে কত যে সময়ের কাজ সময়ে করা হয়ে ওঠে না! ফলে শুধু যেন পিছিয়েই পড়তে হয় প্রতিদিন। এভাবেই সময়ের অভাবে আমরা জীবন থেকে ছিটকে পড়তে থাকি। আমরা যত বড় হতে থাকি, দায়িত্ব বাড়তে থাকে, ততই যেন বুঝতে পারি, সময় কত অমূল্য। যখন সময়ের মূল্য আসলেই বুঝতে পারি, তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে। তাই আসুন, জেনে নিই কীভাবে অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় খাত থেকে সময় বাঁচিয়ে সেটা বিনিয়োগ করবেন জরুরি কোনো প্রয়োজনে।
কথায় বলে, ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে।’ অর্থাৎ সকালবেলাটাই বলে দেয় আপনার সারা দিন কেমন যাবে। অর্থাৎ আপনার ছোট ছোট কর্মকাণ্ডই বলে দেয়, লম্বা দৌড়ে আপনি কতটা এগোবেন, টিকে থাকবেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেলেন, কাজে সাহায্যকারী মানুষটি আসেননি। অফিসে যাওয়ার সময় হুট করে ছিঁড়ে গেল জুতার ফিতা। কিংবা যাবার পথে এমন জ্যামে পড়লেন যে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে পৌঁছাতেই পারলেন না ঠিক সময়ে, শুনতে হলো বসের বকা। আপনি ভাবলেন, দিনটাই মাটি। আজ আর কিছুই ঠিকঠাক হবে না। আর এর প্রভাব পড়তে থাকল আপনার পরের সব কাজে। ঠিকমতো কাজ না করায় আপনাকে পরে আবার করতে হল সেই কাজগুলো।
একটু দাঁড়ান, একবার ভাবুন তো এই ঘটনাগুলো কী আপনার নিয়ন্ত্রণে ছিল? আমাদের যা নিয়ন্ত্রণে থাকে না, সেই ঘটনাই যখন আমাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, তখনই আমরা হেরে যেতে শুরু করি সময়ের কাছে। চেষ্টা করুন এই ধরনের সীমাবদ্ধ চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে।
প্রতিদিন নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকি আমরা। অফিসের কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কখনো ১০-১২ ঘণ্টা ধরেও কাজ করে যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে এরকম হতেই পারে। কিন্তু এ যদি হয় আপনার প্রতিদিনের রুটিন, তবে আপনার কাজের পদ্ধতিতে নিয়ে আসুন কিছু পরিবর্তন।
কাজ শুরুর প্রথমেই একটু ভেবে নিন আজকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো কী কী। তারপর ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে নিন কোনটার পর কোনটা করবেন। বেশির ভাগ সময় আমরা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে এত সময় নষ্ট করি যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা শুরুই করা হয় না। এতে অযথাই বাড়তি সময় চলে যায় কাজটি শেষ করতে।
অ্যাসাইনমেন্ট, মিটিং, বিল দেওয়া—এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের ডেডলাইন ক্যালেন্ডারে অ্যাড করে রাখুন। এতে আপনি কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেবেন, কোন কাজের জন্যে হাতে সময় রাখবেন, তা ঠিক করতে পারবেন।
সিরিল নর্থকোট পারকিনসনের একটি মজার সূত্র আছে। তিনি বলেছেন, একটি কাজের জন্যে আমরা যতটুকু সময় বরাদ্দ রাখি, কাজটি করতে ঠিক ততটাই সময় লাগে। এর উদাহরণে শুধু অ্যাসাইনমেন্টের আগের রাতের প্রেশারের কথা চিন্তা করেই দেখুন!
বেশির ভাগ সময় খুশি করতে চাওয়ার প্রবণতা থেকে কাউকে না বলতে পারি না আমরা। কেউ কেউ তো আবার নিজের কাজ রেখে অন্যকে সাহায্য করার জন্যে এগিয়ে যান। কারও অনুরোধ, আহ্বানে সাড়া দেয়ার আগে ভাবুন, এই কাজটি কি আদৌ আপনি করতে চান? এই কাজ করে কি আপনি আনন্দ পাচ্ছেন?—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি না হয়, তবে সেই কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন।