মায়ায় থাকি, যত্নে রাখি

শীতের এই সময়টায় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের শরীর ও মনের চাই বিশেষ যত্ন।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবেই শুষ্ক হয়ে পড়ে ত্বক। কুঁচকে যায় চামড়া। ত্বকের বিভিন্ন জায়গার রঙেও দেখা দেয় তারতম্য। শুষ্ক ত্বকে চুলকানিটাও বড্ড ভোগায়। বহুমূত্র, কিডনি কিংবা লিভারের সমস্যায় বয়স্ক ব্যক্তিদের চুলকানির অস্বস্তি বাড়তে পারে। ত্বকে দাগছোপ এবং ছোটখাটো গোটা, প্রদাহ কিংবা ক্ষত হতে পারে। শীতের এই সময়টায় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের শরীর ও মনের চাই বিশেষ যত্ন।

ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে দিতে হবে

সুস্থ থাকার উপায় জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল—

১. রোজ চাই রোদ। তবে অতিরিক্ত নয়। দুবাহু এবং দুপায়ের বেশ কিছুটা অংশে মিষ্টি রোদ লাগাতে হবে অন্তত ১৫ মিনিট। পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাবেন। বাইরে গেলে ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট চাই। চাই ভালো মানের ছাতা, নইলে চওড়া প্রান্ত যুক্ত টুপি। এভাবে রোদের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারলে সানস্ক্রিন সামগ্রীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বেঁচে যাবেন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি।

২. প্রয়োজনমাফিক ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে দিতে হবে। তেলও ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করুন। সুষম পুষ্টিও চাই।

৪. বিশ্রাম হতে হবে ঠিকঠাক।

৫. বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারছেন কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

প্রাত্যহিক, সাপ্তাহিক এবং মাসভিত্তিক—এভাবে ভাগ করে নিলে যত্নটা ঠিকঠাক হবে, মনে করেন রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। শীতে তো বটেই, প্রয়োজনে তাঁদের জন্য সারা বছরই গোসল বা হাত–মুখ ধোয়ার জন্য কুসুম গরম পানির ব্যবস্থা করুন। তাঁদের গোসলখানায় গিজার লাগাতে পারেন।

মুখের জন্য ক্রিমভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ভালো

মৃদু প্রসাধনসামগ্রী বেছে নেওয়া ভালো। দুদিন পরপর শ্যাম্পু করা চাই। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। চুল শুকানোর পর সুন্দর করে আঁচড়ে দিন। ফেসওয়াশ দেওয়া যেতে পারে এক দিন অন্তর। ফেসওয়াশের পরিবর্তে ক্রিমভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার দিয়ে মুখের ত্বক মালিশ করে মুছে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। গোসলের পর ত্বক ভেজা থাকতে থাকতেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে দিন। মুখের জন্য ক্রিমভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ভালো। বয়োজ্যেষ্ঠদের শরীরের জন্য লোশনের চাইতে বডি অয়েল অনেক বেশি কার্যকর বলে জানালেন আফরোজা পারভীন।

সপ্তাহে এক দিন কুসুম গরম তেল দিয়ে পুরো শরীর ভালোভাবে মালিশ করিয়ে দিন। প্রাণের স্পন্দন ফিরবে ত্বকে। সপ্তাহে একদিন ফেসপ্যাকও বানিয়ে দিতে পারেন। এমন দুটি ফেসপ্যাক তৈরির উপায়—

১. ১ টেবিল চামচ দুধের সর, ১ টেবিল চামচ টক দই এবং ১ চিমটি হলুদগুঁড়া একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। এটি ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্র করে তুলবে, ত্বকের বিভিন্ন স্থানের রঙে আনবে সামঞ্জস্য।

দুদিন পরপর শ্যাম্পু করা চাই

২. পাতলা কাপড়ে টক দই কিছুক্ষণ ঝুলিয়ে রাখলে পানি ঝরে যাবে, ক্রিমের মতো অংশটা রয়ে যাবে। এই ক্রিম নিন ১ টেবিল চামচ। সঙ্গে নিন অর্ধেকটা অ্যাভোকাডো আর মাঝারি আকারের একটি কলার তিন ভাগের ১ ভাগ অংশ। ব্লেন্ড করলেই তৈরি হয়ে যাবে ফেসপ্যাক।

২০ দিন অন্তর বা প্রতি মাসে একবার পেশাদার ব্যক্তির সাহায্যে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির ম্যানিকিওর, পেডিকিওর (পা মালিশ) করিয়ে নিন। রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক হবে, মনও ভালো থাকবে। আজকাল বাড়িতেই এমন সেবা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ঘরের তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে প্রয়োজনে রুম হিটারের ব্যবস্থা করুন।