মুখের ত্বকের জন্য বানানো প্যাক সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করা যাবে। মডেল: আনিকা, সাজ: হারমনি স্পা, ছবি: কবির হোসেন
মুখের ত্বকের জন্য বানানো প্যাক সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করা যাবে। মডেল: আনিকা, সাজ: হারমনি স্পা, ছবি: কবির হোসেন

ত্বকচর্চা

যেভাবে ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে সৌন্দর্যচর্চা

ত্বকের নানা সমস্যার সমাধান দিতে পারবে রূপচর্চায় ফুলের ব্যবহার

সত্যিই ‘বসন্তে এত ফুল ফোটে’। অসামান্য সৌন্দর্যের এই উৎস হতে পারে রূপচর্চার অনন্য এক উপকরণ। ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে সৌন্দর্যচর্চা, কেবল ফুলের সঙ্গে প্রয়োজনমতো যোগ করতে হবে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদান।

গাঁদা ফুল

সারা বছর ব্যবহারের জন্য গাঁদা ফুল শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখা যায়

গাঁদা ফুলের নানা গুণ। আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে, এই ফুল ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ত্বকের ক্ষত নিরাময় করতে এবং দাগছোপ দূর করতে গাঁদা ফুল কাজে দেবে। ত্বকের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে গাঁদা ফুল। ত্বকে প্রদাহ হওয়ার সমস্যাকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। ১ টেবিল চামচ গাঁদাফুল বাটার সঙ্গে যোগ করুন ১ চা–চামচ দুধ আর আধা চা–চামচ মধু। তৈরি হয়ে গেল ফেসপ্যাক। প্রতি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে ত্বকে আসবে উজ্জ্বল সোনালি আভা। সারা বছর ব্যবহারের জন্য গাঁদা ফুল শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখা যায়।

গোলাপ ফুল

প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের দাগছোপ দূর করার কাজে সহায়তা করে গোলাপ। গোলাপের ব্যবহার হতে পারে নানাভাবে—

• গোলাপ ফুলবাটা নিন ১ টেবিল চামচ, সঙ্গে লাগবে কেবল আধা চা–চামচ মধু। পুরো মুখে এই প্যাক লাগাতে পারেন সপ্তাহে ১ দিন। রোদে পোড়াভাব দূর হবে, ফিরে আসবে ঔজ্জ্বল্য। এই একই প্যাক কিন্তু শরীরের অন্য কোথাও দাগছোপ থাকলে সেখানেও প্রয়োগ করা যায়। এমনকি বগল কিংবা কুঁচকির মতো সংবেদনশীল অংশেও। তবে এসব অংশের দাগ দূর করতে প্রতিদিন প্যাক ব্যবহার করতে হবে।

ত্বকের দাগছোপ দূর করার কাজে সহায়তা করে গোলাপ

• ঠোঁটেও কালচে ভাব দেখা যায় কারও কারও। এমন সমস্যার জন্য বেটে নেওয়া গোলাপ ফুলের সঙ্গে মধু আর গ্লিসারিন যোগ করে নিন। সব কটি উপকরণই আধা চা–চামচ করে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন রোজ, অন্তত ২০ মিনিট। বেশি সময় রাখতে পারলে আরও ভালো, সারা রাত রাখলেও ক্ষতি নেই। প্রতিদিন ব্যবহারে কালচে ঠোঁট হয়ে উঠবে গোলাপি। মিশ্রণ তৈরি করে কাচের বয়ামে পুরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে।

গোলাপের ব্যবহার হতে পারে নানা সমস্যায়

• অনেকেরই ঠোঁট ফেটে চামড়া উঠে আসে। এ ক্ষেত্রেও কাজে দেবে এই মিশ্রণ, কেবল ব্যবহারের আগে মিশ্রণটিতে সামান্য চিনি যোগ করে নিতে হবে, প্রতিদিন। ঠোঁটে আলতোভাবে মালিশ করতে হবে চিনি গলে যাওয়া পর্যন্ত।

• গোলাপের নির্যাসের সঙ্গে সামান্য গ্লিসারিন যোগ করে তৈরি করা যায় সেরাম। কাচের বোতলে পুরে ফ্রিজে রাখলে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে। প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বকের কালচে দাগছোপ দূর হয়, চলে যায় চোখের নিচের কালচে ভাব। ত্বকের বিভিন্ন স্থানে রঙের অসামঞ্জস্য থাকলে সেটিও দূর হয়। ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল।

রজনীগন্ধায় রূপচর্চা

রজনীগন্ধা ছত্রাক-প্রতিরোধী। রজনীগন্ধাবাটা নিন ১ টেবিল চামচ। আধা চা–চামচ দুধ, আধা চা–চামচ মধু আর আধা চা–চামচ বেসন (যেকোনো বেসন) যোগ করুন। এই প্যাক ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয়ে ওঠে।

ডালিয়া, ক্রিসেনথিমাম ও ল্যাভেন্ডার

মুখের ত্বকের সব কটি প্যাক সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করা যাবে

• হলুদ রঙের ডালিয়া বেটে নিন। সামান্য সয়াবিনগুঁড়া যোগ করুন। প্যাকের স্বাভাবিক ঘনত্ব ও পুরুত্ব আনতে যতটা প্রয়োজন, ততটা সয়াবিনগুঁড়া নেওয়াই যথেষ্ট।

• ক্রিসেনথিমাম বেটে নিন ১ টেবিল চামচ। আধা চা–চামচ গুঁড়া দুধ এবং আধা চা–চামচ মধু যোগ করে নিন। এই প্যাক ব্যবহারে ত্বকের নিস্তেজ ভাব দূর হয়, ত্বক হয়ে ওঠে সজীব, প্রাণবন্ত।

ক্রিসেনথিমাম ব্যবহারে ত্বকের নিস্তেজ ভাব দূর হয়

• ল্যাভেন্ডার ফুল এ দেশে খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে এটিও ত্বকের জন্য ভালো। এটি জীবাণু প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং প্রদাহ কমায়। ল্যাভেন্ডার বেটে নিন ১ টেবিল চামচ। সঙ্গে নিন আধা চা–চামচ দুধ ও আধা চা–চামচ মধু। ঘনত্ব আনতে প্রয়োজনমতো সয়াবিনগুঁড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।

মুখের ত্বকের সব কটি প্যাক সপ্তাহে একদিন ব্যবহারের করতে হবে। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

চুলের যত্নে জবা

জবা ফুল ছত্রাক এবং অন্যান্য জীবাণু প্রতিরোধ করে। চুলের গোড়া মজবুত করতেও সহায়তা করে। ছয়টি জবা ফুলের সঙ্গে অ্যালোভেরার নির্যাস নিন আধা কাপ। আধা কাপ টক দই আর একটি ডিম যোগ করুন। সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে মাথায় লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহারে চুল হয়ে উঠবে ঘন ও কালো।

লেখক: আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ

অনুলিখন: রাফিয়া আলম