রূপচর্চায় এখন দারুণ জনপ্রিয় কোরিয়ান ধারা বা কে-ধারা। এই ধারায় ত্বকের এমন এক বিশেষত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, যাতে ত্বক হয় মসৃণ আর ত্বকে আলোর প্রতিফলন ঘটে কাচের মতোই। এমন ত্বককেই বলা হয় ‘গ্লাস স্কিন’। তবে এসব কিন্তু মেকআপের কারসাজি নয়; বরং ত্বকের যত্ন এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়, যাতে ত্বক ভেতর থেকে আর্দ্র হয়ে ওঠে এবং সতেজ থাকে। গ্লাস স্কিন পেতে হলে ধৈর্য ধরে রোজ যত্ন নেওয়া জরুরি। সপ্তাহে একবার বিশেষ ফেসপ্যাকও লাগাতে হয়।
জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে একেক জনের ত্বক একেক রকম। কোরিয়া বা চীনের মানুষদের জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে তাঁদের ত্বকের ধরন আমাদের চেয়ে আলাদা। আবহাওয়ারও প্রভাব থাকে। পুরোপুরি তাঁদের মতো ‘লুক’ পাওয়া তাই বেশ মুশকিলই বটে। তাঁদের কাছাকাছি ধরনের ত্বক পেতে চাইলে তাঁদের যত্নআত্তির ধারাটা অনুসরণ করতে পারেন। এই নিয়মে যত্ন নিলে ত্বক সতেজ ও মসৃণ হবে। গ্লাস স্কিন পাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে এমনটাই বলছিলেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি। গ্লাস স্কিন পেতে কীভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে, জেনে নিন তাঁর কাছ থেকেই।
অয়েল বেজড ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন মিনিট পাঁচেক ধরে। এরপর পানি না লাগিয়ে ত্বক মুছে নিন। এবার জেল বেজড কিংবা ফোম বেজড ক্লিনজার প্রয়োগ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত পানিটা হাত দিয়ে সরিয়ে দিন। ত্বকে লেগে থাকা বাকি পানিটুকু মুখেই শুকাতে দিন।
ত্বক আর্দ্র রাখবে, এমন টোনার বেছে নিন। তুলার বল বা হাতের আঙুল দিয়ে পাঁচ-সাতবার ত্বক মালিশ করুন বৃত্তাকার গতিতে। একই পদ্ধতিতে সরাসরি গোলাপজল কিংবা শসার রস প্রয়োগ করলেও তা টোনারের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। তবে আর্দ্রতা দেবে, এমন টোনার কিনে নেওয়াই ভালো।
অ্যালোভেরা জেল বা একই ধরনের অন্য কোনো সুদিং জেল কিংবা যেকোনো একটা এসেনশিয়াল অয়েল প্রয়োগ করতে পারেন এই ধাপে। চাইলে অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে সমপরিমাণ গ্লিসারিনও যোগ করে নিতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট পর ভেজা রুমাল দিয়ে ত্বক মুছে নিন কিংবা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, লোশন কিংবা সেরাম লাগিয়ে নিন। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই–সমৃদ্ধ পণ্য বেছে নেওয়া ভালো।
বাইরে গেলে (কিংবা চুলার তাপে, প্রচণ্ড গরমে বা অতিরিক্ত আলোতে কাজ করতে হলে) তার আগে সানস্ক্রিন পণ্য লাগিয়ে নিন। তবে তা ময়েশ্চাইরাইজার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই লাগানো যাবে না। চতুর্থ ধাপের ময়েশ্চারাইজার ত্বকে ভালোভাবে মিশে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর চতুর্থ ধাপে যদি এমন ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করা হয়, যাতে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর আছে, তাহলে পঞ্চম ধাপটি বাদ দিয়ে দিন।
রোজকার এসব ধাপ তো থাকবেই যেকোনো একবেলার জন্য। এর বাইরেও সাপ্তাহিক যত্নের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ভাতের মাড়। প্যাক তৈরির জন্য ভাতের মাড় চুলায় জ্বাল দিয়ে নিন। খুব ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। চাইলে এবার সামান্য মধু যোগ করতে পারেন। এই প্যাক লাগানোর পর শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে মালিশ করে করে সরিয়ে ফেলুন শুকিয়ে যাওয়া প্যাক।
গ্লাস স্কিন পেতে ভাতের মাড়ের প্যাক সবেচেয়ে ভালো। তবে চাইলে এর বদলে অ্যারারুট আর কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিনের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন একই পদ্ধতিতে।
পুরোপুরি কোরিয়ান গ্লাস স্কিন পাওয়া সবার জন্য সম্ভব হবে না জিনগত কারণে। তবে তা না হলেও সে রকমই সুন্দর ও ঝকঝকে ত্বক পেতে পারেন এই সহজ পদ্ধতির চর্চায়। এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, গ্লাস স্কিন পেতে হলে ত্বকের দাগছোপ দূর করতে হবে। কাজেই ত্বকে কোনো দাগ থাকলে তার কারণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।