কারও নখ ভেঙে যায় নামমাত্র আঘাতে, কারও আবার নখ সামান্য বড় হয়ে গেলেই ভাঙে। কেন এমন হয়? জেনে অবাক হতে পারেন, অনেকের নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে বহুল ব্যবহৃত প্রসাধনসামগ্রী কিংবা সাজসজ্জার অনুষঙ্গের কারণে। অথচ অনেকেই এসব ব্যবহার করেন হরহামেশা। আবার কিছু রোগের কারণেও নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে।
সহজেই নখ ভেঙে যাওয়া কিংবা নখের রং বদলে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোকে অবহেলা করতে নেই। নখ তো কেবল সৌন্দর্যের অংশই নয়, এটি আপনার সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য। প্রসাধনসামগ্রী বা সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহৃত কিছু উপকরণে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে, যেগুলোর কারণে নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে এবং স্বাভাবিক গঠনগত অবস্থান থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে। দেহে আয়রনের অভাব হলে কিংবা থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য হলেও এ রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও নখ এমন ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। নখ নিয়ে এমন নানা তথ্য দিলেন ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. সিনথিয়া আলম।
কৃত্রিম নখে থাকে ইথাইল মিথাঅ্যাক্রিলেট নামের এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিক, যা নখের জন্য ক্ষতিকর।
নেইলপলিশেও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর উপকরণ থাকতে পারে। তাই কেনার সময় নেইলপলিশের উপাদানগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো। যেসব নেইলপলিশ সহজে পানিতে ধুয়ে যায়, সেগুলো তুলনামূলক নিরাপদ।
নেইলপলিশ রিমুভারের কারণেও নখ ভঙ্গুর হতে পারে।
ম্যানিকিউর বা পেডিকিউরের সময় বাফার দিয়ে ঘষার কারণে নখ পাতলা হয়ে যেতে থাকে, ফলে সামান্য আঘাতেই নখ ভেঙে যেতে পারে।
সাবান, ডিটারজেন্ট বা স্যানিটাইজার অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করা হলে নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। খুব গরম পানি নখে লাগানো হলেও এমন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া বড়সড় আঘাত লাগলে নখ ভেঙে যেতে পারে।
নখের ভঙ্গুরতা প্রতিরোধ করতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার—
সুষম খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে বহু নারী আয়রনের অভাবে ভোগেন। সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আয়রনের উদ্ভিজ্জ উৎসগুলো (যেমন কচু শাক) গ্রহণ করার সময় এর সঙ্গে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ কোনো ফল খাওয়া উচিত (ফলের আচার নয়)। তাহলে সেই আয়রন ভালোভাবে দেহে শোষিত হবে, অর্থাৎ আপনার দেহে সেই আয়রন কাজে লাগবে ঠিকঠাক।
কৃত্রিম নখ ও নানা ধরনের রাসায়নিকসমৃদ্ধ নেইলপলিশ যে নখের জন্য ভালো নয়, তা তো বুঝতেই পারছেন। ম্যানিকিউর বা পেডিকিউর করানোর সময় বাফারের অংশটুকুও আজ থেকেই বাদ দিয়ে দিন।
নখের সুরক্ষায় রোজ রাতে নখে স্বচ্ছ পেট্রোলিয়াম জেলি বা নারকেল তেল লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন।
সাবান, ডিটারজেন্ট বা স্যানিটাইজারের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কম পানিতে হাত-পা ধোবেন। হাতে-পায়ে গরম পানি ব্যবহারের প্রয়োজন হলে খেয়াল রাখুন, তা যেন কুসুম গরম হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকজাতীয় ওষুধ সেবন করবেন না। কোনো ওষুধ সেবনের পর দেহের যেকোনো অংশে যেকোনো পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
যাঁদের নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে, তাঁদেরও এই সব কটি বিষয় মেনে চলতে হবে। জীবনযাপনে এ ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনার কিছুদিন পরেও যদি নখের সমস্যার উন্নতি না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ দায়ী কি না, তিনি তা খুঁজে বের করবেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু যদি নখ ভঙ্গুর হয়ে ওঠার পাশাপাশি আপনার নখের স্বাভাবিক রংটাই বদলে যায়, তাহলে ঘরোয়া উপায়ে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। কারণ, নখের রং বদলে যাওয়ার এ উপসর্গটি সাধারণত কোনো না কোনো রোগের কারণেই দেখা দেয়।