এই ইনজেকশন নিলেই কি মুখের সব বলিরেখা দূর হয়ে যায়? জেনে নিন বোটক্স-বৃত্তান্ত...
বোটক্স হলো ব্যাকটেরিয়ার ‘টক্সিন’। হ্যাঁ। ঠিকই পড়েছেন—টক্সিন, সোজা বাংলায় যাকে বলে ‘বিষ’। ঘাবড়ে যাবেন না! টক্সিনের ঘনত্ব কমিয়ে এমন মাত্রায় এনে একে বাজারজাত করা হয়, যাতে এর কারণে মানবদেহে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে। আবার যে উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটিও সফল হয়। এই বিশেষ বিষ পাওয়া যায় যে ব্যাকটেরিয়া থেকে, তার নাম ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম। ‘বোটক্স’ কিন্তু একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির বাজারজাত করা পণ্য, অর্থাৎ এটি একটি ‘ব্র্যান্ড নেম’। আরও কিছু কোম্পানিও এই পণ্য তৈরি করে এবং ভিন্ন নামে বাজারজাত করে। তবে ‘বোটক্স’ নামটা এতটাই জনপ্রিয় যে ‘বটুলিনাম টক্সিন’ বোঝাতে এই নামই প্রচলিত হয়ে গেছে!
বোটক্স ইনজেকশন দেওয়া হলে নির্দিষ্ট স্নায়ুর কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়। ওই স্নায়ু মুখের যে পেশিকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেটি তখন আর সংকুচিত হতে পারে না। ফলে কুঞ্চনরেখা বা বলিরেখাও দেখা দেয় না।
বোটক্স ইনজেকশন দিলে মুখের সব রেখা মুছে যায় না। সাধারণত কপাল, দুই ভ্রুর মাঝের অংশ এবং চোখের আশপাশের পেশির জন্য এই ইনজেকশন দেওয়া হয়। ইনজেকশন দিলে এসব অংশের পেশির সংকোচনে বাধার সৃষ্টি হবে। কাজেই এরপর আপনি কপাল বা চোখের আশপাশের পেশি ইচ্ছেমতো কোঁচকাতে পারবেন না। ফলে এসব কুঞ্চনরেখা আর প্রকটভাবে চোখেও পড়বে না। তবে অন্যান্য পেশির সংকোচন ঠিকঠাকই থাকবে। তাই আপনার মুখ একেবারে ভাবলেশহীন হয়ে পড়বে, এমনটাও ভাববেন না। তা ছাড়া বয়সের ছাপ হিসেবে আপনার মুখে যেসব বলিরেখা সব সময়ই দেখা যায় (অর্থাৎ যখন আপনি মুখে কোনো অভিব্যক্তিই আনছেন না, তখনো যেসব বলিরেখা দেখা যায়), সেসবও কিন্তু বোটক্স ইনজেকশন দিয়ে দূর করা যায় না।
দক্ষ হাতে যদি ইনজেকশনটি নেওয়া যায়, তাহলে বোটক্স মোটামুটি নিরাপদই বলা যায়। এরপরও অবশ্য অ্যালার্জিজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আর ইনজেকশন দেওয়ার সময় ভুলভ্রান্তি হলে কিন্তু মুখের অন্য কোনো পেশিও অবশ হয়ে যেতে পারে।
বোটক্সের কার্যকারিতা দৃষ্টিগোচর হতে সপ্তাহ দুয়েক সময় লেগে যেতে পারে। তবে এই কার্যকারিতা কেবল মাস তিনেকের জন্য। প্রথমবার ইনজেকশন শুরুর পরপরই, অর্থাৎ প্রথম দিকটায় অবশ্য তিন মাসের চেয়ে বেশি সময়ও কার্যকর থাকে। তাই এর প্রভাব বজায় রাখার জন্য প্রতি তিন-ছয় মাস অন্তর বোটক্স ইনজেকশন নিতে হবে।
চোখের পাতা অস্বাভাবিক লাফানো (ব্লেফারোস্প্যাজম), পেশি অস্বাভাবিকভাবে শক্ত হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, অতিরিক্ত লালা, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার (ওভারঅ্যাকটিভ ব্লাডার) মতো সমস্যায় নির্দিষ্ট কিছু স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করতে বোটক্স ইনজেকশন কাজে লাগানো যায়।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট ও ওয়েবএমডি